অবরুদ্ধ কাশ্মির : মুক্তি কোন পথে?
অবরুদ্ধ কাশ্মির : মুক্তি কোন পথে? - ছবি : সংগ্রহ
কাশ্মির জ্বলছে। বাহাত্তর বছর ধরে জ্বলছে। লেলিহান শিখা উঁচিয়ে কখনো দাউ দাউ করে ওঠে আগুন, কখনো জ্বলে ছাইয়ের তলে গনগনিয়ে কিন্তু নেভে না। কারণ নিভতে দেয়া হয় না। দুনিয়ার স্বর্গ বলে খ্যাত অঞ্চলটিতে দেড় কোটি মানুষ ভুগছে নরকযন্ত্রণায়। সবুজ জমিনজুড়ে ছোপ ছোপ রক্ত, বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদের ঝাঁজ। লক্ষাধিক মানুষকে মারা হয়েছে গুলি করে, হাজার হাজার গুম, অসংখ্য নারী-শিশু পাশবিক নিগ্রহের শিকার। যারা মানুষ মারছে, পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি- তারা হয়তো মানুষ চায় না, মাটি চায়।
ভারতবর্ষ ভাগ হয় ১৯৪৭ সালে। কথা ছিল, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলো নিয়ে গঠিত হবে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান। কাশ্মির শত শত বছর ধরেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৯৪১ সালে শেষ আদমশুমারি অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মিরে মুসলিম ছিল ৭৫.৯৭ শতাংশ। আর সবচেয়ে জনবহুল কাশ্মির উপত্যকায় এ হার ৯৫ শতাংশ। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই জম্মু-কাশ্মির পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার, নইলে স্বাধীন হওয়ার কথা। কিন্তু চক্রান্ত তা হতে দেয়নি। উপজাতীয় বিদ্রোহীদের হামলার মুখে কাশ্মিরের রাজা হরি সিং পালিয়ে গিয়ে বিদায়ী লর্ড মাউন্টব্যাটেন ও প্রধানমন্ত্রী নেহরুর কাছে সৈন্য পাঠানোর অনুরোধ করেন। তারা রাজা হরি সিংকে বললেন, কাশ্মিরকে ভারতের অংশ বলে মেনে নিলে সৈন্য পাঠানো হবে। হরি সিং কাশ্মিরবাসীর ইচ্ছার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গিয়ে ওই শর্তে দস্তখত করে বসেন। ‘দস্তখত’ না বলে একে ‘দাসখত’ বলাই ভালো। এ ছুতো ভারতকে যুক্তি জোগায় কাশ্মির দখলে। চুক্তি সইয়ের পর কাশ্মিরে প্রবেশ করে ভারতীয় সৈন্য। উল্টো দিক থেকে ঢোকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অনিবার্য হয়ে ওঠে যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর জাতিসঙ্ঘে প্রস্তাব পাস হয়- দুই দেশের সৈন্যরাই ফিরে যাবে এবং গণভোট হবে কাশ্মিরে এবং গণরায় যেদিকে যাবে সে দেশের সাথেই যুক্ত হবে কাশ্মির। কিন্তু ‘গণতান্ত্রিক’ ভারত গণভোটের বাস্তবায়নে আগ্রহী হয়নি। কারণ, সে জানে কাশ্মিরের মুসলিমরা কিছুতেই তাদের অধীন হয়ে থাকতে চাইবে না। এভাবেই গণতান্ত্রিক মীমাংসার পথ বন্ধ করে জিইয়ে রাখা হয়েছে অশান্তির আগুন। প্রতিবেশী দু’টি দেশ যুদ্ধে জড়িয়েছে। সম্প্রতি ভারত কেড়ে নিয়েছে রাজ্যটির স্বায়ত্তশাসনের সাংবিধানিক অধিকার। খুলে দিয়েছে অবাধ অনুপ্রবেশের দুয়ার। চূড়ান্ত হয়েছে সংখ্যাগুরু মুসলিমদের সংখ্যালঘুতে পর্যবসিত করার নীলনকশা।
