কাউন্সিলের চিন্তা বিএনপির
কাউন্সিলের চিন্তা বিএনপির - ছবি : সংগ্রহ
আগামী অক্টোবরের মধ্যেই দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের চিন্তা করছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে কাউন্সিলের প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। দল পুনর্গঠন চলছে। সাংগঠনিক জেলাগুলোতে দেয়া হচ্ছে নতুন কমিটি। কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এই সময়ের মধ্যে মুক্ত করেই কাউন্সিল সফল করতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। নেতারা বলছেন, আসন্ন কাউন্সিলে দলে তরুণ নেতৃত্বের দরজা আরো প্রসারিত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, আমরা দ্রুতই সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা ভাবছি। তবে সবার আগে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রত্যাশা করছি। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে আশা করছি, শিগগিরই বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন। তাকে নিয়েই আমরা কাউন্সিল করতে চাই। নতুন নেতৃত্বে বিএনপিকে চাঙা করাই আমাদের উদ্দেশ্য।
জানা গেছে, গত শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কাউন্সিল নিয়ে কথা বলেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি কাউন্সিলের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা করেছেন। আগামী শনিবার স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে কাউন্সিল প্রস্তুতির লক্ষ্যে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হতে পারে। দলের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনতেও কমিটি গঠন করা হবে। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এবারের কাউন্সিল বিগত সময়ের মতো জাঁকজমকপূর্ণ নাও হতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শনিবার সকালে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, কাউন্সিলের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আমাদের সাংগঠনিক জেলা ও অঙ্গসংগঠনগুলোর পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বেগম জিয়াকে মুক্ত করেই কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি। এজন্য আগামী দিনগুলোতে সারা দেশে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে সভা সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় নেতারা বিভাগীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর করে এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
বেগম জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, নতুন করে আইনি কোনো বাধা তৈরি না হলে আর দু’টি মামলায় জামিন পেলেই মুক্তি পাবেন ১৬ মাস ধরে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তারা বলেছেন, চলতি মাসের শেষে জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি সংক্রান্ত ওই দু’টি মামলায় পর্যায়ক্রমে জামিন শুনানি হবে। আইনি প্রক্রিয়া যথানিয়মে চললে দুই মাসের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নয়া দিগন্তকে বলেছেন, বেগম জিয়াকে জোর করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা এখন আশা করছি, আইনি প্রক্রিয়ায়ই বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন। পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচিও আমরা চালিয়ে যাব।
বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকেও সম্পৃক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে। এ নিয়ে আজ ২০ দলীয় জোটের সাথে বৈঠকে বসবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সাথেও বৈঠক হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী নেতাদের আগামী দিনের নেতৃত্বে মূল্যায়ন করা হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য, ত্যাগী ও অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের নিয়ে আসা হবে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে পিছিয়ে থাকা কিংবা সুবিধাবাদী নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হবে না। এ ছাড়া কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত কমিটিতে এবার ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে।
জানা যায়, গত কাউন্সিলের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এবার কাউন্সিলে নেয়া সব সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করা হবে। কাউন্সিলের তিন বছরেও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপকমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এবার দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব কমিটিই গঠন করা হবে। নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাও করা হবে। প্রয়োজনে বর্ধিত সভা করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কাউন্সিলের সামগ্রিক বিষয় কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এবার কেন্দ্র থেকে আর কোনো কমিটি চাপিয়ে দেয়া হবে না। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে একই আদলে কমিটি গঠন করা হবে।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলকে চাঙা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সর্বস্তরের কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা ইতিবাচক উদ্যোগ। আমাদের চাওয়া আগামী দিনের কাউন্সিলে নির্বাচনের মাধ্যমে ত্যাগী ও যোগ্যদের যেন নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর দলের কাউন্সিল হবে। সে হিসাবে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।