খেলাপি ঋণের অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে
খেলাপি ঋণের অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে - ছবি : সংগ্রহ
নানা পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি উন্নতি করা যাচ্ছে না। ফলে গত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে পুঞ্জিভূত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৪ হাজার ৪২ কোটি টাকা। এটি সার্বিক খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন সূচকে পারফরমেন্স লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেও খেলাপি ঋণ বাড়ছেই। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি পঞ্জিকা বছরের গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এটি ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ ছাড়া একই সময়ে খেলাপি ঋণ অবলোপনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক বছরে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অগ্রণী, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকেরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে, আর খুব সামান্য কমেছে সোনালীর।
ব্যাংকগুলোর নিজস্ব হিসাব মতে, চলতি বছরের জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (বিতরণকৃত ঋণের ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ)। গত বছর (২০১৮ সাল) জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা (৩৩ দশমিক ২৭ শতাংশ)। একইভাবে জুন শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ২১ হাজার ৪১০ কোটি টাকা (বিতরণকৃত ঋণের ৪০ শতাংশ)। গত বছর জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার কোটি টাকা (১৫ শতাংশ)।
একই সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা (বিতরণকৃত ঋণের ১৭ শতাংশ)। গত বছর জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা (১৭ শতাংশ)। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ৪ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা (বিতরণকৃত ঋণের ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ)। গত বছর জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা (২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ)।
আলোচ্য সময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ৮ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা (বিতরণকৃত ঋণের ৫৭ দশমিক ৪১ শতাংশ)। গত বছর জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা (৫৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ)। বিডিবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ৯০১ কোটি টাকা (বিতরণকৃত ঋণের ৪৬ শতাংশ)। গত বছর জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮০৫ কোটি টাকা (৫৪ শতাংশ)।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, প্রতি বছর দুইবার সরকারি ব্যাংকগুলোর সাথে আমরা পৃথকভাবে কর্মসম্পাদন চুক্তি করি। এই চুক্তির আওতায় ব্যাংকগুলোর জন্য কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এর অন্যতম হচ্ছে খেলাপি ঋণ কমানো। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। এ জন্য মূলত সুশাসনের অভাবই দায়ী বলে আমরা মনে করি। আমরা তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিÑ কেন খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেল তা জানানোর জন্য। তাদের জবাব পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো আমরা।