বর্তমানে জম্মু-কাশ্মিরের ৫৫ শতাংশ ভারতের, ৩০ শতাংশ পাকিস্তানের এবং ১৫ শতাংশ চীনের নিয়ন্ত্রণে। ভারতের দখলে কাশ্মির উপত্যকা, জম্মু, লাদাখ ও সিয়াচেন হিমবাহÑ লোকবসতি ৭০ শতাংশ। পাকিস্তানের অধীনে আজাদ কাশ্মির ও গিলগিট-বালটিস্তান ৩০ শতাংশ জন-অধ্যুষিত। চীনের দখলে জনশূন্য শাক্সগাম উপত্যকা ও আকসাই চিন। গুলি-আগুন-হত্যা-ধ্বংস-বিদ্রোহ-নিপীড়ন সব কিছু ভারতের দখলে রাখা অংশে। কারণ জবরদখল। জম্মুর কিছু মুসলিম ছাড়া গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী ভারতের অধীনতাকে কেউ চায় না। তার অন্যায় দখলদারিত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা বিক্ষুব্ধ। এখন জনগণের ক্ষোভ প্রকাশের পথও সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। গোটা কাশ্মিরকেই বানিয়ে রেখেছে কারাগার, বরং তার চেয়েও খারাপ। মোবাইল ফোন, ল্যান্ড ফোন, ইন্টারনেট বন্ধ। হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল প্রায়ই বন্ধ। ঘর থেকে বেরোতে পারে না মানুষ। খাবার ফুরিয়ে গেছে, চিকিৎসার অভাবে প্রসূতি মায়েরা ছটফট করছেন। রাস্তায় রাস্তায় সেনা টহল, একটু পরপর ব্যারিকেড। বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবরুদ্ধ কাশ্মির আতঙ্কে কাঁপছে। খবরও তেমন জানা যাচ্ছে না। অনুমান, সামরিক-আধা সামরিক সাত লাখ সশস্ত্র ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন রয়েছে সেখানে। কাশ্মিরই বিশ্বের সর্বাধিক সামরিকায়িত অঞ্চল। অর্থাৎ, ভূমি ও জনসংখ্যার তুলনায় কোথাও এত বিপুল সৈন্যসমাবেশ নজিরবিহীন। বিবিসির প্রতিনিধি শুভজ্যোতি ঘোষ শ্রীনগর পৌঁছার পরদিন সামান্য সময়ের জন্য যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন বাইরের সাথে। বলেছেন- ‘শ্রীনগরে পা রাখার পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন মৃত্যু-উপত্যকায় এসে পৌঁছেছি। রাস্তায় রাস্তায় ১০০ গজ পরপরই সেনা চৌকি আর কাঁটাতারের ব্যারিকেড। রাস্তায় যত না সাধারণ মানুষ, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সেনা আর আধা সেনা।’ কী চায় আরএসএস-শিবসেনার পৃষ্ঠপোষক উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি? গুজরাটে মুসলিম নিধনে নেতৃত্ব দেয়া মোদিরা কি কাশ্মিরে কোনো অঘটনের পথ পরিষ্কার করছেন?
