রিফাত হত্যাকাণ্ড : মিন্নি, রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ডের মোবাইল ফোন নিয়ে নতুন রহস্য
রিফাত হত্যাকাণ্ড : মিন্নি, রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ডের মোবাইল ফোন নিয়ে নতুন রহস্য - ছবি : সংগৃহীত
বরগুনায় শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের এক মাস পূর্ণ হলো। গত ২৬ জুন সকাল সোয়া ১০টায় শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীসহ তাদের সহযোগীরা। পরে হাসপাতালে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়। ১৫-২০ দিনের মধ্যেই এই মামলায় চার্জশিট প্রদান করা হবে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেছেন।
এ দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরগুনার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের এক মাসের মধ্যে এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম একদম শেষের পথে। এ মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা বেশ কিছু আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব আলামতের মধ্যে নয়ন বন্ডের বাসা থেকে জব্দ করা মেয়েদের একটি জামা, একটি চিরুনি, খোদাই করে শামুকের গায়ে এন+এম লেখা একটি শামুক, নয়ন ও মিন্নির একসাথে ছবি রয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শাহজাহান হোসেন জানান, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে অত্যন্ত সতর্কভাবে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে মামলার তদন্তের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ মামলার ১৫ জন অভিযুক্ত গ্রেফতারের পর আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। মামলার এজহারভুক্ত অন্যান্য আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কোনো প্রকার অবহেলা এবং কালক্ষেপণ না করে এ মামলার চার্জশিট দ্রুত আদালতে দাখিল করা হবে।
কারাগারে মিন্নি ভালো আছেন : চিকিৎসক
রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি রয়েছেন বরগুনা জেলা কারাগারে। মিন্নির সাথে দেখা করেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: মাহবুবুল বারী আসলাম। তারা উভয়ই দাবি করেন, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় পুলিশের নির্যাতনে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মিন্নি। তাই তার চিকিৎসা প্রয়োজন। জেলহাজতে মিন্নির চিকিৎসায় যাওয়া বরগুনা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি মেডিক্যাল অফিসার ডা: হাবিবুর রহমান বলেন, মিন্নি তেমন কোনো গুরুতর অসুস্থ নয়। একটু শারীরিক ব্যথাবেদনা থাকতে পারে। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে, তাই মানসিকভাবে একটু চাপে আছে। ভয়ের কিছু নেই, দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। তিনি অনেক ভালো আছেন। তবে তার ঘুম কম হচ্ছে।
মিন্নির শারীরিক অবস্থা জানতে ও তার খোঁজখবর নিতে কথা হয় বরগুনা জেলা কারাগারের সুপার মো: আনোয়ার হোসেনের। তিনি বলেন, মিন্নি অসুস্থ না।
মিন্নি, রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ডের মোবাইল ফোন গায়েব : মিন্নিকে এ হত্যায় দায়ী করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ঘটনার আগে-পরে অসংখ্যবার মিন্নি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। রিমান্ড আবেদনেও তদন্ত কর্মকর্তা এমন কথাই বলেন। অথচ নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী বা মিন্নি, কারো মোবাইল ফোন এখনো জব্দই করতে পারেনি পুলিশ। প্রযুক্তিগত আলামত হিসেবে দু’টি জব্দ তালিকায় পাঁচটি মোবাইল ফোন ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হলেও এই তিনজনের কারো মোবাইলই সেখানে নেই। এখন প্রশ্ন হলো, মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই তিনজনের মোবাইল ফোন গেল কোথায়?
এ দিকে, নয়ন বন্ডের মায়ের দাবি অনুযায়ী ঘটনার পরদিনই পুলিশ তার বাড়িতে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার মেশিন (ওই মেশিনে ভিডিও সংরক্ষণের জন্য হার্ডডিস্ক লাগানো থাকে) ও কম্পিউটার নিয়ে আসে। ভাঙচুরও চালায় ঘরে। ওই হার্ডডিস্কে ও কম্পিউটারে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আলামত থাকার সম্ভাবনা থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ওই সব যন্ত্রপাতি তারা পাননি। পুলিশ না আনলে গুরুত্বপূর্ণ ওই আলামতগুলো কে নিল, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো: হুমায়ুন কবির।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা। অনেক আসামি। তাই আমরা দু’টি জব্দ তালিকায় পাঁচটি মোবাইল ফোন ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। এর মধ্যে একটি ফোন মিন্নির মায়ের বলে দাবি করেন তিনি। মোবাইল ফোনের সাথে হত্যায় জড়িত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের কিছু আলামত ও কিছু ফেসবুক আইডিও ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।