মিন্নি নাটকে প্রভাবশালীদের ঘুঁটির চাল!
মিন্নি নাটকে প্রভাবশালীদের ঘুঁটির চাল! - ছবি : সংগৃহীত
বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা বলেছেন, পুলিশের তদন্তে তিনি আস্থা রাখতে পারছেন না।
আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী। তিনিই এই মামলার প্রধান সাক্ষী।
কিন্তু সাক্ষী হিসেবে তথ্য নেয়ার কথা বলে মিন্নিকে যেভাবে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন।
থানায় নিয়ে বারো ঘণ্টা জেরা করার পর যেভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা তার কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়েছে।
হোসেন অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের যারা স্থানীয় রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন তারা এই মামলার তদন্তকে প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা চলছে বলে তারা বিশ্বাস করেন। তার মেয়েকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে টার্গেট করা হচ্ছে কি না, তিনি সেই প্রশ্ন তুলেছেন।
মিডিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, শুক্রবার বেলা দুটার দিকে মিন্নিকে আদালতে নেয়া হয়। আদালত থেকে তাকে বের করা হয় সন্ধ্যা সাতটার দিকে। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিমান্ডে নেয়ার তিন দিনের মাথায় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
এ দিকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে মিন্নির বাবা মোজ্জাম্মেল হোসেন আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। এ সময় তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, তার মেয়ে অসুস্থ, গতকাল রাতে একজন পুলিশ সদস্য তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসাপত্র নিয়ে এসেছেন। আজকে জোর জবরদস্তি ও নির্যাতন করে তার মেয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
মোজ্জাম্মেল হোসেন আরো বলেন, ‘মেয়ে আমার জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এসব কিছুই শম্ভু বাবুর (স্থানীয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তাঁর ছেলে সুনাম দেবনাথকে সেভ করার জন্য আমাদের বলি দেয়া হচ্ছে।’
মিন্নিকে যখন আদালত থেকে বের করা হচ্ছিলেন, তখন তাকে পুলিশের দুজন নারী সদস্য ধরে ছিলেন। ছোট পিকআপে তোলার সময় মিন্নি কিছু একটা বলার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু পাশে থাকা নারী পুলিশ সদস্য এ সময় মিন্নির মুখ চেপে ধরেন।
এর আগে মঙ্গলবার মিন্নিকে প্রায় ১৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ এই মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে গ্রেফতার দেখায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির মিন্নিকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তবে স্বীকারোক্তিতে মিন্নি কী বলেছেন সে সম্পর্কে পুলিশ কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি।
পুলিশ মিন্নিকে গত ১৬ জুলাই গ্রেফতার দেখায়।
এর আগে হত্যা মামলাটির বাদি, নিহত রিফাত শরীফের বাবা, আবদুল হালিম দুলাল শরীফ গত ১৩ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন যে তার পুত্রবধূও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে তিনি সন্দেহ করেন।
পুলিশ তার সন্দেহের বিষয়টিকে আমলে নেয় এবং এর সূত্র ধরে তারা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকে।
গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে তার স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল লোক।
পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ঐ ঘটনার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। আক্রমণকারীদের একজন, যিনি এলাকায় নয়ন বন্ড নামে পরিচিতি, পুলিশ তাকে আটক করে।
পরে, পুলিশের ভাষায়, 'বন্দুকযুদ্ধে' তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।