কাশ্মির কখনোই ঠিক ‘ভারতীয়’ ছিল না। ভূপ্রকৃতি, ঐতিহ্য, জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যে অঞ্চলটি একেবারেই আলাদা। শত শত বছর ধরে স্বাধীন রাজাদের দ্বারা শাসিত কাশ্মির ভারত ভাগের সময় চেয়েছিল স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত নিতে, কিন্তু পারেনি। তারপর দুই দেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়ালো, কাশ্মিরের ভাগ্যের ফয়সালা তবু হলো না। কাশ্মির ভারতীয় হতে চায় না, যেমন কখনো চায় না পাকিস্তানি হতেও। আবহমানকালের স্বাধীন রাজ্য কাশ্মির চায় স্বাধীন রাষ্ট্র হতে। কিন্তু তা কি সম্ভব? প্রতিবেশী চীন না হয় চুপ থাকল, পাকিস্তান হয়তো মেনে নিলো। কিন্তু ভারত কি সে স্বপ্ন সত্যি হতে দেবে? কাশ্মির প্রতিরক্ষা ও অর্থনীতির দিক থেকে ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সমান গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানের জন্যও। চীনেরও রয়েছে লুব্ধ দৃষ্টি। এভাবে কাশ্মিরকে তিন দিক থেকে টানছে তিনটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। এ টানাটানি টেনে নিতে পারে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের দিকে।
মধ্য এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্যবহরের যাত্রাপথ কাশ্মির। কাশ্মিরের সীমান্ত পাঞ্জাবসহ পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশগুলোতে ঢোকার পথ। এ ছাড়াও জম্মু-কাশ্মির সীমান্ত উত্তর দিকে মধ্য-এশীয় প্রজাতন্ত্র, পূর্বে চীন এবং পশ্চিমে আফগানিস্তানের সাথে যুক্ত। অঞ্চলটি চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নিকটবর্তী তাজিকিস্তানের মতো অনেক আঞ্চলিক শক্তির দিকে ভারতের জানালা খুলে দিয়েছে। ফলে বাণিজ্য, ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে জম্মু-কাশ্মির ভারতের কাছে তার অন্য যেকোনো রাজ্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কাশ্মিরে রয়েছে প্রকাণ্ড সব হিমবাহ। হিমালয় থেকে নেমে আসা ঝিলম, চেনাব, সাটলেজ, রাঙি, বিয়াস, সিন্ধু প্রভৃতি নদনদী ভারতের এক বিলিয়ন মানুষকে পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। পাকিস্তানের কৃষিও প্রধানত এই অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানির ওপর নির্ভরশীল। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অনুপাতে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারত আরো জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এ অঞ্চলের দিকে নজর দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান আশঙ্কা করছে, ভারত সেচের পানি সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এভাবে কাশ্মির এ বিবদমান দুটো দেশের জন্যই বড় নাজুক জায়গা, যাতে একের একক আধিপত্য অন্যের অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু পানিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এর ফলে ভারত সে অঞ্চলের পূর্বপ্রান্তের বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রু নদীর ওপর এবং পাকিস্তান পশ্চিম দিকের সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলমের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। ভারত এ চুক্তি মেনে না চললেও (এর নজির একের পর এক নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ)- একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে ভুল করে না। দুই দেশের মধ্যে কোনো কিছু নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলেই দিল্লি পানি আটকে রাখার হুমকি দেয়। সম্প্রতি উরি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, রক্ত আর পানি একসাথে বইতে পারে না। অন্য দিকে পাকিস্তান মনে করে, ভারত কর্তৃক সিন্ধু পানিচুক্তি প্রত্যাহার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। দ্বিপক্ষীয় এই উত্তেজনায় তৃতীয় পক্ষ হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে আছে খোদ প্রকৃতি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এসব নদীনালার উৎস কাশ্মিরের হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে দ্রুত। ১৭৪ গিগাটন পানি ঝরিয়েছে হিমালয়ান হিমবাহ (১০০ কোটি টনে এক গিগাটন), এ বর্ধমান গলনহার ভারত-পাকিস্তানে মারাত্মক বন্যার কারণ। পানির বর্তমান প্লাবন অর্থনীতির অনিবার্য খরার পূর্বাভাস। বৈশ্বিক ক্রম-উষ্ণায়ন এক সময় ভারতকে ঠেলে দেবে দীর্ঘকালীন বিদ্যুৎ-ঘাটতিতে, আর পাকিস্তানকে মুখোমুখি করবে অনিবার্য কৃষি বিপর্যয়ের। তৃতীয় পক্ষের আক্রমণের আগেই বিপুল পানির উৎস, ভারতের জন্য দুনিয়ায় বেরোবার সদর দরজা এবং পর্যটনের অমিত সম্ভাবনার কাশ্মিরের দখল নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চতুর্থ যুদ্ধের সম্ভাবনা খুব একটা দূরে বলে মনে হয় না।
‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ’ (আরএসএস) হলো ভারতের হিন্দু সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন। এর লক্ষ্য সমগ্র ভারতে একচ্ছত্র ‘রামরাজত্ব’ প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্য অর্জনে সংখ্যালঘু বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিশেষ করে মুসলিমদের হত্যা ও উচ্ছেদ করা আরএসএসের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন গান্ধীজী। স্বাধীনতার চার মাসের মাথায় আরএসএস সদস্য নাথুরাম গডসে তাকে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার কারণ সে আদালতে জবানবন্দীতে বলে গেছে। তার ভাষায়, ‘মুসলিমরা এক হাজার বছর ভারত শাসনের নামে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করে গেছে। অখণ্ড ভারত স্বাধীন হলে এসব অত্যাচারের শোধ নেয়া যেত। কিন্তু গান্ধী মুসলিমদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের সুযোগ দিয়ে ভারতকে খণ্ডিত করেছেন।’ এমনই কট্টর সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শের জন্য ইংরেজ আমলে আরএসএস নিষিদ্ধ ছিল। পরে গান্ধী হত্যা ও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরও একে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। আরএসএসের দৃষ্টিতে নাথুরাম ‘বিরাট বীর’। মধ্যপ্রদেশে মহাত্মা গান্ধীর এই স্বীকৃত খুনির নামে এখন মন্দির নির্মিত হচ্ছে। উপমহাদেশের রাজনীতির জন্য ভয়ানক উদ্বেগের খবর হলো, বর্তমান ভারত সরকারের প্রধান তিন কর্তাই আরএসএসের সদস্য ছিলেন। এরা হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনজনেরই চোখ এখন কাশ্মিরে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যে তারা শুরুতেই করেছে নৈরাজ্য, অর্থাৎ কেন্দ্রশাসিত। জম্মু-কাশ্মির এখন আর রাজ্য নয়। অর্থাৎ ভারতে মুসলিমপ্রধান কোনো রাজ্য রইল না। রইল যে মুসলিম জনগণ, ধারা ৩৭০ বাতিল করার পর তারা সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এখন অন্যরা গিয়ে তাদের বাড়ি ও জমি দখল করবে, যা খুশি তা-ই করতে পারবে।
বিজেপি তথা আরএসএস নেতাদের লক্ষ্য পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মির দখল করা। অমিত শাহ সম্প্রতি সংসদে বলেছেন, পাক-অধিকৃত আজাদ কাশ্মিরের জন্য তিনি প্রাণ দিয়ে দেবেন। রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তানের সাথে কোনো আলোচনা যদি হতে হয়, তা হবে আজাদ কাশ্মির নিয়ে। জম্মু-কাশ্মির নিয়ে তাদের সাথে আমাদের কিসের কথা? অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় জলশক্তিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, ভারতীয় নদনদীর পানি পাকিস্তানে যাওয়া বন্ধ করতে তিনি কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি থেকেও ভারতের সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কাশ্মিরে স্থানীয় নেতাদের বন্দী, জরুরি অবস্থা জারি ও সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করার পর ভারত সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের এসব মন্তব্য কি আরেকটি আগ্রাসী যুদ্ধের সুস্পষ্ট পূর্বাভাস বহন করে না? এ অবস্থায় কাশ্মিরের মজলুম মানুষের ভাগ্যে আরো খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে হয়। মুক্তি ও স্বাধীনতা তাদের সাধ্য ও সামর্থ্যরে বাইরে। দুনিয়ার মুসলিম দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার মতো পরাশক্তিগুলো যদি জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় কাশ্মিরের স্বাধীনতার দাবি মেনে নিতে ভারতকে বাধ্য করে, তাহলেই শুধু মুক্ত ও স্বাধীন হতে পারে কাশ্মির। দীর্ঘকাল ধরে চলা এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
a-haque@live.com