নূপুরের ঘটনা যে বার্তা দেয়

আবু সাঈদ | Jun 30, 2022 05:54 pm
নূপুর শর্মা

নূপুর শর্মা - ছবি : সংগ্রহ

 

ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপি টানা দ্বিতীয়বারের মতো দেশ শাসন করছে। এটা তাদের ‘জনপ্রিয়তা’ ভেবে কারো বিভ্রম ঘটতে পারে। বাস্তবতা থেকে যা যোজন যোজন দূরে। বিজেপীর প্রথমবার ক্ষমতায় আসা জনতার সমর্থনে হলেও পরেরবার আসা নিয়ে রয়েছে বিশ্লেষকদের নানা অভিমত। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিজেপি আরো কিছুকাল ক্ষমতায় থাকতে চায়। তবে নানা অদক্ষতায় তাদের আশার গুড়ে বালি পড়েছে। চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ, অকাসে ব্যর্থতা, কোভিড প্রতিবিধানে দুর্বলতা, কূটনৈতিক অদক্ষতা ও বন্ধুপ্রতীম নানা দেশের সাথে টানাপোড়েন তাদের নেতৃত্বের প্রতি তুমুল অনাস্থা সৃষ্টি করেছে। যা প্রভাবিত করতে পারে আগামীর নির্বাচনকে। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের আনুকূল্যের ভীষণ প্রয়োজন বোধ করছে বিজেপির নেতৃবৃন্দ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হিন্দুদের আনুকূল্য লাভের উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর পথেই হাঁটছে বিজেপি সরকার।

বিভিন্ন প্রদেশে যার বহির্প্রকাশ ইতোমধ্যেই ঘটতে শুরু করেছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক আসামের দাঙ্গাকেও এর অংশ মনে করেন। ঠুনকো অজুহাতে মুসলিম দাঈদের গ্রেফতারীর জন্যও হিন্দু আনুকূল্য লাভের আকাঙ্খাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। ভারতের প্রখ্যাত দাঈ মাওলানা কালীম সিদ্দিকির গ্রেফতারি তাদের দাবিকে আরো শক্তিশালী করছে।

ধারণা করা হচ্ছে, জনমনে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য পরিকল্পিতভাবেই হাঁটছে বিজেপি সরকার। 'ভারত কেবল হিন্দুদের, মুসলিমরা দেশ ছাড়ো'-এর মতো সাম্প্রদায়িক গান সে সন্দেহকে আরো ঘনীভূত করছে। বিভিন্ন সিনেমা-সিরিয়ালে মুসলিমদের চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। গেলানো হচ্ছে, মুসলিমরা রক্তপিয়াসী। ধন-সম্পদ লুণ্ঠন আর নারী ভোগ ছাড়া তারা কিছু বুঝে না।

এপর্যন্ত সবকিছুই নির্বিঘ্নে করা গিয়েছিল। মুসলিম বিশ্ব তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছিল। বিজেপি তাতে বেপরোয়া হয়ে উঠে। ক্ষমতার আকর্ষণে আরো লাগামহীন হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা মুসলিমদের প্রাণের স্পন্দন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি করে বসে। আম্মাজান হজরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহাকে নিয়েও করে অশালীন মন্তব্য। শুরুতে স্থানীয় মুসলিমরা প্রতিবাদ জানালেও বিজেপি সরকার তা আমলে নেয়নি। উল্টা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে প্রতিবাদকারীদের বাড়িঘর। তবে ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট ও অল নিউজের প্রতিষ্ঠাতা জুবায়ের খান যখন বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেলেন, পুরো মুসলিম বিশ্ব ফুঁসে উঠে। তীব্র নিন্দা জানায় বিভিন্ন মুসলিম দেশ।

তবে সবচেয়ে চাপের মুখে পড়ে কাতার, আমিরাত ও সৌদি আরবের প্রতিবাদে। মূলত ভারতের অর্থনীতি টিকে আছে এই তিনদেশের অবদানে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও জানিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। ভারতীয় বাণিজ্যের তারাও অন্যতম অংশীদার। মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়ীরা যখন ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিলো, বিজেপি সরকার বিপুল চাপের মুখে পড়ে। একদিকে অর্থনীতি টেকানোর জন্য খুশি রাখতে হয় আরব প্রভুদের। অন্যদিকে ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য দাবি মানতে হয় উগ্রবাদী হিন্দুদের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সাময়িকভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় নূপুর শর্মাকে। আরব দেশগুলোর ক্রমাগত চাপের প্রেক্ষাপটে নূপুরকেও তলব করা হয় দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে।

নূপুরের ঘটনা একদিকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মুসলিমদের প্রাণাধিক ভালোবাসা প্রমাণ করে। অপরদিকে এদিকেও ইঙ্গিত করে, আজো যদি মুসলিম উম্মাহ ‘এক দেহ এক প্রাণ’ রূপে ঐক্যবদ্ধ হয়, পৃথিবী তাদের দিকে চোখ তুলবার সাহস পাবে না। তাই সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। মুসলিম উম্মাহের স্বার্থে শক্তিশালী বলয় গড়ে তোলার। উম্মাহর স্বার্থে মুসলিম নেতৃবৃন্দ কি এক হতে পারবেন?


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us