শিরিন আবু আকলাহ‘র মৃ্ত্যুতে ফিলিস্তিনের নতুন ইন্তিফাদা!
শিরিন আবু আকলাহ - ছবি : সংগৃহীত
একজন শিরিন আবু আকলাহ। লক্ষ্য ফিলিস্তিনির কণ্ঠস্বর হয়ে কথা বলেছিলেন আলজাজিরার পর্দায়। ফেসিস্ট ইসরাইলি সেনার একটি গুলিতেই নিথর হলে পড়ে থাকে জেনিনের রাস্তায়। ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয় মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে যুদ্ধ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত শিরিনকে।
তার মৃত্যু নাড়া দিয়েছে গোটা ফিলিস্তিনবাসিকে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তার মৃত্যু পর দিন ১১ মে পশ্চিম তীরের রাস্তায় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে। আজও তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে জড়ো হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ। যেখানে ধর্মের কোনো ভেদাভেদ রাখেনি। তিনি যেভাবে সাধারণ মানুষের কথা বলেছেন, কথা বলেছেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অধিকার নিয়ে তা ফিরে পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসায়।
তার চলে যাওয়া হয়ত বড় শূন্যতা তৈরি করবে আলজাজিরা সংবাদ নেটওয়ার্কে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পরে যে এমন সাহস করে কথা বলার মানুষ খুব কমই হবে। কিন্তু যেভাবে এ গণমাধ্যমটি শিরিনের মৃত্যুর ঘটনা কভার করছে তাতে সেই শূন্যতার আশঙ্কা উবে গেছে। গত তিন দিন ধরে আলজাজিরার পর্দাজুড়ে স্থান পেয়েছে শিরিনের আপডেট।
সংবাদ পাঠকরা ভরাট কণ্ঠে যখন বলছে, ‘আওয়ার ফ্রেন্ডস অ্যান্ড কলিগ শিরিন আবু আকলাহ’। এটি আলাদা আবেদন তৈরি করছে। শিরিন যে ব্যুরোতে কাজ করতেন সেই অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লার স্থানীয় অফিসে তৈরি হয়েছে আবেগঘন পরিবেশ। শোকার্ত সহকর্মীরা বর্ণনা করছেন তার জীবনের খুঁটিনাটি। তার চলে যাওয়ায় শোকার্ত কর্মীরা শিরিনের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করবে। শিরিন একজন মাঠের সাংবাদিক, তার প্রভাব অধস্তন কর্মীদের মধ্যে প্রবলভাবে ফেলবে। তার একজন সহকর্মী বলছিলেন, শিরিন এ বছরই ‘নিউ মিডিয়ার’ উপর বিশেষে ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করলেন। এটাই প্রমাণ করে, তিনি একজন জাত সাংবাদিক।
শুধু আলজাজিরার নেটওয়ার্কেই নয়, তার প্রভাব তৈরি হয়েছে পুরো ফিলিস্তিনি জাতির মধ্যে। যেভাবে সাধারণ মানুষ তার শেষকৃত্যে যোগ দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তাতে ইসরাইলের কর্তৃপক্ষ নতুন ইন্তিফিদার আশঙ্কা করছে বলেই মনে হচ্ছে।
আজ পশ্চিম তীরের গির্জায় যখন তার কফিন নেয়া হচ্ছিল, তখন হাজার হাজার মানুষ মিছিল করছিল। এমন শোকার্ত মুহূর্তেও ইসরাইলের পুলিশ নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে। শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে নিবৃত করাবার চেষ্টা করেছে। গণহারে লাঠিপেটা করেছে। তবুও শত বাধা উপেক্ষা করে গির্জায় দেখা গেছে অনেক হিজাব পরা নরীকে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ যেকোনো মূল্যেই এই পদযাত্রায় যতটা সম্ভব নিবৃত করবার চেষ্টা করছে। তারা হয়তো আশঙ্কা করছে, এভাবে পদযাত্রা বাড়তে থাকলে তা নিশ্চিত করেই বড় বিক্ষোভ তৈরি হবে। যা মোকাবিলা করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ তারা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়েছে।
সারা বিশ্বেই শিরিনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিচারের দাবি উঠছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের নাগরিক হত্যার বিচার না চাইলে সরকার অভ্যান্তরিন ভাবেই চাপের মুখে পড়তে পাড়বে। ইসরাইল সরকার তদন্ত করার কথা বললেও সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। জাতিসঙ্ঘের অধীনে স্বাধীন তদন্ত কমিটির দাবি জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্টদূত।
প্রথম দিকে পশ্চিমা মিডিয়া তার মৃত্যুর ঘটনাকে কিছুটা আড়াল করবার বা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলেও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের চাপে সেটি শেষ পর্যন্ত উপেক্ষা করতে পারেনি। হয়তো সময়ের সাথে সাথে বিচারের দাবি আরও শক্তিশালি হবে। ৫১ বছর বয়সে শিরিন থেমে গেলেও তার সাহসী ও শক্তিশালী কণ্ঠ কতটা প্রভাব বিস্তার করে সেটিই দেখার বিষয়।