এক ট্র্যাজিক হিরোর গল্পগাথা
এক ট্র্যাজিক হিরোর গল্পগাথা - ছবি : সংগ্রহ
ক্রিকেট রহস্যময়তা পছন্দ করে। রোমাঞ্চিত করতে ভালোবাসে ক্রিকেটার ও দর্শকদের। তারই প্রমাণ পাওয়া গেল লর্ডসের ফাইনালে। টান টান উত্তেজনার পারদ কখনো ওপরের দিকে, কখনো আবার নিচের দিকে। কে জিতবে শিরোপাÑ ইংল্যান্ড নাকি নিউজিল্যান্ড? এই সম্ভাবনা ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো এদিক-ওদিক দুলেছে। শেষ পর্যন্ত সুপার ওভারের নাটক। ফাইনাল ম্যাচটি যে এত নাটকীয় হবে তা কেই বা বুঝেছিল। কিন্তু তা-ই হলো। এক নতুন এপিকের জন্ম দিলো। ক্রিকেট বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখল শিহরণ জাগানিয়া এক ফাইনালের ইতিকথা, যা গল্পকেও হার মানায়। মসৃণ পথ চলা ম্যাচটি যে এত অবিশ্বাস্য এবং অসাধারণ হয়ে উঠবে তা কিন্তু ম্যাচের আগে কেউ ভাবেননি। শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো। ২৪১ রানের ফাইনাল খেলাটি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তেজনার পরশ বুলিয়ে শেষ হলো। আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলতে থাকা দিবা-রাত্রির কাব্য ইংল্যান্ডের সফলতার গান গাইলো। ৪৪ বছরের না পাওয়ার অব্যক্ত বেদনাকে আনন্দের ফল্গুধারায় পরিণত করল ইংল্যান্ড। অধিনায়ক মরগান শেষ হাসি হাসলেন। ট্রফি হাতে ইংল্যান্ড বীরের বেশে মাঠ ছাড়ল।
অন্য দিকে শিরোপার এত কাছে এসেও বেদনায় নীল রঙে দুঃখবোধে আক্রান্ত হলো নিউজিল্যান্ড। টানা দুইবার ফাইনালে হেরে যাওয়ার রেকর্ডে নিজেদের শামিল করল। লর্ডসে নতুন রাজা হিসেবে বিশ্বকাপে চুম্বন দেয়া হলো না কিউই
অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের। নতুন ক্রিকেট এপিকের ট্র্যাজিক মহানায়ক হিসেবে নীরবে প্রস্থান করলেন তিনি। হতাশার ছাপ ছিল তার সারা মুখমণ্ডলে। চোখে কি টল টল করেছে রুপালি অশ্রুবিন্দু। তবে গ্রিক মহাকাব্য ইলিয়াডের বিয়োগান্তক নায়ক একিলিসের মতো পুরো টুর্নামেন্টে উইকেট হাতে লড়ে গেছেন। পরাজিত হওয়ার পরও ঘুড়ে দাঁড়িয়েছেন। তার ব্যাট হেসেছে। রান তুলেছেন বিপর্যয়ের মধ্যে। এ ছাড়া তার অসাধারণ নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়েছে সর্বমহলে। দলকে ফাইনালে তুলে নেয়ার পেছনে উইলিয়ামসনের কৃতিত্ব অনেক। তবে ফাইনালে কম বাউন্ডারি মারায় রানার্সআপ হয়েই নিউজিল্যান্ডকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ট্রফিতে হাত ছোঁয়াতে না পারলেও উইলিয়ামসন হয়েছেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়। তার চেয়ে বেশি রান ভারতের রোহিত শর্মা (৬৪৮) এবং বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের (৬০৬)। উইলিয়ামস করেছেন ৫৭৮। কিন্তু ফাইনালে দলকে উঠানোর জন্য তিনি সেরাদের সেরা হয়েছেন। উপস্থাপক ইংলিশ সাবেক অধিনায়ক নাসির হুসেইন যখন সেরা ক্রিকেটার হিসেবে তার নাম ঘোষণা করলেন তখনো উইলিয়াসনের মুখে বেদনার ছাপ। সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার নেয়ার পর তিনি কিছুটা আর্দ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেন, চ্যাম্পিয়ন হতে না পারাটা অবশ্যই হতাশাজনক। ইংল্যান্ড এই নাটকীয় ম্যাচে সেরা নৈপুণ্য দেখিয়ে জিতছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ইংল্যান্ডকে ধন্যবাদ জানাই। পিচ নিয়ে তিনি বলেন, ফাইনালে যে ধরনের পিচ আশা করেছিলাম তেমনটি হয়নি। অনেকেই বলেছেন, এই পিচে ৩০০ প্লাস রান হবে। কিন্তু আমরা সে সব নিয়ে ভাবিনি। এই পিচে রান তোলাটা কঠিন ছিল। আমরা ২০ রানের মতো কম করেছি। পুরো টুর্নামেন্টে দলের সবাই লড়াকু মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। বিশ্বকাপে তারা অসাধারণ পারফরম করেছেন।
১২তম বিশ্বকাপে এপিক ফাইনালের সাক্ষী হয়ে থাকল ক্রিকেট তীর্থভূমি লর্ডস। আগামী বিশ্বকাপের আসর ২০২৩ সালে বসবে ভারতে। সেই আসরে আরেকটি জমজমাট ফাইনাল দেখার আশায় এখন থেকেই প্রহর গুনতে শুরু করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।