হায়দরাবাদ নিজামের সম্পত্তির মালিক কে : ভারত না পাকিস্তান?
হায়দরাবাদ নিজামের সম্পত্তির মালিক কে : ভারত না পাকিস্তান? -
ব্যাংকে গচ্ছিত হায়দরাবাদের শেষ সম্রাট নিজাম ওসমান আলি খানের সম্পত্তির ভাগীদার কে? ভারত নাকি পাকিস্তান? এই প্রশ্নে দু’দেশের আইনি লড়াই এখন তুঙ্গে। শুরু সেই দেশভাগের পর। এখনো চলছে। কাশ্মীরের বাইরে ভারত-পাকিস্তানের এ এক অন্য মহারণ!
‘যুদ্ধক্ষেত্র’ লন্ডন
হায়দরাবাদ নিজামের সম্পত্তি এখন ব্রিটিশ ব্যাঙ্কের জিম্মায়। লন্ডনের ন্যাট ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে লকারবন্দি হয়ে পড়ে দশকের পর দশক। সুদে-আসলে সম্পত্তির অঙ্কটা নেহাৎ কম নয়। তথ্য বলছে, ব্রিটেনের মুদ্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডের কাছাকাছি! আর সেই সম্পত্তির দাবিদারের প্রশ্নে লম্বা আইনি-যুদ্ধ শুরু হয় দুই পড়শি দেশের। শেষপর্যন্ত মামলা গড়িয়েছে লন্ডনের হাইকোর্টে। আদালতের কাছে পাকিস্তানের আর্জি, নিজামের ওই সম্পত্তির উপর অধিকার তাদেরই। কিন্তু সেই আর্জি মানতে নারাজ ভারত। নয়াদিল্লির সাফ কথা, নিজামের ওই সম্পত্তির উপর ভারত ছাড়া অন্য কোনো রাষ্ট্রের অধিকার নেই। কাশ্মীর সীমান্ত ছাড়িয়ে লন্ডনে গচ্ছিত নিজামের সম্পত্তি দখলে ভারত-পাকিস্তানের এই স্নায়ুর যুদ্ধ চলে আসছে ১৯৪৭ সাল থেকে।
ভারতের পাশে নিজামের দুই উত্তরসূরি
নিজামের সম্পত্তির উপর ভারতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বাড়তি শক্তি জুগিয়েছেন তার দুই বংশধর। একজন, সাম্মানিক খেতাবধারী হায়দরাবাদের যুবরাজ মুকারাম জাহ। তিনি হায়দরাবাদের অষ্টম নিজাম। অন্যজন, তার বড় ভাই মফাখাম জাহ। দু’জনেই এখন বৃদ্ধ। বয়স যথাক্রমে ৮০ ও ৮৪ বছর। থাকেন তুরস্কে। শেষ বয়সে তারা অন্তত দেখে যেতে চান, দাদু ওসমান আলি খানের গচ্ছিত সম্পত্তির মালিক ভারত সরকার হোক। সেই মতো নয়াদিল্লির পাশাপাশি লন্ডনের হাইকোর্টে নিজেদের আইনজীবীকেও দাঁড় করিয়েছেন তারা। সম্প্রতি তাদের কৌসুঁলি পল হেউইট বলেছেন, ‘নিজামের দুই উত্তরসূরিই মনে করেন, লন্ডনের ব্যাংকে গচ্ছিত সম্পত্তি তাদেরই প্রাপ্য। এবং সেই সম্পত্তির উপর অধিকার রয়েছে একমাত্র ভারতের। অথচ, পাকিস্তান টানা ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজামের সম্পত্তি আটকে রেখেছে। বর্তমানে তারা আশাপ্রকাশ করেছেন, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। মামলার রায় ভারতের পক্ষেই যাবে।’
মরিয়া পাকিস্তানও
নিজামের সম্পত্তির দখল নিয়ে দু’দেশের দীর্ঘ আইনি লড়াই এখন শেষ পর্যায়ে। দু’সপ্তাহ ধরে ব্রিটেনের হাইকোর্টে শুনানি চলেছে। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন বিচারপতি মার্কিউস স্মিথ। শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন নিজামের দুই উত্তরসূরির আইনজীবী। ছিলেন ভারতের তরফে নিযুক্ত আইনজীবীরাও। পাকিস্তানের পক্ষেও শুনানি করেছেন সেদেশের এক দল কৌসুঁলি। নিজামের সম্পত্তির অধিকার পেতে মরিয়া হয়ে লড়াই করেছে পাকিস্তান। আদালতকে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, নিজামের গচ্ছিত সম্পত্তির ভাগিদার তারাই।
সম্পত্তির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর উভয় সঙ্কটে পড়েছিলেন হায়দরবাদের নিজাম। ভারতে থাকবেন নাকি, পাকিস্তানে যাবেন তা নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না তিনি। এইরকম এক সন্ধিক্ষণে নিজের আর্থিক নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজাম কিছু অর্থ-সম্পত্তি ব্রিটেনে অবস্থিত নবগঠিত পাকিস্তানের দূতাবাসে পাঠিয়ে দেন। সবমিলিয়ে তৎকালীন সময়ে যার পরিমাণ ছিল ব্রিটেনের মুদ্রায় ১০ লক্ষ সাত হাজার ৯৪০ পাউন্ড ও ৯ সিলিং। ওই সম্পত্তি দূতাবাসের হাত ঘুরে জমা পড়ে লন্ডনের ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের লকারে। আজও তা সেই ব্যাঙ্কেই গচ্ছিত। নিজাম মারা যান ১৯৬৭ সালে। তার ঠিক ১৭ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৫০ সালে গচ্ছিত সম্পত্তি ভারতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছিলেন নিজাম। কিন্তু পাকিস্তানে তাতে বাগড়া দেয়। মূলত সেই থেকে নিজামের সম্পত্তি নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের স্নায়ুর যুদ্ধ শুরু।
চূড়ান্ত রায়ের প্রহর গোনা
পাকিস্তানের এই দাবি কতখানি ধোপে টিকবে, সেটাই প্রশ্ন। তবে, আইনজ্ঞদের ধারণা, উত্তরাধিকার সূত্রে নিজামের গচ্ছিত সম্পত্তির প্রাপ্য অধিকার রয়েছে মুকারাম ও মফাখামের। সেই সূত্রে সম্পত্তির ভাগীদার ভারতই হবে। এখন সবটাই নির্ভর করছে ব্রিটেনের রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিসের চূড়ান্ত রায়ের উপর। সূত্রের খবর, মামলার ফয়সালা হয়ে যেতে পারে আগামী দেড়মাসের মধ্যে। সেই দিকে তাকিয়ে প্রহর গোণা শুরু হয়েছে দু’দেশের মানুষের।