পরিবেশ, জীবন ও সম্পদ ধ্বংসের দায়ভার কার?
জ্বলছে বঙ্গবাজার - ছবি : সংগ্রহ
যদি শুধু ঢাকা শহরের পরিবেশ নিয়ে কথা বলি তাহলে সময় শেষ হবে, কথা শেষ হবে না। দুজন মেয়র ঢাকার দায়িত্ব নিয়েছেন। রাস্তা, ঘাট, বস্তি এবং ডাস্টবিনের অবনতি ছাড়া কোনো উন্নয়ন হয়নি, বাড়েনি জনসাধারণেরও সচেতনতা, শুধু বেড়েছে জনসংখ্যা, হাহাকার, কু-শিক্ষা আর দুর্নীতি।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাকে বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছে, যার ফলে এখন লিখতে বসেছি। ধৈর্য বা সহ্য কিছুই বাকি নেই। দেশে শুধু চলছে দুর্নীতি। অনীতি হচ্ছে স্বাধীনভাবে অথচ সত্যকে তুলে ধরার হিম্মত, অধিকার বা সাহস কারো নেই? নাকি ইচ্ছে নেই? সব সত্য কি তাহলে পরাজিত হয়ে যাবে মিথ্যা এবং দুর্নীতির কাছে?
আমি দেশে বসবাস না করা সত্ত্বেও আমি দেশের সব বিষয়ে সচেতন কারণ সে যে আমার প্রিয় জন্মভূমি। আমি প্রথম আলোসহ দেশের গণমাধ্যমের সকল স্থরের খবরাখবর থেকে যে বিষয়গুলো দেশের জন্য মঙ্গল সেগুলোর ওপর আলোকপাত করি। অনেক তথ্য সেখান থেকে জানি এবং সেটা শেয়ার করি জানা এবং শেখার স্বার্থে। আশা করি দেশ ও জাতির কল্যাণে সেটাকে সকলে সৃজনশীল দৃষ্টিতে দেখবেন।
আজ একজন ছোট ভাই ঢাকা থেকে বাসে করে মাগুরা যাবার পথে কী ঘটেছে জানালো। ছেলেটি জানালার পাশে বসায় এক সিনিয়র ভাই তার হাতে কলার খোসা ধরিয়ে দিয়ে ফেলে দিতে বললেন।
ছেলেটি সিনিয়র ভাইকে বললেন, ভাই, রাস্তায় ফেলা কি উচিত হবে?
সিনিয়র ভাই বললেন, বাসে তো ফেলার জায়গা নেই। বাইরেই ফেলে দাও, দেশটাই তো ডাস্টবিন। ছেলেটি আমাকে নিজ থেকে বললেন, হয়তো বাসে ঝুড়ি বা ডাস্টবিন থাকলে কলার খোসাটি বাইরে ফেলতে বলতেন না।
বাংলাদেশে দূরপাল্লায় যাতায়াতের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বাস ও ট্রেন। দেশের বেশিরভাগ মানুষ এই দুই যানই ব্যবহার করে থাকেন। বাসে বা ট্রেনে যাওয়ার সময় অনেকেই শুকনো খাবার, চিপস, বিস্কুট, পানীয়সহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনেন। এছাড়া বাস বা ট্রেনে হকার, ঝালমুড়ি, বাদাম, পেয়ারা, পানীয়সহ বিভিন্ন বিক্রেতা উঠে পড়েন।
যাত্রীরা তাদের থেকে খাবার কেনার সময় তারা পলিথিন কিংবা কাগজের ঠোঙ্গা দিয়ে থাকেন। যাত্রীরা খাবার খাওয়ার পর পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকেট, ঠোঙ্গাসহ বিভিন্ন আবর্জনা বাসে বা ট্রেনের ভেতরে ফেলেন। এতে সে জায়গাগুলো অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
এছাড়া কিছু বাস ও ট্রেনে আবর্জনা ভেতরে ফেলতে নিষেধ করা হয়। ফলে আবর্জনা অনেকেই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেন। এতে রাস্তাঘাট নোংরাসহ পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। এসব যানবাহন আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন বা ঝুড়ি স্থাপন করতে পারে কিন্তু করছে কি? রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া যানবাহন কর্তৃপক্ষ আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করতে পারে, তাতে যেমন পরিচ্ছন্ন থাকবে তাদের যানবাহন তেমনি পরিবেশটাও কিছুটা হলেও দূষণমুক্ত হবে।
তারপর নাগরিকের পক্ষ থেকে সে সমস্যা এবং তার সমাধানের জন্য যদি একটি অনুরোধ কখনো প্রকাশিত হয়ও, কী করে রাষ্ট্র তখন?
