খবরের ব্যর্থতা যদি না থাকে সত্যতা

রহমান মৃধা | May 23, 2023 03:03 pm
খবরের ব্যর্থতা যদি না থাকে সত্যতা

খবরের ব্যর্থতা যদি না থাকে সত্যতা - ছবি : সংগ্রহ

 

আমি এখন আমার ছেলে জনাথানের সাথে এটিপি ওয়ার্ল্ড টেনিস ট্যুরে আছি। সময় পার করছি হোটেল আর টেনিস কোর্টে। একটু সময় সুযোগ পেলেই চেষ্টা করছি নতুন কিছু জানতে ও জানাতে, কারণ টেনিসের বাইরেও একটি জগৎ রয়েছে সেটা সম্পর্কেও তো খোঁজখবর নিতে হবে। এ মুহূর্তে আমার স্ত্রী মারিয়া ও মেয়ে জেসিকা স্টকহোমে এবং তারা তাদের কাজে ব্যস্ত। রাতে ঘুমানোর আগে সবাই সবার খোঁজখবর নিচ্ছি, কার দিনটি কেমন গেল মূলত এটাই আলোচনার বিষয় হলেও সবার নজর জনাথানের খেলার পারফরমেন্স কেমন চলছে- এর ওপর একটু বেশি। বাবা-মা হিসেবে এখনো আমার এবং মারিয়ার কনভারসেশন মূলত ছেলে-মেয়েকে নিয়েই বেশি হয়। যদিও তারা বড় হয়েছে, নিজেদের মতো করে আছে তবুও বাবা-মার যে অভ্যাস- তাদের ছেলে-মেয়ের সব খবরাখবর জানতে হবে। জেসিকা থাকে আমাদের একই বিল্ডিং-এ, জাস্ট ছয় তলার উপরে এবং একই লিফ্ট পর্যন্ত ব্যবহার করি তারপরও জানতে হবে কী দরকার, কী না দরকার বা সব ঠিকঠাক আছে তো ইত্যাদি।

হয়তো মনে হচ্ছে আমরা খুব কড়া শাসনে ছেলে-মেয়েকে রাখি, ঠিক তা না তবে তাদের প্রতি আমাদের একটি বিশেষ C.A.R.E (Cooperative for Assistance and Relief Everywhere)। এটা শুধু আমরা না, বিশ্বের সকল সৃজনশীল বাবা-মার জীবনের একটি পার্সপেক্টিভ যা আমি সব সময় সব জায়গায় লক্ষ্য করি, তারই প্রেক্ষিতে আমার এই রিফ্লেকশন।

আরেকটি বিষয় আমাকে বেশ ভাবিয়েছে মূলত সেই ভাবনাকে শেয়ার করার জন্যই মূলত আমার এ লেখা।

সকালের ব্রেকফাস্টে এসেছি, অনিশ্চিত দিন, খেলা হবে কি হবে না সেটাই আজ প্রশ্ন? বৃষ্টি পড়ছে রিমঝিমিয়ে। ক্লেকোর্টে টেনিস খেলা চলছে, বৃষ্টি হলেই সমস্যা। দেরি করতে হবে ওয়েদার ফোরকাস্ট কী বলে। এক কাপ কফি নিয়ে বসেছি। পাশের টেবিলে দুজন বেশ বয়স্ক (৮০ প্লাস হবে) স্বামী-স্ত্রী বসে তাদের ব্রেকফাস্ট শেষ করে খবরের কাগজ নিয়ে বসেছে। একের পর এক খুঁটিনাটি সব পড়ে চলেছে, মাঝেমধ্যে কমেন্ট করছে। আমি পুরো বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কিছুক্ষণ যেতে প্রশ্ন করলাম, তোমরা এখন তোমাদের অবসর সময় পার করছো, দেশ বিদেশ ঘুরছো, সময় সুযোগ হলে নাতি-পুতির সাথে সময় দিচ্ছ, তার পরও প্রতিদিন খবরের কাগজে চোখ বোলাতে ভুলছ না, যদিও এ যুগে টিভি টেলিফোন রয়েছে। তা কারণ কী?

