আল্লাহর নির্দেশনা শুধু কুরআনেই
আল্লাহর নির্দেশনা শুধু কুরআনেই - ছবি : সংগৃহীত
সোশ্যাল মিডিয়া বা গণমাধ্যমগুলো জনগণের মত প্রকাশের জন্য এক চমৎকার প্লাটফর্ম যেখানে যার যা খুশি সে তা করতে পারছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। যেহেতু গণমাধ্যমের একটি বড় আকারের ডিমান্ড রয়েছে সেক্ষেত্রে সবাই এর ব্যবহার করছে। এখন এটা ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকে ভুল তথ্যসহ গুজব বা প্রপাগান্ডা ছড়াতে দ্বিধাবোধ করছে না।
আমি সুইডেনের পেপারগুলোতে কুরআন পোড়ানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে একটি আর্টিকেল লিখে তাদের কাছে দিয়েছিলাম কিন্তু কেউই প্রকাশ করেনি শুধুমাত্র আমার জীবনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটতে পারে ভেবে। কারণ ইদানীং বিশ্বের অনেকেই ডেসপারেটলি নিজেকে ভাইরাল করার জন্য বা সমাজের একটি দলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবার জন্য অনেক কিছুই করছে। বাংলাদেশও কিন্তু তার মধ্যে রয়েছে। যাইহোক সব কিছুর পরিবর্তন হচ্ছে সেখানে মত দ্বিমতেরও উপরও আলোচনা জোরালো হবার কথা কিন্তু বাংলাদেশের মত অনেক দেশে বাকস্বাধীনতাকে বিনাশ করা হচ্ছে / হয়েছে যার ফলে গত দুই সপ্তাহ আগে ইলন মাস্ক টুইটার কিনেছেন।
এ খবরে গোটা বিশ্বে সাড়া পড়ে যায়। মাস্ক বলেন, টুইটার একটি সম্ভাবনাময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে বাকস্বাধীনতা। বাকস্বাধীনতা হরণ করার অর্থ গণতন্ত্রকে হত্যা করা এবং গণতন্ত্র হত্যা করার অর্থ মানবজাতির অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। টুইটার হচ্ছে এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে মানবতা ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক করা হবে। বিশ্বে যে জিনিসটির বেশি অভাব সেটা হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু সুইডেনে স্ট্রাম কুর্স নামের কট্টরপন্থি পার্টি মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন পুড়িয়ে দিচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে এ পর্যন্ত প্রায় ২৬ জন পুলিশ ও ১৪ জন জনসাধারণ আহত হয়েছে। এছাড়া ২০টির বেশি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
স্ট্রাম কুর্স পার্টির নেতা রাসমুস পালুদান কোরআন পুড়িয়ে ফেলার পর সুইডেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরআন পুড়িয়ে দেওয়া ছবি পোস্ট করে রাসমুস পালুদান ঘোষণা দিয়েছে সে আরও কুরআন পোড়াবে এ সপ্তাহের শেষের দিকে। তবে পুলিশ তাকে পারমিশন দেয়নি, পরে শুনেছি সে সুইডেনের উপসালা শহরে গিয়ে মসজিদের সামনে কুরআন পুড়ানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পালিয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এক ভিডিওতে রাসমুস বলেছে, ইসলাম এবং মুসলিমরা হচ্ছে শত্রু। এই পৃথিবীতে যদি একজন মুসলিমও না থাকে তাহলে খুব ভালো হবে, এবং সে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাব। জানিনে কী তার সেই লক্ষ!
ডেনমার্কে বর্ণবাদী ভাষণের কারণে ২০১৯ সালে ১৪ দিনের জেল হয় রাসমুসের। স্ট্রাম কুর্স কট্টরপন্থি দল ডেনমার্কের ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে একটি আসনেও জয় পায়নি। বর্তমানে সে আগামী ২০২৩ সালের জুনে নির্বাচনে ফের লড়বে বলে পরিকল্পনা করছে। এতে এটাই প্রমানিত যে রাসমুস তার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে এধরণের অশ্লিল এবং কুরুচি সম্পন্ন কাজ করছে যা সমাজে কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। তবে সুইডেনের পলিটিক্যাল পার্টিগুলো বিষয়টি নানা ভাবে দেখছে!