ঢাকা শহরের গলি দিয়ে ঢুকতে দেখা মিলবে দুই সারিতে ছোট ছোট ঘর। নম্বরযুক্ত ও নম্বরহীন আলগা ঘর। ফাঁকে ফাঁকে টয়লেট, গোসলখানা, রান্নাঘর। কোনো গোসলখানার চারপাশ ঘেরা থাকলেও ছাদ নেই, কোনোটি একেবারেই উন্মুক্ত। তারপর দেখবেন একটি উঁচু পাটাতনের উন্মুক্ত গোসলখানায় কুয়া থেকে পানি তুলে পাশাপাশি গোসল করছে নারী ও পুরুষ। সেই গা-ধোয়া পানি গড়িয়ে আবার কুয়াতেই ফিরে যাচ্ছে। নারী-পুরুষের জন্য আলাদা কোনো বন্দোবস্ত নেই। গোসল, কাপড়-ধোয়া, থালাবাসন ধোয়া, মাছ-মাংস ধোয়া পানি— সবই একই জায়গাতেই যাচ্ছে। এভাবে খোলা জায়গায় গোসল করাটা খুব অস্বস্তিকর সবাই জানে কিন্তু উপায় কী?
বস্তিতে মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো গোসলখানা নেই। ঋতুস্রাবের সময় মেয়েরা অবর্ণনীয় অস্বস্তির মধ্যদিয়ে সময় পার করে। মাসিকের ব্যবহৃত কাপড় তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কারের সুযোগ নেই। ব্যবহৃত কাপড় জমিয়ে রেখে সন্ধ্যার পর গোসলখানা নিরিবিলি হলে পরিষ্কার করে অনেকে। আরেক শঙ্কা, গোসলের দৃশ্য কেউ ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় কি-না।
ঢাকায় বস্তিতে থাকে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লোকসংখ্যা দুই কোটি মতো হবে! জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ গ্রাম থেকে নগরে আসছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বস্তির সংখ্যা। অবকাঠামোগত দুর্বলতা, যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার অভাবে বস্তিগুলো নারী ও শিশু বাসিন্দাদের জন্য কঠিন ও বিপজ্জ্বনক হয়ে উঠছে। ন্যূনতম মৌলিক সেবা পাওয়া কঠিন। যেমন নিরাপদ গোসলখানা, পায়খানা ইত্যাদি।
মাসিকের সময় অস্বস্তি আরো বেশি। মাসিকের সময় অনেকেই ন্যাকড়া ব্যবহার করে। দিনের বেলা গোসলখানায় পুরুষদের আনাগোনা বেশি। আর অপেক্ষমাণ সারিও লম্বা। এ কারণে মাসিকের সময় তাৎক্ষণিকভাবে ন্যাকড়া পরিষ্কার করতে পারে না। ঘরের এক কোণায় জমিয়ে রাখে। সন্ধ্যার পর গোসলখানা নিরিবিলি থাকে, তখন এসে ন্যাকড়া পরিষ্কার করে এবং সেটা ঘরের ভেতর শুকাতে দেয়, অনেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে।
এসব ঘটনা জানার পর রাষ্ট্র কী করবে?
জাতির এই চরম দুর্দিনে যখন দরকার সৃজনশীল নাগরিকদের যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে দেশের পরিকাঠামো নির্মাণে, ঠিক তেমন একটি সময় কী হচ্ছে? বাংলাদেশে আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারি, হুন্ডি, মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি ইত্যাদি।
আর কত সহ্য করতে হবে?
