মুক্তির পর কথা বললেন না মিন্নি
মুক্তির পর কথা বললেন না মিন্নি - ছবি : সংগৃহীত
হাইকোর্ট থেকে জামিনাদেশ পাওয়ার পর বরগুনা কারাগার থেকে ৪৮ দিন পর মুক্তি পেয়েছেন গতকাল মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি করা স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মুক্তির পর কারা ফটকে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি। বিকেল সাড়ে ৪টায় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে সরাসরি শহরের মইঠা এলাকায় বাবার বাসায় নেয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার সময় কারা ফটকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর, ভাই আবদুল মুহিত কাফি, আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম এবং অ্যাডভোকেট মোস্তফা কাদের উপস্থিত ছিলেন। বাবার হাত ধরে কারাগার থেকে বের হন মিন্নি।
এর আগে বেলা ১২টায় হাইকোর্টের দেয়া মিন্নির জামিনাদেশ বরগুনা আদালতে পৌঁছায়। হাইকোর্টের আদেশের কপি এসে পৌঁছার সাথে সাথেই মিন্নির পক্ষে জামিননামা (বেলবন্ড) দাখিল করেন তার আইনজীবী। এরপর সব দাফতরিক কাজ শেষ করে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে জামিনাদেশ নিয়ে কারাগারে যান মিন্নির আইনজীবী। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে এ মামলার ১৪ আসামিকে হাজির করা হয়। পরে আদালতের কার্যক্রম শেষে এ মামলায় গ্রেফতারকৃত ছয় কিশোরকে খুলনার শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে এবং অন্যদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ১৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারলেও এখনো চার আসামি রয়েছে অধরা। এ মামলায় নতুন করে আরো পাঁচজনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে চার্জশিটে। সিসিটিভি ফুটেজ ও আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এ পাঁচজনের নাম চুলিশের তদন্তে বের হয়ে এসেছে। তারা হলো- মো: সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ, মো: রাকিবুল হাসান নিয়ামত, প্রিন্স মোল্লা, মারুফ মল্লিক ও মো: নাইম। অন্য দিকে এজাহারভুক্ত পলাতক চার আসামি হলো- মুসা বন্ড, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান ও রিফাত হাওলাদার।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নিসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। রিফাত হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পাঁচ দিন পর গত রোববার বরগুনা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
হত্যা মামলায় ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামির জন্য পৃথকভাবে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
এ মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলো- মো: রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো: হাসান (১৯), মো: মুসা (২২), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো: সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)। অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলোÑ মো: রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), মো: রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো: আবু আবদুল্লাহ্ ওরফে রায়হান (১৬), মো: ওলিউল্লাহ্ ওরফে অলি (১৬), জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), মো: নাইম (১৭), মো: তানভীর হোসেন (১৭), মো: নাজমুল হাসান (১৪), মো: রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), মো: সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ (১৭), মারুফ মল্লিক (১৭), প্রিন্স মোল্লা (১৫), রাতুল শিকদার জয় (১৬) ও মো: আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬)।
আসামিদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আসামিরা হলো- রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, চন্দন সরকার, রাব্বি আকন, হাসান, অলি, টিকটক হৃদয়, সাগর, কামরুল হাসান সাইমুন, আরিয়ান শ্রাবণ, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, তানভীর, নাজমুল হাসান, রাতুল সিকদার ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে রিফাত শরীফকে। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদি হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।