ডেঙ্গু জ্বর সহজে চেনার উপায়

শাহেদ মতিউর রহমান | Aug 09, 2019 10:00 am
ডেঙ্গু জ্বর সহজে চেনার উ

ডেঙ্গু জ্বর সহজে চেনার উ - ছবি : সংগৃহীত

 

চিকিৎসকের পরামর্শ আর কিছু নিয়মনীতি মেনে চললে ডেঙ্গু রোগ দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টারের (এনআইসি) পরিচালক প্রফেসর ডা: মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ডেঙ্গু হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি সেলফ্লিমেটিক ডিজিস। যদিও এই মুহূর্তে অন্যান্য বছরে তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি তারপরেও ডেঙ্গু হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং ডেঙ্গু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকই রোগীকে পরামর্শ দেবেন কিভাবে কী করতে হবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহেদ মতিউর রহমান। সাক্ষাৎকার নিম্নরূপ :


নয়া দিগন্ত : ডেঙ্গু আতঙ্ক এখন দেশজুড়ে। জ্বর হলেই কি ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে হবে?
প্রফেসর মীরজাদী : না, জ্বর হলেই ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে হবে না। ডেঙ্গু জ্বরের কিছু উপসর্গ আছে, সেই উপসর্গ দেখে তবেই চিকিৎসক পরীক্ষা করার কথা বলবেন। এখন যাদের জ্বর হচ্ছে, সব জ¦র কিন্তু ডেঙ্গু নয়। অনেকের সিজনাল জ¦রও হচ্ছে। তাই জ¦র হলেই আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।


নয়া দিগন্ত : ডেঙ্গু রোগী সহজে চেনার কোনো উপায় আছে?
প্রফেসর মীরজাদী : প্রথমত আমরা জ¦রকেই ডেঙ্গু চেনার প্রথম লক্ষণ মনে করি। এ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগীর উচ্চমাত্রার জ্বর হবে। আসলে ডেঙ্গু তিন ধরনের। এগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু। এতে উচ্চ মাত্রার জ¦র হবে। জ¦র একশ তিন, চার বা পাঁচ পর্যন্ত উঠে যাবে। শরীরে ব্যথা থাকবে, ঘাড়ে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হবে। এ ছাড়া শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হবে। এইসব উপসর্গ থেকেই আমরা মূলত ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু চিনতে পারি।

নয়া দিগন্ত : আগের ডেঙ্গু থেকে এবারের ডেঙ্গুর পার্থক্য কী কী?
প্রফেসর মীরজাদী : ডেঙ্গুর উপসর্গ আসলে একই থাকে। তবে সিজনাল জ¦র যেটাকে আমরা ইনফ্লুয়েঞ্জা বলি এবং ডেঙ্গুর মধ্যে পার্থক্য আছে। সাধারণ জ¦র বা ভাইরাসজনিত জ¦রের সাথে সর্দি, ঠাণ্ডা বা কাশি থাকে। আর ডেঙ্গু জ¦রের সাথে এগুলো থাকে না। তবে ডেঙ্গু জ¦রের সাথে শরীর ব্যথা বা চোখের পেছনে ব্যথা থাকে, যা আমি আগেই বলেছি। ডেঙ্গুর সাথে যদি সিজনাল জ¦র হয় তাহলে হয়তো এই উপসর্গগুলোও দেখা দেবে। অন্যথায় ডেঙ্গুর সাথে সর্দি হাঁচি কাশি বা ঠাণ্ডা থাকবে না। তাই এই উপসর্গগুলোও দুই ধরনের জ¦রকে আলাদা করার একটি উপায়। ডেঙ্গু জ¦রকে অনেকে ব্রেকবোন ফিভার বা হাড় ভাঙ্গা জ¦রও বলেন। এর কারণ ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীর বিশেষ করে হাড়ে অনেক ব্যথা হয়। এটাও ডেঙ্গু রোগী চেনার উপায়।

 নয়া দিগন্ত : ডেঙ্গুর প্রাথমিক চিকিৎসা কী? 