দিন যাচ্ছে আর নতুন নতুন ভিলকিবাজির উদয় হচ্ছে। এতদিন ধরে শুনে আসছি দেশের মানুষ বিদেশে টাকা পাচার করেছে। সরকার মাঝে মধ্যে জনগণকে আশ্বাস দিচ্ছে যারা বিদেশে টাকা পাচার করছে তাদের টাকা দেশে ফেরত আনা হবে। টাকা এবং পাচারকারীর কেউ ফিরে আসেনি আজ অবধি। এবার শুনলাম নতুন কাহিনী সেটা হচ্ছে ভারত থেকে টাকা পাচার করে বাংলাদেশে ইনভেস্ট করছে কিছু লোক তার মধ্যে রয়েছে বুয়েটের মেধাবী প্রকৌশলী।
বাহ, কী চমৎকার! মেহনতি মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এসব রত্নদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়েছে, দেশকে সোনার বাংলা করতে সাহায্য করবে অথচ এসব কুলাঙ্গার আমাদের নিচে বাঁশ এবং হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।
বাংলাদেশ অতীতে পারেনি ফিরিয়ে আনতে পাচার করা টাকা। তবে ভারত এখন নতুন সুযোগ পেল, দেশের যে রেমিট্যান্সগুলো জমা হয়েছে সেগুলো লুটপাট করে নেবার।
ছোটবেলা থেকেই দেখেছি এবং শুনেছি রাতের আঁধারে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা সবকিছু বিক্রি করে টাকা, সোনা সব ভারতে পাচার করে, এসব পাচার করেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। এবার ভারত সরকারের হাতে হাত মিলিয়ে দেশের সব লুট করার ফন্দি।
ভাবছি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের দায়িত্ব কর্তব্যের কথা! এদের না বেতন দেয়া হয় দেশের সীমান্ত রক্ষার্থে? এদের না দেশের মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব? যত দোষ শুধু পুলিশের, এ যাবত ধরে শুনে আসছি, এখন দেখছি প্রতিরক্ষা বাহিনীও এ কাজে লেগেছে। দেশ তো অতিসত্বর ভারতের দায়িত্বে চলে যাবে যদি এভাবে চলতে থাকে!
দিন মজুরের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে কুলাঙ্গারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে আজ তারাই দেশটাকে শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছে? অনেকে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার হয়ে চাকরি নিয়েছে বিভিন্ন প্রশাসনে, কেউ হয়েছে কূটনৈতিক এবং শেষে যার যা খুশি তাই করছে। এসব শিক্ষা প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হোক, কী হবে এদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে? একের পর এক এরা দেশকে ধ্বংস করে চলছে।
আমরা কি এই জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম? কই লাখ লাখ মুসলমান ভারতে রয়েছে তারাও তো সংখ্যালঘু, কেউ তো ভারত থেকে সম্পদ এনে বাংলাদেশে মজুত করছে না? অথচ সব সময় আমাদের দেশের হিন্দুরা কিছু হলেই ভারতে সব নিয়ে দৌড় দেয়, কিন্তু কেন? এ দেশটি তো তাদেরও? সরকার কি সত্যিই অচল, অধম এবং অপার হয়ে গেছে যে ভারত ছাড়া অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে না?
দেশ চালাতে না পারলে ছেড়ে দিন। কিন্তু দেশকে ভারতের কাছে ন্যস্ত করবেন না দয়া করে।
এটা গেল, এখন আসি নিরাপত্তা নিয়ে। ট্রাফিক দুর্ঘটনা, আগুনে পুড়ে মরা চলছে সারা দেশে। এ বিষয়টিও কম যন্ত্রণার নয়। থাকি সুইডেনে, এখানেও দুর্ঘটনা ঘটে তারপরও সচেতন জাতি হিসেবে এদের একটি নিজ দায়িত্ব রয়েছে। তারপর সবাই ট্যাক্স পে করে রাষ্ট্রকে, যার ফলে রাষ্ট্রের ফাঁকি দেবার কোনো সুযোগ নেই। যাইহোক বিষয়গুলো আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে অতীতের চেয়ে বেশি। আজ হাঁটতে বেরিয়েছি বন্ধু টোমি লিন্ডকিভিস্তের সাথে। তার সাথে সম্পর্ক শুধু প্রতিবেশী হিসেবেই নয়; তার ছেলে এবং আমার মেয়ে সমবয়সী। তারা নার্সারি থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত একই সাথে লেখাপড়া করেছে। টোমি স্টকহোম ফায়ার ব্রিগেডে এবং একটি ইউনিটের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত। সময় এবং সুযোগ হলে মাঝে মধ্যে হাঁটতে পথে নানা বিষয়ের ওপর তার সাথে আলোচনা করি।