যেমন রাষ্ট্রের সংবিধানে লিখা রেখেছে জনগণের বাক-স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের কথা, গণতন্ত্রের কথা, ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ সত্ত্বেও রাষ্ট্র চলছে তার নিজের গতিতে। লেখা থাকা সত্ত্বেও সেটা পালন করা হচ্ছে না, কারণ জনগণের ভোটে সরকার গঠন করা হয়নি, হলে অবশ্যই জবাবদিহিতা থাকত। একই ভাবে ধর্মে পরিষ্কার বলা হয়েছে অন্যায় করা মহাপাপ, দুর্নীতি করা যাবে না, মিথ্যাকথা বলা যাবে না অথচ সবই দেধারছে করা হচ্ছে। তার মানে সংবিধান এবং ধর্মগ্রন্থ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো মেনে কাজ করা হচ্ছে না!
এখন আমি যে বিষয়গুলো হাইলাইট করতে চাই তা হলো আমরা যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে কুরআনের সঠিক অর্থ জেনে সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। আমি যেমন বাংলাদেশ ছেড়ে সুইডেনে এসে এদের ভাষা শিখে এদের সমস্ত নিয়মকানুন মেনে অ্যাডজাস্ট করে চলছি ঠিক তেমনি ভাবে মুসলমান হিসেবে চলতে হলে কোন মৌলভী কী বলল বা করল তার উপর নির্ভর করে চললে তো প্রকৃত ইসলামের নির্দেশনা জানা বা বোঝা যাবে না।
ইদানীং পাশ্চাত্যে বেশ লক্ষণীয় এখানকার অনেক ননমুসলিম দিব্বি আরবি ভাষা শিখে কুরআনের মূলমন্ত্র সঠিকভাবে বুঝে যে ব্যাখ্যা প্রদান করছে তার সঙ্গে অনেক কিছুর অমিল দেখা দিচ্ছে, যেমন যাকাত কেন বছরে সুধু রোজার ঈদের আগের দিন বা ঈদের দিন দেয়া হয়? গরিবেরও বছরে বারো মাস শুধু এক মাসে তাদের খরচ দিলে বাকি সময়ের কি অবস্থা! আবার যেমন রোজা রাখার নিয়ম সূর্য উঠা থেকে সূর্য ডোবা অবধি কিন্তু পৃথিবীতে এমনও দেশ রয়েছে যেখানে মুসলমানরা বসবাস করছে যেমন সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, এসব দেশেও তো অনেক সময় সূর্য ডুবে না বা সূর্য দেখা যায় না, নামাজের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন রয়েছে।
আমি ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছি ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত এবং কালেমা। এখন কালেমা সম্পর্কে কুরাআনে কী বলা আছে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং আমরা কী বলছি এবং কোন শর্ত হতে সেটাকে দাঁড় করিয়েছি ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে কুরআন কী বলে এসব বিষয়ে সেটাই আমাদের সঠিকভাবে জানা হলো না এত শত বছর পরও! এসব বিষয় কি নিশ্চয়ই আমাদের জন্য জরুরী নয়? আমাদের অপরাধের দায়ভার আমাদেরকেই নিতে হবে যদি আমরা সঠিক নির্দেশনা না মেনে চলি। অন্যের উপর (মৌলভিদের), চেপে দিলে চলবে না। আল্লাহর নির্দেশনা শুধু কোরআনেই সীমাবদ্ধ অতএব সময় এসেছে এসব সঠিক তথ্য আল কুরআন থেকে সরাসরি জানার। সবাইকে ইমান এবং শান্তির পথে থাকার তৌফিক আল্লাহ দান করুন আমিন।
লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com