প্রফেসর মীরজাদী : প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। অন্যান্য খাবারের সাথে পানীয় খাবারও খেতে হবে বেশি পরিমাণে। এ ক্ষেত্রে পানি কিংবা খাবার স্যালাইন খেতে হবে। আর বাসায় থেকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

নয়া দিগন্ত : হাসপাতালে কত দিন চিকিৎসা দেয়া হয় বা নিতে হয়?
প্রফেসর মীরজাদী : এটা আসলে নির্ভর করে রোগীর কন্ডিশনের ওপর। সব রোগীর কন্ডিশন তো আর এক রকম থাকে না। তাই রোগীর শারীরিক কন্ডিশন বা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে তাকে কতদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে। যেমন সাধারণ যে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনই নেই। তবে যারা হাইরিস্ক বা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে যেমন শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি কিংবা এমন কোনো রোগী যারা আগে থেকেই অন্য কোনো জটিল রোগে ভুগছেন তখন তাকে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকই রোগীর কন্ডিশন বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন আসলে এই রোগীর আদৌ হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন আছে কি না? আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেও ডাক্তার দেখবেন তার অবস্থা কতটা উন্নতি হচ্ছে বা হচ্ছে না। এসবের ওপরেই নির্ভর করছে ওই রোগীকে কতদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে। তবে সাধারণভাবে ডেঙ্গু রোগী এমনিতেই দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

নয়া দিগন্ত : ডেঙ্গু ভালো হওয়ার পর আবারো কী হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
প্রফেসর মীরজাদী : হ্যাঁ, ডেঙ্গু রোগে কেউ একবার আক্রান্ত হলে তার আরো তিনবার ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে একবার হওয়ার পর কোনো রোগী যদি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হন তখন আসলে ওই রোগীর জটিলতাও বেশি হয়। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাসটি চার ধরনের। তাই একবার হলে আরো তিনবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর কোনো রোগী একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর কিন্তু ওই রোগী ঝুঁকিমুক্ত হয় না। এ ক্ষেত্রে তাকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

নয়া দিগন্ত : পারিবারিকভাবে কী ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা দেয়া যায়, কিভাবে?
প্রফেসর মীরজাদী : তরল জাতীয় খাবার স্যালাইন বা শরবত বেশি করে খেতে হবে। তবে তিনি সাধারণ খাবারও যথানিয়মে খাবেন। তার জন্য আলাদা কোনো খাবারের প্রয়োজন নেই। তবে শর্ত হচ্ছে, পানি বা পানীয় খাবার তাকে বেশি করে খেতে হবে।

নয়া দিগন্ত : ডেঙ্গু রোগীকে কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়?
প্রফেসর মীরজাদী : হ্যাঁ, ভালো প্রশ্ন। ডেঙ্গু রোগীকে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। কেননা তাকে যদি কোনো এডিস মশা কামড়ায় ওই মশা পরে অন্য কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তারও ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। তাই এ বিষয়ে অবশ্যই পরিবারের অন্য সদস্যদের আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নয়া দিগন্ত : পরিবারের কারো ডেঙ্গু হলে কি অন্যদের হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
প্রফেসর মীরজাদী : এডিস মশা কামড়ালেই এই রোগটি হয়। তাই একটি এডিস মশা কিন্তু তার স্বভাব অনুযায়ী একজনকে শুধু কামড়াবে না, অন্য সদস্যকেও কামড়াবে। তাই ওই বাড়িতে এডিস মশা জন্মানোর মতো কোনো স্থান থাকলে সেখানেই এডিস মশা উৎপন্ন হবে। তাই বাড়ির আশাপাশ পরিষ্কার না থাকলে পরিবারের একজন শুধু নয় সবাই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

নয়া দিগন্ত : ডেঙ্গুর কোনো টিকা আছে?
প্রফেসর মীরজাদী : টিকা আছে, তবে এই টিকা ব্যবহারের আলাদা কিছু নিয়মনীতিও আছে। কেননা এই টিকা অন্য সব টিকা থেকে একটু ভিন্ন। একবার যারা ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়েছে কেবলমাত্র তাদেরকেই এই টিকা দেয়া যায়। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) থেকে এটি ব্যবহারের কথা বলা আছে এবং এই টিকা ব্যবহারের জন্য বিশে^র ২০টি দেশ তালিকাভুক্ত আছে। এই তালিকার মধ্যে বাংলাদেশের নামও আছে। তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হতে হবে যে এই রোগীর আগেও ডেঙ্গু হয়েছিল। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে এই টিকা ব্যবহার করা যাবে না।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us