এস-৪০০ : বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য এরদোগানের

Jul 14, 2019 04:29 pm
এস-৪০০ : বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য এরদোগানের

এস-৪০০ : বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য এরদোগানের -

 

তুরস্কের কূটনৈতিক ইতিহাসে ২০১৯ সালের ১২ জুলাই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গত শুক্রবার সকালে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার মুরিটিড বিমান ঘাঁটিতে রাশিয়ার দু’টি পরিবহন বিমান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ এর প্রথম চালান নিয়ে অবতরন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা উপেক্ষা করে একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয় চুক্তি ও রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনায় আঙ্কারার ওপর ক্ষুব্ধ ট্রাম্প প্রশাসন। ২৯ সদস্যের সামরিক জোট ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী তুরস্কের। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র তুরস্কের অবস্থানও কৌশলগত। সিরিয়া, ইরাক ও ইরানের সাথে সীমান্ত রয়েছে তাদের। সিরিয়া যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তুরস্ক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এস-৪০০ ক্রয়ে ওয়াশিংটন এবং আঙ্কারার মধ্যকার টানাপড়েন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশ হয়েও এতে এফ-৩৫ থেকে বঞ্চিত হতে পারে তুরস্ক। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করলে এফ-৩৫ কর্মসূচি থেকে তুরস্ককে বাদ দেয়ার সতর্কতা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১০০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে। এখন অর্থনৈতিক অবরোধের মুখেও পড়তে হতে পারে আঙ্কারাকে।
এফ-৩৫ কর্মসূচিতেও ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে তুরস্ক। বিমানের ৯৩৭টি পার্টস উৎপাদন করছে তুর্কি কোম্পানিগুলো। আবার রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনছে তুরস্ক। এতেই আপত্তি যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির দাবি, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ন্যাটো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং তা নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্র চায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের বদলে তুরস্ক মার্কিন প্যাট্রিয়ট বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা কিনুক।
তবে রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের ফলে তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোও মার্কিন ‘কাটসা’ আইনের আওতায় নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় রয়েছে। কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভার্সারি থ্রো স্যাংশন অ্যাক্ট (কাটসা বা সিএএটিএসএ আইন), অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দমন আইন। এটি দুই বছর আগে সর্বসম্মতিক্রমে মার্কিন কংগ্রেসে পাস হয়। এ আইন মোতাবেক রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সাথে যেসব দেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি করবে তাদের ওপর অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ ধরনের অবরোধ আরোপের ফলে তুরস্কের ক্রমবর্ধমান ভঙ্গুর অর্থনীতিকে আরো সমস্যায় ফেলবে, বাড়বে করের বোঝা। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রের তালিকা থেকে তুরস্ককে প্রতীকী নির্বাসন দিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।

সহযোগী দেশ হিসেবে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরে আসার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের যে ভয় রয়েছে সেটিও সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দেয়া যায় না। রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কিনে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের মধ্যে একটি ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভয় এটি স্থাপনের ফলে তুরস্কের মাধ্যমে রাশিয়া সহজেই সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম হবে। যদিও তুরস্কের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তারা এস-৪০০ পরিচালনা করতে নিজস্ব সফটওয়ার ও প্রযুক্তিতে দক্ষ সামরিক ব্যক্তিদের ব্যবহার করবে। যাই হোক, তুরস্ক এখন সর্বোতভাবে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়েছে এমন মূল্যায়ন যথাযথ নয়। তুরস্কের ভেগোলিক দৃষ্টি এখনো অপরিবর্তিত। প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তার অনুগামী লোকেরা মনে করেন, তুরস্ক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিবে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থেই পশ্চিমা ও রাশিয়ার সাথে তারা সম্পর্ক বজায় রাখছে।
সম্প্রতি সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্ক ব্যাপকভাবে রাশিয়ার কাছাকাছি চলে আসে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে কুর্দি মিলিশিয়াদের সমর্থন দেয়ায় বিষয়টি মিটমাটে রাশিয়া ও ইরানের প্রেসিডেন্টের দারস্ত হতে বাধ্য হন এরদোগান। তা ছাড়া ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও রাশিয়ার সাথে এরদোগান প্রশাসনের ঘনিষ্ঠতাকে ত্বরান্বিত করে।

অনেকেই মনে করেন, এরদোগান নিজের শাসন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতেই রাশিয়ার সাথে এস-৪০০ চুক্তি করেছে। যাতে তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে যেকোনো ক্যু ঠেকানো যায়। আর যদি ফের কোনো ক্যুয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে মুরিটিড বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে শত্রুদের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো যাবে। তবে এসব বিষয় ঘটনার একটি পিঠ মাত্র। রাশিয়ার সাথে অনেক বিষয়েই তুরস্কের মতভেদ রয়েছে। সম্প্রতি ইদলিব থেকে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর সহায়তায় তুর্কি বিদ্রোহীদের হটায় বাশার আল আসাদের বাহিনী। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার রিসোর্ট সোচিতে দুই নেতা ইদলিবে একটি অস্ত্রবিরতির মধ্যস্থতা করেন।

সূত্র : আলজাজিরা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us