আজ তার ইউনিটের কাজ কী জিজ্ঞেস করলাম। যেমন রাতের ডিউটিতে তারা কী করে ইত্যাদি। উত্তরে বললো, নিরিবিলি সময়ে নানা বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ চলে নতুন চিন্তাচেতনা নিয়ে। যেমন গত দুই দিন আগে ড্রাইভিংয়ের যন্ত্রপাতি সব ঠিক আছে কিনা তা চেক করার জন্য সন্ধ্যা ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তারা স্টকহোম সিটি হলের সামনে (সিটি হলে বার্ষিক নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠান এবং নৈশ ভোজশালা আয়োজন করা হয়) ড্রাইভিং করেছে। এরপরে রাতের ডিনার সেরে টিম বিল্ডিংয়ের ওপর কাজ করেছে।
আমি বললাম, সে আবার কী? উত্তরে টোমি বলল, যখন অন্যের বিপদে নিজেদের জীবন বাজি রেখে কাজ করতে হয় তখন পরস্পর পরস্পরের ওপর যাতে বিশ্বাস না হারায় তার জন্যই এই টিম বিল্ডিং। তাছাড়া এক স্টেশনে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাদের থেকে সে বিষয়ের ওপর জানা এবং শেখা বা যদি কিছু জানানোর থাকে তাও জানানো হয়। আবার প্রতিদিনই রাস্তার দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে নানা ধরনের বিপদে তার টিম কাজ করে। শরীর ঠিক রাখার জন্য সব সময় শরীরচর্চা ইত্যাদি করে।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম অ্যালার্ম বাজার সাথে সাথে রেডি হয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে কত সময় লাগে? সে বলল, নির্ভর করে দূরত্বের ওপর। তবে সব মিলে সর্বোপরি সাত মিনিট, এর মধ্যেই আমরা গন্তব্য স্থলে পৌঁছে থাকি। নানা কথা বলতে বলতে গতকাল সন্ধ্যার একটি ঘটনার কথা তুলে ধরলো।
শীতের সময় প্রায়ই শোনা যায় অনেকে লেকের মাঝে হাঁটতে গিয়ে পানিতে ডুবে যায়। বেশ কয়েক দিন ধরে তুষারপাত হচ্ছে সুইডেনে। বাংলাদেশের সেই আষাঢ় শ্রাবণ মাসের মতো ঝরছে, তবে বৃষ্টি না; তুষার।
তুষার যখন পড়ে তখন তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রির মতো থাকে, তুষার পড়া বন্ধ হলে সাধারণত তাপমাত্রা উঠানামা করে। বর্তমানে সুইডেনের তাপমাত্রা মাইনাসে থাকায় পুরো দেশ বরফে ঢাকা পড়েছে। গাছে কোনো পাতা নেই তবে তুষারে ঢেকেছে পুরো পরিবেশকে। যার ফলে অন্ধকারের চেয়ে কিছুটা আলোময় পরিবেশ বাইরে।
এমন সুন্দর পরিবেশে টিন এজের কিছু ছেলে-মেয়ে সন্ধ্যায় বাইরে তুষারে খেলাধুলা করতে করতে হঠাৎ বাল্টিক সাগরে পা দেয়। তারা মনে করেছে সাগর জমে গেছে। জমেছে ঠিকই তবে পুরোপুরি শক্ত হয়নি। তারপর তুষারে ঢাকা পড়ার কারণে বোঝার উপায় নেই পানির উপরের বরফ কতটা শক্ত। এদের মধ্যে একটি ছেলে সাগরের পানিতে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ১১২ ইমারজেন্সিতে ছেলেটির খেলার সাথীরা ফোন করে। ঘটনাটি ঘটেছে টোমির রেঞ্জের মাঝে। সে তখন তার টিম নিয়ে এসে ছেলেটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে দিয়ে যায়।
বাংলাদেশের ফায়ার ব্রিগেডের দৈনন্দিন কাজের ওপর কিছুদিন আগে একটি রিপোর্ট নজরে পড়েছিল যেমন তারা খবর দেয়ার আধা ঘণ্টা-এক ঘণ্টা পরে আসে। এসে ছাইভস্মের মাঝে পানি ঢালে। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরও আজ অবধি প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। যেসব উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নেই সেখানে আগুন লাগলে পার্শ্ববর্তী উপজেলার ফায়ার স্টেশনে খবর দিয়ে দমকল বাহিনী আনতে হয়।
তবে অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করে প্রতিটি বিভাগকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জেনেছি। দেশ এবং দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ফায়ার সার্ভিসকে দ্রুত আরও আধুনিকায়ন করা দরকার। বহুতল ভবনের অগ্নিনির্বাপণের জন্য মই থেকে শুরু করে নানা ধরণের যন্ত্রপাতি থাকা দরকার। শুধু আশ্বাস থাকলে হবে না বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সূত্রে যতটুকু জেনেছি, অগ্নিকাণ্ডের সময় সব জায়গায় পানি সহজে পাওয়া যায় না। তাই তারা ওয়াসাকে বিশেষ কিছু স্থানে হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপনের তাগিদ দিয়েছে; কিন্তু আজ পর্যন্ত হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপিত হয়নি।
