বিশ্বাস

রহমান মৃধা | May 30, 2022 01:32 pm
বিশ্বাস

বিশ্বাস - ছবি : সংগ্রহ

 

আমি নিজে অনেকবার পরাজিত হয়েছি, ঠকেছি, অনেকে পরাজিত হয়েছে তা দেখেছি। এমনকি আমার অর্থ অপচয় করে অন্যেরা পরাজিত হয়েছে, তাও দেখেছি। অথচ শুনেছি 'failure is the pillar of success.' কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় 'failure is the pillar of further failure' -এর বেশি কিছু দেখিনি। পরাজয়ের ওপর যেহেতু অনেক অভিজ্ঞতা আমার তাই পরাজয়কে নিয়েই চলছে আমার জীবন। হতাশ করে দিলাম না তো এই অপ্রিয় সত্যটাকে তুলে ধরে! হতাশার দেখছেন বা শুনছেন কী? এতো সবে শুরু, যদি সাথে থাকেন শতভাগ নিশ্চিত আপনি হতাশ হবেন, যখন পুরো লিখাটির শেষ পর্যন্ত পড়বেন। বরং পুরো লিখাটি না পড়ে কেটে পড়াই মঙ্গল।

যাইহোক হঠাৎ খবর পেলাম, নাম না বলি, একজন প্রবাসী বাংলাদেশী আমেরিকা বেড়াতে গিয়ে এক বাঙালি ছেলের প্রেমে পড়েছে। ভদ্রমহিলার আগে বিয়ে হয়েছিল, সম্পর্ক টেকেনি। এক মেয়ে সন্তানের মা, তখন সুইডেনে থাকেন। বাঙালি ছেলেটি যে আমেরিকা থাকেন। তিনি দেশে থাকতে বিয়ে করেছিলেন তবে বিয়ে টেকেনি। তিনিও এক মেয়ে সন্তানের বাবা। তবে মেয়ের ভরণপোষণ কিছুই বহন করেন না, এম কি দেখা করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। শেষে উচ্চ ডিগ্রির সুবাদে আমেরিকা পাড়ি দেন এবং পড়ালেখার সাথে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এক আমেরিকানকে বিয়ে করেন। আমেরিকান মেয়েকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে না পারায় পারমিশন হয়নি। পরে চাকরির মাধ্যমে চেষ্টা তাতেও ভালো ফল হয়নি, দেশে ফেরা ছাড়া উপায় নেই। ঠিক তেমন একটি সময় সুইডিশপ্রবাসী বাংলাদেশীর সাথে দেখা আমেরিকা ভ্রমণে। আর দেখা থেকে প্রেম, পরে হুট করে বিয়ে।

এতক্ষণ যা জানালাম আমি নিজেও কিন্তু কিছুই জানতাম না আগে। তবে পরাজয় যখন আমার জীবনে এসে নক করেছিল, তখন এসব কাহিনী জানতে পারি। ভদ্রলোক সরাসরি স্টকহোমে এসেছেন। তার প্লান, বিয়ের কাজ শেষ করে তবে তিনি বাংলাদেশে যাবেন। বউ সুইডেনে থাকবেন, এসময়ে তিনি দেশে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চেষ্টা করবেন।
ভদ্রলোক দেশের নাম করা পরিবারের একমাত্র ছেলে। আমার সাথে ভদ্রলোকের স্টকহোমে দেখা, খুবই ভদ্র, নম্র প্রকৃতির ছেলে। বললেন, দেশে গিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেবেন তরুণ মেধাবীদের। ঘটনাটি বর্ণনা করছি এখন, কিন্তু ২৫ বছর আগের কথা। বাংলাদেশ প্রযুক্তির ওপর স্বপ্ন দেখতেও শেখেনি তখন। তবে মুষ্টিমেয় কিছু ছেলে যারা ভদ্রলোকের মতো পাশ্চাত্যে পড়ালেখার জন্য এসেছে, তাদের ধ্যানে এবং জ্ঞানে ঢুকেছে প্রযুক্তি এবং তারা স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে তখন থেকে।

যাইহোক আমি ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, এ প্রজেক্ট দাঁড় করানো থেকে রান করা পর্যন্ত যে বাজেটের দরকার তা কিভাবে যোগাড় করবেন? উত্তরে বললেন, পরিবারের প্রভাব দেশে রয়েছে। তাছাড়া বাবা দেশের প্রভাবশালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। টাকা ধার পেতে সমস্যা হবে না। তবে ৫০ ভাগ টাকা নিজের থাকলে সুবিধা হতো প্রজেক্টি দাঁড় করাতে।
আমি আবার দেশের জন্য যদি কেউ ভালো কিছু করতে চায়, তাকে না করতে পারি না। বেশ কিছু টাকা ব্যংকে পড়ে আছে, ভাবলাম একটি নতুন প্রজন্ম সুদূর আমেরিকা থেকে স্বপ্ন দেখেছে বাংলাদেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চালু করবে, শত শত শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। তাছাড়া ছেলেটিকে পছন্দ হয়েছে, বিশ্বাস করে বড় একটি টাকার অঙ্ক সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে তাকে পাঠিয়ে দিলাম। পরে শুনেছি যে সে তৎকালীন সময়ে ২০টি কম্পিউটার কিনে ক্লাস শুরু করেছিলেন এবং সাথে স্টকশেয়ারের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ছেলের পতনের খবর জানতে পেরে বাবা কম্পিউটারগুলো বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা শোধ করেন। আমাকে ব্যাংকের সেই চেয়ারম্যান একটি চিঠি লিখেছিলেন, যার সারমর্ম ছিল- না জেনে শুনে এতগুলো টাকা ডকুমেন্ট ছাড়া দেয়া ঠিক হয়নি।

যাইহোক আমি মূলত বিশ্বাস করে দিয়েছিলাম। সেই ছেলের বিয়েও টেকেনি, যদিও তার দুটি সন্তান রয়েছে, তারা এর কিছুই জানে না। মজার ব্যাপার হলো, আমি আজো সেই একই ভুল করে চলছি কোনো ডকুমেন্ট ছাড়াই মানুষকে সাহায্য করি। কিন্তু এখনও কেউ ফিরে আসেনি এবং বলেনি যে এই নাও তোমার ঋণ শোধ করে গেলাম। সবাই বলবেন, নিশ্চয় আমি বোকা। কথা সত্য, ভালোবাসার কাছে আমি বোকা। তবে আরো মজার ব্যাপার আমার বাংলাদেশে বেশ কিছু জমিও আছে এবং সেগুলোর ডকুমেন্ট আছে সত্ত্বেও আমার তেমন কোনো অধিকার নেই। যদিও ডকুমেন্ট আছে।

কারণ কী জানেন? ভালোবাসার জন্য দলিল বা ডকুমেন্ট দরকার হয় না। বিশ্বাসই যথেষ্ট। আমার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে সেটা হলো, ভালোবাসাটি শুধু আমার পক্ষ থেকে ছিল, ওদের পক্ষ থেকে ছিল না বা থাকবেও না। তার পরও আমি দূর হতে আমার মতো করে ভালোবেসে যাবো। আগেই বলেছিলাম, পুরো লিখাটি পড়ার দরকার নেই, মন খারাপ হবে, রাগ হবে এমনকি আমাকে গালি দিতে ইচ্ছে হবে!
তবে পড়ে যখন ফেলেছেন তাহলে কিছু একটা ভাবনা মাথায় ঢুকাতে চেষ্টা করি; যদি ডেস্টিনিকে বিশ্বাস করেন তবে কী বুঝলেন এ ঘটনা থেকে!

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us