আফগানিস্তানে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে যুক্তরাষ্ট্র
আফগানিস্তানে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে যুক্তরাষ্ট্র - ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে আফগানিস্তান যুদ্ধে হারছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা প্রায় ১৪ হাজার সৈন্য নিয়ে হারছি। কিন্তু ২০১০ এক লাখ সৈন্য নিয়েও ধীরে ধীরে হারছিলাম।
কৌশল বা সৈন্যের সংখ্যার জন্য আমরা হারছিলাম না। বরং আমাদের হারার কারণ ছিল যুদ্ধের বাস্তবভিত্তিক কৌশল নির্ধারণ করার ব্যাপারে বিপর্যয়কর ব্যর্থতার কারণে। বিশৃঙ্খল তবে মূলত সফল সন্ত্রাসবিরোধী প্রয়াসের পর আমরা এমনভাবে আমাদের উদ্দেশ্য সম্প্রসারণ করেছি যে তা ব্যর্থ হওয়াই ছিল অবধারিত। আমরা আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী লক্ষ্যগুলো আরো সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে আমাদের মূল উচ্চাভিলাষ নিশ্চিত করাই কঠিন করে ফেলেছি।
মার্কিন নিরাপত্তার শর্তাবলী ও জাতীয় স্বার্থে আফগানিস্তানে একটি অব্যাহত, বিশাল আকারের সামরিক উপস্থিতি মানুষ, কৌশলগত ও আর্থিক মূল্যকে যৌক্তিক করা যায় না। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ঝুঁকি ও কঠিন আপস গ্রহণ করতে অনেক সময় লেগেছে।
আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধ এখন তৃতীয় প্রজন্মে পড়েছে। আর আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধ পড়েছে দ্বিতীয় প্রজন্মে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান অন্তত যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান যুদ্ধ নিরসনে একটি কাঠামোতে সম্মত হওয়ার কাছাকাছি এসে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। চুক্তির মূল উপাদানগুলো দুই পক্ষের মূল লক্ষ্য প্রতিফলিত করছে : তালেবান পাচ্ছে প্রত্যাহারের মার্কিন প্রতিশ্রুতি, আর যুক্তরাষ্ট্র পাচ্ছে তাদের ভূখণ্ডে তারা কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপকে থাকতে দেবে না।
সমালোচকেরা বলছেন যে আফগানিস্তানের ভবিষ্যত প্রশ্নে আফগান সরকার যতক্ষণ না তালেবানের সাথে সমঝোতায় পৌঁছাবে ততক্ষণ পর্যন্ত এসব ইস্যু স্থগিত রাখা উচিত। এই যুক্তি বেশ আকর্ষণীয়। কিন্তু এটা চেষ্টা করা হয়েছিল এবং প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছে। ওবামা প্রশাসন এই কাঙ্ক্ষিত অবস্থান মেনে নিতে অস্বীকার করে তার কূটনৈতিক দক্ষতাকে খর্ব করেছে।
মূল নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর সমাধানের ব্যাপারে প্রাথমিক সমঝোতার মানে এই নয় যে সব মার্কিন স্বার্থ সুরক্ষিত হয়ে গেছে বা সব মার্কিন সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে। ওয়াশিংটনের প্রয়োজন এমন একটি সমঝোতা, যা সবচেয়ে খারাপ গৃহযুদ্ধটির অবসান ঘটাবে, পক্ষগুলোর মধ্যকার সত্যিকারের ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটায় এমন এক ধরনের স্থিতিশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক বিকেন্দ্রিকরণের কাঠামো গঠন করার চেষ্টা করা।
এটা গৌরবময় নাও হতে পারে, এমনকি যুদ্ধের সন্তোসজনক অবসানও নাও ঘটাতে পারে। আফগানদের অনেকে (এবং আমাদেরও অনেকে) যথাযথভাবেই আপসে হতাশ। কিন্তু এটাই সর্বোত্তম সমাধান।
যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এখনো এ ধরনের চুক্তিতে উৎসাহিত করার মতো হাতিয়ার আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সৈন্য প্রত্যাহারের একটি সমঝোতা আসলে প্রত্যাহার নয়। তালেবান নেতাদের নিশ্চিতভাবেই আফগানিস্তান থেকে সৈন্য হ্রাস করার মার্কিন পরিকল্পনার কথা মনে আছে। তারা লক্ষ্য করেছে যে বিভিন্ন সঙ্ঘাতে সৈন্য সংখ্যার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্পষ্টভাবেই বলা যায়, তালেবানের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি সৃষ্টিকারী স্পেশাল অপারেশন্স ফোর্সেস ও টার্গেটিং টিমই পরিকল্পিত প্রত্যাহারে সবচেয়ে শেষে যাবে।
আফগান রাজনৈতিক নেতারা আরো বোঝেন যে কাবুলের যেকোনো সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল থাকবে। কোনো আধুনিক আফগান সরকারই কখনো কেবল তার সম্পদ দিয়ে শান্তি বজায় রাখতে পারেনি। ফলে মার্কিন নেতৃত্বের সহায়তা ছাড়া আফগানিস্তানের কোনো সরকারের টিকে থাকাই কঠিন ব্যাপার।
ফলে ওসলোতে আন্তঃআফগান আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকারের সুবিধাজনক অবস্থান থাকবে। তবে মার্কিন প্রভাবই যথেষ্ট নয়। তালেবানের মোকাবিরায় কাবুলের প্রয়োজন আরো বড় ঐক্য প্রদর্শন করা।
আমি বিশ্বাস করি, আমাদের অংশীদারেরা তা করতে সক্ষম। আর তারা তা করতে না পারলে তাদের সমস্যা মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়।
আলোচনা ব্যর্থও হতে পারে। গত ৪০ বছর ধরে আফগানিস্তানের যুদ্ধ বন্ধ করতে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়েছে। এবারো যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তার কাছে থাকা সব সুবিধা বুদ্ধিমানের মতো ব্যবহার করতে পারবে না। তালেবান হয়তো তার সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান ত্যাগ করবে না বা করতে চাইবে না বা যৌক্তিক রাজনৈতিক এজেন্ডা গ্রহণ করতে পারবে না। অন্যান্য আফগান গ্রুপগুলো হয়তো খুব বেশি মাত্রায় বিভক্ত হবে বা কার্যকরভাবে তালেবানের সাথে আলোচনায় বসতে পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানাবে। দায়েশের মতো নতুন নতুন হুমকি হয়তো আরো সফল হবে। আফগানিস্তানের প্রতিবেশীরা হয়তো সঙ্ঘাত অব্যাহত রাখাকেই অগ্রাধিকার দেবে।
কিন্তু শান্তিপ্রক্রিয়ার ব্যর্থতা স্থিতিবস্থায় ফিরে আসাকে যৌক্তিক করে না। আমাদের প্রয়োজন সীমিত পরিসরে হলেও প্রকৃত জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থগুলো সমাধান করা, স্বল্প প্রতিশ্রুতিতেও আফগান অংশীদারদের সমর্থন দিয়ে যাওয়া।
শান্তিপ্রক্রিয়া বা শান্তিচুক্তির বিস্তারিত বিষয়াদিতে আপত্তি থাকা অবশ্যই সম্ভভ। কিন্তু এখানে রয়েছে কঠোর বাস্তবতা : আফগানিস্তানে মার্কিন চাপ সৃষ্টি আসলে সম্পদের অপচয়। ওয়াশিংটন ৫ বছর আগেই আরো ভালো চুক্তি করতে পারত, এর ৫ বছর আগে এর চেয়েও ভালো সমঝোতায় আসতে পারত, আর ২০০১ বা ২০০২ সালে অকল্পনীয় ভালো চুক্তি করতে পারত। আমরা এখন সম্ভাব্য যে ভালো চুক্তি পাচ্ছি, তা গ্রহণ করতে বা মেনে নিতে অস্বীকার করি, তবে আগামীকাল সেরা যে চুক্তি পাওয়া যাবে, তা হবে আরো খারাপ।
ওয়াশিংটন পোস্ট/সাউথ এশিয়ান মনিটর