উন্নত বিশ্ব যেমন সুইডেনে অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার মিক্সড যন্ত্রটি ব্যবহার করে, যা দিয়ে অল্প পানি ব্যয়েই অগ্নিনির্বাপণ সম্ভব। এসব যন্ত্র বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসে নেই। কবে সংযোজন হবে তা এখনো জানা যায়নি।
ফায়ার স্টেশনগুলোতে জনবলেরও ঘাটতি আছে। নতুন স্টেশন চালু হলে প্রশিক্ষিত দমকল কর্মীর ঘাটতি আরও প্রকট হবে। তারপরও প্রশ্ন আছে কর্মরত ফায়ারম্যানদের অনেকের শারীরিক যোগ্যতা নিয়ে। যাইহোক উপরের বর্ণনায় এটাই পরিষ্কার, বাংলাদেশ ফায়ার ব্রিগেডে পর্যাপ্ত পরিমাণ মানসম্মত যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। আবার যন্ত্রপাতির ঠিকমত যত্ন না নেবার কারণে অনেক যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
মনটা বেশ খারাপ লাগছে যখন ভাবছি বঙ্গবাজারকে নিয়ে! এখানেও দেশের গণমাধ্যম নানাভাবে নানা তথ্য তুলে ধরেছেন যেমন, সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা মার্কেটটি যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তাকি কেউ জানত না? প্রশ্নটি করতেই নাম না প্রকাশের শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগের দুজন কর্মকর্তাসহ আরো কিছু লোকের থেকে জানতে পারলাম, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু দোকান মালিক সমিতির নেতাদের বাধার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
নতুন মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের ফাইলে অনুমোদন দিয়েছেন। এর বাইরে আর তেমন কিছুই হয়নি।
সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্র বলছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাশালী কিছু ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলের নেতারা মিলে মিশে এই কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রণ করতেন। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে ব্যবসায়ী নেতাদের আধিপত্য কমে যাবে, তাই তারা সেখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করতে দেননি।
উল্লেখ্য, বঙ্গবাজার মার্কেটে এর আগেও কমপক্ষে তিনবার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুরো বিপণিবিতান পুড়ে যায়। এ ছাড়া ২০১৮ সালেও একবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
দোকান মালিক সমিতির কিছু নেতার ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধা নেয়ার মানসিকতার কারণে হাজার পরিবার আজ পথে বসলো। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ঝুঁকিপূর্ণ, এটি বিবেচনায় নিয়েই সেখানে আধুনিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু যারা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াল, তারা সবাই কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত। কাজটি তারা করেছিল শুধু নিজেদের স্বার্থে, টাকার লোভে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র নিজে একজন ব্যারিস্টার। তিনি কী কারণে এতদিন আইনিভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করেননি। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বঙ্গবাজারে অবৈধভাবে ব্যবসা করতে যাওয়ার ফলাফল কী, সেটি সবাই দেখলো। বহু মানুষ নিঃস্ব হলো, হাজার কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে গেল। পুরান ঢাকায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে জীবন ও সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে।
জবাবদিহিতা নেই ঠিকই তবে অতি সত্বর সেটা দেবার জন্য প্রস্তুত হবার সময় এসেছে। কারণ সীমা লঙ্ঘন করার হিম্মত কাউকে দেয়া হয়নি, মাইন্ড ইট। বাংলাদেশ কারো বাবার ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের ভালোবাসা, তাকে রক্ষা করতে যেকোনো সময় জীবন দিতে প্রস্তুত। আমরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি, কথা বিক্রি করে নয়, দরকারে নতুন করে আবারও রক্ত দেবো তবু দেশকে রসাতলে যেতে দেবোনা, ইনশাআল্লাহ।
লেখক : সাবেক পরিচালক,ফাইজার, সুইডেন থেকে