কেন আটকে গেল মিন্নির জামিন?
কেন আটকে গেল মিন্নির জামিন? - ছবি : সংগ্রহ
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না এ মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী সাত দিনের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
একই সাথে আগামী ২৮ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: হুমায়ুন কবিরকে যাবতীয় নথিপত্রসহ আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া মিন্নির রিমান্ড শেষে আদালতে জবানবন্দী দেয়ার আগের দিনই বরগুনার পুলিশ সুপার মো: মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে রিফাতের স্ত্রীর দোষ স্বীকারের তথ্য দেন। এ বিষয়ে আদালত লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন পুলিশ সুপারের কাছে। একই দিন অর্থাৎ আগামী ২৮ আগস্ট তা হাইকোর্টে দাখিল করতে হবে।
মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর শুনানিতে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এই রুলসহ এ আদেশ দেন।
মিন্নির পক্ষে গতকাল আদালতে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও এম আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো: সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী।
এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে আদালতকে বলেন, আমরা আর কিছু চাইছি না, মেয়েটার জন্য শুধুমাত্র জামিন চাচ্ছি। সে পালাতে পারবে না। সে তার বাবার হাওলায় থাকবে। তা ছাড়া এ মামলায় গ্রেফতার ১৫ জনের মধ্যে চারজন জবানবন্দী দিয়েছে। সুতরাং তদন্ত প্রভাবিত করারও সুযোগ নাই। এ কারণে তার জামিন চাইছি।
এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী শুনানিতে বলেন, গ্রেফতার ১৫ জনের মধ্যে চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। চারজনের জবানবন্দীতেই এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। সে এই হত্যাকাণ্ডের মূল নকশাকারী এবং ষড়যন্ত্রকারী। এটা খুবই আলোচিত মামলা। পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে মামলার তদারক করা হচ্ছে। এ মামলায় তাকে জামিন দেয়া যায় না।
প্রসঙ্গত গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার ঝড় ওঠে। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় বলে পুলিশ জানায়। পরে সে জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন করে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে। মিন্নির বাবার অভিযোগ, নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।