নিস্তব্ধ কাশ্মিরে কী হচ্ছে?
বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত এলাকা মনে করা হয় ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরকে। সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ সদস্য মিলিয়ে সেখানে সাত লক্ষাধিক নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে - ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত এলাকা মনে করা হয় ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরকে। সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ সদস্য মিলিয়ে সেখানে সাত লক্ষাধিক নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সোমবার রাজ্যটির স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিলের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে পুরো উপত্যকাকে কারাগারে পরিণত করেছে ভারত সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, হোটেল, গেস্ট হাউজ, সরকারি ও বেসরকারি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার বানানো হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চার শতাধিক রাজনীতিক, উপদেষ্টা ও স্বাধীনতাপন্থী নেতাদের। পুরো উপত্যকা যেন পরিণত হয়েছে এক কারাগারে।
সরকারের নির্দেশ অনুসারে, চেন্তৌর, হরি নিবাস, ফরেস্ট গেস্ট হাউজের মতো হোটেল ও গেস্ট হাউজ এবং সরকারি ও বেসরকারি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার বানানো হয়েছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে গ্রেফতার করে হরি নিবাসের পৃথক দু’টি কটেজে রাখা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাদ পড়েছেন শুধু ড. ফারুক আব্দুল্লাহ ও ৯১ বছরের স্বাধীনতাপন্থী নেতা সৈয়দ আলি গিলানি। মঙ্গলবার মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ফারুক আব্দুল্লাহ। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বাবার অভিযোগ, সরকার তাকে গৃহবন্দী করেছে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তা অস্বীকার করেছেন।
শ্রীনগর থেকে নির্বাচিত এমপি ফারুক আব্দুল্লাহ বাড়ির পেছনের গেটে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, লোকসভায় ৩৭০ ধারার বিলোপ নিয়ে আয়োজিত ভোটাভুটিতে তাকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি।
জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মকর্তা শাফকাত খান এ সময় ফারুক আব্দুল্লাহর বাসার বাইরে অবস্থান করছিলেন। তিনি দাবি করেন, প্রবীণ এই নেতাকে তার গুপকার বাড়িতে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাকেও বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ একেবারেই অসাংবিধানিক। ৩৭০ ধারার জন্য বুকে গুলি নিতে রাজি আছি। আমি জানি না কোথায় আছে আমার ছেলে। সরকার আমাকে গৃহবন্দী করে রেখেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় দাবি করেছেনÑ ফারুক আব্দুল্লাহকে গৃহবন্দী করা হয়নি; কিন্তু এটা স্পষ্ট যে তার চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে বাড়ি থেকে বের হতে চাইলে বাধাপ্রাপ্ত হন তিনি।
সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, মেহবুবা মুফতি দুই-তিনটি পোশাক সাথে নিয়ে গ্রেফতার মেনে নিয়েছেন; কিন্তু তার দুই মেয়ে সাক্ষাৎ করতে চাইলে প্রত্যাখ্যান করা হয়। অন্য দিকে, ওমর আব্দুল্লাহ কেঁদেছেন।
জম্মু-কাশ্মির পুলিশের ডিজি দিলবাগ সিং বলেন, প্রশাসনের নির্দেশে রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দী রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক নেতাদের সহসাই মুক্তি মিলছে না। যেসব নেতা উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে পারেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই বড় ধরনের গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, যাতে করে কোনো প্রতিবাদ না হয়।
রাজ্যটির অল্প কয়েকটি সচল টেলিফোন লাইনের একটি ব্যবহার করতে সক্ষম হওয়া বিবিসির শ্রীনগর প্রতিনিধি আমির পীরজাদা জানিয়েছেন, তিনি যাদের সাথে কথা বলেছেন তাদের মধ্যে স্পষ্ট ক্রোধের লক্ষণ দেখেছেন তিনি, বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন বলে মনে করছেন তারা। কোথাও কোথাও প্রতিবাদ ও নিরাপত্তাবাহিনীর প্রতি পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভারতের অন্যান্য অংশে থাকা কাশ্মিরিরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।
১৯৪৭ সালের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মিরকে নিজেদের বলে দাবি করে এলেও নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদ এখন অঞ্চলটির আলাদা দু’টি অংশের নিয়ন্ত্রক।