এস কে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা যে কারণে
এস কে সিনহা -
ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ (এস কে সিনহা) ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মো: জিয়া উদ্দিন আহমেদ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের স্থায়ী বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো: শাহজাহান, একই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, সান্ত্রী রায় ওরফে সিমি ও তার স্বামী রণজিৎ চন্দ্র সাহা।
মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয় ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শুলশান শাখা ও প্রধান কার্যালয়। ঘটনার সময় দেখানো হয়েছে ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২), (৩) ধারায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি মো: শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দু’টি অ্যাকাউন্ট খোলেন। পরদিন ৭ নভেম্বর তাদের ব্যবসায় বৃদ্ধির জন্য ২ কোটি টাকা করে ৪ কোটি টাকার ঋণ আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ঋণ আবেদনে এস কে সিনহার উত্তরার (১০ নম্বর সেক্টর, রোড নং-১২, বাড়ি-৫১) ঠিকানা ব্যবহার করেন তারা। এ ছাড়া ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রণজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করেন। এই দম্পতি এস কে সিনহার আগে থেকেই পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ঋণ প্রস্তাব কোনো যাচাই-বাছাই না করে ব্যাংকের নিয়মনীতি না মেনে ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি আসামি এ কে এম শামীম ক্ষমতার অপব্যবহার করে দু’টি ঋণ অনুমোদন করেন। ঋণ আবেদনের পরদিন ৮ নভেম্বর পৃথক দু’টি পে-অর্ডার এস কে সিনহার নামে ইস্যু করা হয়, যা পরদিন ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পরে বিভিন্ন সময় ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা উঠানো হয়। এর মধ্যে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার ব্যাংক হিসাবে একই বছরের ২৮ নভেম্বর দু’টি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়।
এজাহারে আরো বলা হয়, আসামি রণজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেছেন। রণজিৎ চন্দ্রের ভাতিজা হলেন ঋণগ্রহীতা নিরঞ্জন এবং অপর ঋণগ্রহীতা শাহজাহান রণজিৎ চন্দ্রের ছোট বেলার বন্ধু। ঋণগ্রহীতা দু’জনই অত্যন্ত গরিব ও দুস্থ। তারা কখনো ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি বলেও এজাহারে বলা হয়। আসামি এস কে সিনহা অপর আসামি রণজিতের মাধ্যমে অন্য আসামিদের ভুল বুঝিয়ে কাগজপত্র স্বাক্ষর করার ব্যবস্থা করেন। ওই ঋণের চার কোটি টাকা আজও পরিশোধ করা হয়নি।
অর্থের উৎস এবং অবস্থান গোপন করে পাচারের চেষ্টা করার দায়ে দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) এবং মানিল্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২), (৩) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা লেনদেনের ঘটনায় জালিয়াতির প্রমাণের কথা জানিয়েছিলেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
অভিযোগ অনুসন্ধানে ওই বছরের ৬ মে ও ২৬ সেপ্টেম্বর মোট আট জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি কে এম শামীমসহ ছয় কর্মকর্তা এবং ৬ মে মো: শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা স্থানান্তরের বিষয়টি স্বীকার করেন।
মামলার বিষয়ে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কথা বলেন সংস্থাটির সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত। সাবেক প্রধান বিচারপতি বিদেশে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশের আইনে সব ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার ক্ষেত্রেও সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।