টাকা না দিয়ে নেয়া ৮ পাঞ্জাবি ফেরত
টাকা না দিয়ে নেয়া ৮ পাঞ্জাবি ফেরত - প্রতীকী ছবি
রাজধানীর নিউমার্কেটে ছাত্রব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় হেলমেট বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে চার থেকে পাঁচজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে তাদের নাম-পরিচয়ও উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভেরিম্যান নিহত নাহিদকে রামদা দিয়ে কোপানো ব্যক্তির নাম রাব্বী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, কালো গেঞ্জি ও হেলমেট পরে রামদা দিয়ে নাহিদকে কুপিয়েছেন ঢাকা কলেজে পড়–য়া রাব্বী। তিনি ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। ঢাকা কলেজের নর্থ হলে থাকেন। বাকিদের নাম-পরিচয় এখনই প্রকাশ করতে চাইছে না পুলিশ। এ দিকে রাব্বীসহ হেলমেট বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ বলছে, তাদের ধরতে ইতোমধ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য সীমান্ত এলাকায় নোটিশ দেয়া হয়েছে। তবে অপর একটি সূত্র বলছে, এখনো গ্রেফতারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসেনি। উচ্চ মহলের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই গ্রেফতারের অভিযান শুরু হবে। তবে ঘটনার সাথে জড়িতদের ডাটা তৈরি করে অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশের একাধিক টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সূত্র জানায়, নিউ মার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত নাহিদ ও মোরসালিনকে কোপানোর ঘটনায় মোট তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নাহিদকে কুপিয়েছে দুই যুবক। দুইজনের একজন হচ্ছেন রাব্বী। তার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে ডিবি। নাহিদকে কোপানো আরেক যুবকের চেহারা স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া গেলেও তার পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে ডিবি পুলিশ। বাকিদের ব্যাপারে কিছুটা নিশ্চিত হলেও তদন্তের স্বার্থে সব প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে তাদের ধরতে ইতোমধ্যে সারা দেশে অভিযান শুরু হয়েছে। সীমান্ত এলাকাগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে। এ বিষয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এম হাফিজ আক্তার বলেন, ঘটনাস্থলের সব ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
এ দিকে ব্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের সমঝোতার পর প্রথম দোকান খুলতেই একটি দোকান থেকে টাকা না দিয়ে আটটি পাঞ্জাবি নেয়ার পর তা ফেরত দিয়েছে ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র। এর আগে সংঘর্ষের পর গত বুধবার যখন সবেমাত্র দোকান খোলা হয় তখনই সায়েন্সল্যাবরেটরি এলাকার ওই দোকানে গিয়ে আটটি পাঞ্জাবি নিয়ে যায় ছাত্ররা। তাদের কাছে টাকা চাইতে গেলে ও দোকানের কর্মচারীদের হুমকি দেয়া হয়।
বিচার পাবেন না ভেবে এই ঘটনা নিয়ে কোনো অভিযোগও জানাতে চাননি সংশ্লিষ্ট মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকরা। তবে সিসি ক্যামেরায় ছবি দেখে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের জেরে গত সোমবার রাত থেকে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি ছিল। দুই দিনের সংঘর্ষের পর গত বুধবার বিকেলে নিউ মার্কেট ও সাইন্স ল্যাব এলাকায় অল্প কিছু দোকান খুলেছিল ব্যবসায়ীরা। থমথমে সেই পরিস্থিতির মধ্যেও সাইন্সল্যাবের বাইতুল মামুর মসজিদ মার্কেটে একই মালিকের দু’টি দোকানে যায় ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরায় ঢাকা কলেজের আট শিক্ষার্থীকে দেখা গেছে। দোকানে তারা কোনো টাকা না দিয়ে আটটি পাঞ্জাবি নিয়ে যায়। অভিযোগকারী দোকানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, আমি আট শিক্ষার্থীকে বললাম আপনারা পাঞ্জাবি নিয়েছেন টাকা দেন। আপনারা কেন এভাবে নেবেন। অন্তত কেনা দামটা দেন। এরপর তারা বলে আপাতত আর টাকা চাইবি না।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সিস্টেম ভিন্ন। তারা বিভিন্ন কৌশলে চাঁদাবাজি করেন। বেশি টাকার মালামাল কিনে কম টাকা দিয়ে বলে পরে দিয়ে যাব। পরে আর তারা টাকা দেয় না। এরপর দোকানদার টাকা চাইলে তাদের সাথে ব্যবসায়ীদের লেগে যায়। এ ব্যাপারে ঢাকা কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার যদি কোনো ডকুমেন্ট থাকে, বা পেয়ে থাকি তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, পাঞ্জাবি নেয়ার ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখেছি এ বিষয়টি তদন্ত চলছে। পাঞ্জাবি নেয়ার বিষয়টি থানা বা আমাদের কাছে তেমন কোনো অভিযোগ নেই। এ বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশ দেখছে।
গত ১৮ এপ্রিল সোমবার রাতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে কয়েক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় আহত হন কয়েক পুলিশ সদস্যও। পরেরদিন মঙ্গলবার সকালে আবার সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। অনেকে হেলমেট পরে এবং লাঠি হাতে নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ব্যবসায়ী-কর্মচারীরাও লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়। থেমে থেমে সারাদিন চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে দুই শতাধিক আহত হয়। গুরুতর আহত হওয়া কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেন গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান এবং আহত রেডিমেড দোকানের কর্মচারী মোরসালিন (২৬) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যান।