মহিলা হেসে দিয়ে বললেন, ছোটবেলার অভ্যাস। সকালে ঘুম থেকে উঠে কফির সাথে খবরের কাগজ না থাকলে দিনের শুরুই তো তার পরিপূর্ণতা লাভ করল না। আমি বললাম, তাই বলে সবকিছুই খুব মনেযোগ সহকারে পড়তে হবে? উত্তরে দুজনই একসাথে বললেন, সময় যখন দেব তাহলে মনোযোগী না হলে তো সঠিক তথ্য জানা যাবে না।
আমি বললাম, তা কিভাবে বুঝবে যে খবরের সবকিছু সঠিক?

তারাও ভালো একটি গ্রহণযোগ্য জবাব দিলেন তারা। তাদের কথা খবরের গ্রহণযোগ্যতা বা সত্যতা না থাকলে সেটা দুবার পেপারে আসবে না, এলেও আমাদের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না।

বিষয়টি ধরেছে বেশ। এই কারণেই এরা বিশ্বের কোথায় কখন কী হচ্ছে বা ঘটছে সে বিষয়ে যেমন সচেতন, ঠিক তেমন কিউরিয়াস। আমাদের সমাজে কিন্তু বিপুলসংখ্যক বয়স্ক, অবসরপ্রাপ্ত লোক রয়েছে। তারা হয়তবা এদের মতো বিলাসিতার সাথে জীবন পার করছেন না। এখনো হয়ত পরিবারের বোঝা মাথা থেকে নামেনি। নামলেও একটু সময় পেলে বাজারে বা শহরের একটি চা-কফির দোকানে বসে আড্ডা জমাচ্ছেন। কিন্তু সেই আড্ডায় যদি সমাজের অসত্য খবর ছড়ানো হয় বা যেমন ফেসবুকে যখন যা খুশি লিখে প্রকাশ করা হয়, সত্য বা মিথ্যার যাচাই-বাছাই ছাড়া। দেখা গেল সেই খবরটা সিস্টেম থেকে বের হয়ে চা কফির আড্ডাখানা হয়ে ঘরে বাইরে ছড়িয়ে পড়ল। হয়ত বিনোদন দিল স্বল্প সময়ের জন্য, হয়ত শিক্ষণীয় হলো কিন্তু সঠিক শিক্ষণীয় হলো কি?

ইদানীং ইউটিউব চ্যানেলের অভাব নেই, অনেক ইউটিউবটার রয়েছে যারা অনেক খবরের কাগজ থেকেও বড় ধরনের একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে, অথচ মাঝে মধ্যে উদ্ভট উদ্ভট কথা ছড়াতে দ্বিধাবোধ করছে না। কারণ উদ্দেশ্য টাকা রোজগার করা এবং ফলোয়ার বাড়ানো। সবই ঠিক হতো যদি গুজব না ছড়িয়ে যেটা সত্য সেটাকে তুলে ধরত কিন্তু এই মন মানসিকতার বড্ড অভাব। কারণ কী? জাতি হিসেবে শুধু সরকারকে দায়ী করলেই কি দায়িত্ব পালন করা হবে যদি প্রতিটি নাগরিক তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সঠিক তথ্যের দায়ভার না নেয়? আমরা হয়ত বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে চড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জিততে পারব না কারণ সে ধরনের টেকনোলোজি নেই আমাদের কিন্তু সততার প্রতিযোগিতায় যদি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিই তাহলে এ বিষয়ে আমরা বিশ্ব সেরা হতে পারি।

বর্তমান বিশ্বের সর্বত্রই প্রপাগান্ডার ঢেউ বয়ে চলছে এবং প্রপাগান্ডার মাধ্যমে রাজনীতিবিদরা দিব্যি প্রভাবশালী হচ্ছে ঠিকই কিন্তু জাতি হিসেবে তারা কিন্তু তাদের অতীতের যে ইমেজ ছিল সেটা হারাতে বসেছে। কুশিক্ষার জালে না ধরা পড়ে বরং সু এবং সঠিক শিক্ষার জন্য প্রচারমুখো হওয়ার প্রবণতা গড়ে তুলতে সংবাদ প্রচারে সৎ এবং নীষ্ঠাবান হওয়া খুবই জরুরি। আসুন সবাই এমন একটি চমৎকার কাজ একসাথে শুরু করি। ফোটা ফোটা খেজুর গাছের রসে যদি সকালে একটি ঢিলে ভরে যেতে পারে তবে কেন প্রতিদিনের অল্প অল্প সত্য পারবে না একটি বাংলাদেশ গড়তে যে দেশের পরিচয় হবে তারা সবাই সত্যি কথা বলে।

লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us