এক কালো চামড়ার বিস্ময় বালক
এক কালো চামড়ার বিস্ময় বালক - ছবি : সংগ্রহ
‘রুটস : দি সাগা অব অ্যান আমেরিকান ফ্যামিলি’। রুদ্ধশ্বাস, পলকে পলকে নাটকে ভরা ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষে জো রুটকে যদি কেন্দ্রীয় চরিত্র করা হয় কোনোভাবে এবং প্রশ্ন করা হয় ‘কাপ গেল কোন রুটে?’ উত্তর আসতে পারে রং রুটে নয়, জো রুটে। ঘটনা হলো রুট ফাইনালে বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি বরং সুপার ওভারের আগে ক্যামেরায় বারবার ধরা পড়েছে তার ‘টেনশনে’ ভরা মুখ। ফর্সা মুখ চাপে পড়ে লাল হয়ে গিয়েছিল।
লজ্জার আরো এক অধ্যায় হতে হতে হ্যাশ ট্যাগ ফর্সাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে এক কালো চামড়ার বিস্ময় বালক। সেই কালো চামড়া, যাদের ইংরেজরা এক সময় দাস করে রেখে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে। জোফ্রা আর্চার সেই তাদেরই দলের। অনেকে বলতে পারেন আর্চার মান বাঁচিয়েছেন ইংরেজদের। কিন্তু না, বছর চব্বিশের ফাস্ট বোলার যেন ইংরেজদের অত্যাচারী রাজদণ্ডের মোক্ষম উত্তর।
১৯৯২তে লিউইস যা করতে পারেননি, ২০১৯-এ সেটাই করে দেখাতে পেরেছেন আর্চার।
ফাইনালে নির্ধারিত ৫০ ওভারে দুরন্ত আর্চার, সুপার ওভারে খেই হারিয়েছিলেন। ইংরেজদের মান রক্ষা করেন শেষ তিন বলে। চাপে হাল না ছেড়ে দিয়ে তার পূর্বপুরুষদের মতোই লড়াই করে টিকে থেকেছেন। দিয়েছেন ক্রিকেটের তথাকথিত জন্মদাতাদের প্রথম ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। এও যেন এক শাপমুক্তি। ফর্সা চামড়ার শাপমোচন অত্যাচারিত এক কৃষ্ণাঙ্গের হাতে।
আর্চার পেসার হিসেবে বিপিএল, বিগ ব্যাশসহ বিভিন্ন লিগে খেলে সবার নজর কেড়েছিলেন আগেই। বার্বাডোজে জন্ম নেয়া ক্রিকেটারের স্বাভাবিকভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার কথা ছিল। সুযোগ না পেয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করার সিদ্ধান্ত নেন আর্চার।
কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের হয়ে খেলা আর্চারের ফার্স্ট ক্লাস, লিস্ট-এ ও টি-২০ ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৬ সালে। মূলত বিগ ব্যাশ লিগে হোবার্ট হারিকেন্সের হয়ে তার পারফরম্যান্সই নজর কেড়ে নেয় ক্রিকেটবিশ্বের। তার আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) চমৎকার খেলেছিলেন। কাউন্টিতে ২০১৭ মওসুমে ৬১ উইকেট পেয়েছিলেন এই ডানহাতি পেসার। প্রথমবারের মতো আইপিএলেও সুযোগ চলতি বছরেই। ৭ কোটি ২০ লাখ টাকায় তাকে দলে নেয় রাজস্থান রয়্যালস।
বিশ্বকাপজুড়ে আর্চারের স্বপ্নের দৌড় বজায় থাকে। ১০ ম্যাচে ২১ উইকেট। প্রাথমিক দলে উপেক্ষিত তারকার সারা বিশ্বকাপে দুরন্ত পারফরম্যান্স, সব মাটি হতে যাচ্ছিল। লড়াই করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শেষ তিন বলে। কাপ এসেছে রুটের দেশে। এ যেন অত্যাচারীতদের হাতে অত্যাচারীদের শাপমুক্তি।