মিন্নির জামিনে ফেঁসে যাচ্ছেন এসপি মারুফ!

নিজস্ব প্রতিবেদক | Aug 30, 2019 07:42 am
মিন্নির জামিনে ফেঁসে যাচ্ছেন এসপি মারুফ!

মিন্নির জামিনে ফেঁসে যাচ্ছেন এসপি মারুফ! - ছবি : সংগৃহীত

 

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। জামিনের শর্ত হিসেবে আদালত বলেছেন, জামিনে থাকা অবস্থায় মিন্নি তার বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং মিডিয়ার সাথে কথা বলতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় ঘটলে জামিন বাতিল হবে। 

আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।

রায়ে আদালত বলেন, এজাহারে আসামির নাম উল্লেখ না থাকা, গ্রেফতারের আগে দীর্ঘ সময় মিন্নিকে পুলিশ লাইন্সে আটক রাখা এবং গ্রেফতারের প্রক্রিয়া, আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময় আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করার আগেই আসামির দোষ স্বীকার সম্পর্কিত জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য, তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে; সুতরাং আসামি তদন্ত প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ না থাকায় সর্বোপরি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮, ৯৭ ধারার ব্যতিক্রম, অর্থাৎ আসামি একজন নারী এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আদালত তাকে জামিন দেয়া ন্যায়সঙ্গত মনে করছে এবং জারি করা রুলটি আমরা (আদালত) যথাযথ ঘোষণা করলাম।


হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ : রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু জানানো যাবে, সে বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পর্যবেক্ষণে আদালত আরো বলেন, আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি রিমান্ডে থাকাকালে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন গণমাধ্যমে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু অযাচিত, অনাকাক্সিক্ষতই নয়, ন্যায়নীতি ও সুষ্ঠু তদন্তের পরিপন্থী। পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যাই হোক না কেন, কোনো পুলিশ সুপার দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন ধরনের বক্তব্য দিলে, তা জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়। সেই সাথে তিনি তার দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি, যা দুঃখজনক ও হতাশাজনক। উচ্চপর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশিত ও কাম্য নয়। দায়িত্ব পালনে এর পর থেকে তিনি সতর্কতা ও পেশাদার মনোভাবের পরিচয় দেবেনÑ এটিই আদালতের অনুরোধ। মামলার কাজ এখনো চলমান। সে কারণে এ বিষয়ে এই মুহূর্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছে না। তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত আরো বলেন, আজকাল দেখা যাচ্ছে যে, কোনো আলোচিত ঘটনার তদন্ত চলমান থাকলেও পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি, অভিযুক্ত বিষয় বা তদন্ত সম্পর্কে প্রেস বিফ্রিং করছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি, সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। অনেক কর্মকর্তাকে অতি উৎসাহ নিয়ে তদন্ত চলছে এমন বিষয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এসব বিষয় অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। এ বিষয়ে আদালতের একটি রায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

আদালত বলেন, এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না তিনি অপরাধী বা অপরাধ করেছেন। তদন্ত বা বিচার পর্যায়ে গণমাধ্যমে এমনভাবে বক্তব্য দেয়া যাবে না যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী।
এ দিকে মেয়ের জামিন হওয়ায় আদালতে উপস্থিত মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, চক্রান্তেরও অবসান হবে। রায়ের পর মিন্নির আইনজীবী জেডআই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, মিন্নির জামিন মঞ্জুর হয়েছে। তবে তার প্রতি একটি নির্দেশনা আছে।
অন্য দিকে রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পি বলেন, এ রায়ে আমরা মর্মাহত। রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল করবে। তিনি বলেন, জামিনে আদালত শর্ত দিয়েছেন। সে (মিন্নি) জামিনের অপব্যবহার করলে নি¤œ আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবে।
আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তার সাথে ছিলেন আইনজীবী মশিউর রহমান ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। গত ২০ আগস্ট হাইকোর্ট রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না, মর্মে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূ জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন বলে পুলিশ জানায়। তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো: মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মিন্নি হত্যাকারীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সাথে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সাথে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। পরে মিন্নি জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে।

বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়েরা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। গত ৮ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো: জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের অবকাশকালীন হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে আংশিক শুনানির পর জামিন পাওয়ার আশা না দেখে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না আবেদন ফিরিয়ে নেন এবং পরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন।

এ বিষয়ে আংশিক শুনানি শেষে আদালত গত ২০ আগস্ট রুল জারি করেন। মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা সাত দিনের মধ্যে জানাতে সরকার সংশ্লিষ্টদেরকে বলা হয়। পাশাপাশি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: হুমায়ুন কবিরকে যাবতীয় নথিপত্রসহ ২৮ আগস্ট শুনানির দিন আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। সরকার সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে জবাব পাওয়ার পর গত বুধবার রুল শুনানি শেষে গতকাল রায় প্রদান করেন হাইকোর্ট।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us