মস্তিষ্কের প্রথম স্ট্রোকের ১০ বছরের মধ্যেই মারা যান অধিকাংশ রোগী, কেন এমন হয়
মস্তিষ্কের প্রথম স্ট্রোকের ১০ বছরের মধ্যেই মারা যান অধিকাংশ রোগী, কেন এমন হয় - প্রতীকী ছবি
প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ মস্তিষ্কের স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। কেউ বেঁচে ফেরেন না, কেউ কেউ আবার মৃত্যুকে জয় করে ফিরে আসেন জীবনের ময়দানে। তবে প্রথম স্ট্রোকের ধাক্কা সামলে বেঁচে ফিরলেও ১০ বছরের মধ্যেই মারা যান বেশির ভাগ রোগীই। অন্তত এমনটাই ইঙ্গিত মিলল সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে, প্রথমবার মস্তিষ্কের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে মারা যান দুই-তৃতীয়াংশ রোগী। সমীক্ষায় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৩ লক্ষ ১৩ হাজার রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। সমীক্ষার তথ্য বলছে, প্রতি পাঁচজন রোগীর মধ্যে একজন পাঁচ বছরের মধ্যেই দ্বিতীয়বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আর ১০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার রোগীর সংখ্যা শতকরা ২৭ ভাগ। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ইসকেমিক স্ট্রোকে। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে রক্ত চলাচলের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে এই ধরনের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে মত গবেষকদের। সমীক্ষা এ-ও বলছে, এই সময়ের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত নারীদের মৃত্যুহার পুরুষদের তুলনায় বেশি।
কিন্তু কেন এমন হয়? গবেষকরা আলোকপাত করেছেন সে দিকেও। তাদের দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুসারী চিকিৎসার অভাবে এই বিপদ দেখা দিতে পারে। তাদের দাবি, থ্রম্বোলাইসিস ও এন্ডোভ্যাস্কুলার চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে অনেকটাই কমানো যায় এই ঝুঁকি। কিন্তু সমীক্ষার তথ্য বলছে, মাত্র ১০ শতাংশ রোগী থ্রম্বোলাইসিস পরিষেবা নিয়েছেন। গবেষকদের আরো দাবি, প্রথমবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর নিয়মিত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু কেবল ৩৭ শতাংশ রোগী সময় মতো গিয়েছেন চিকিৎসকের কাছে। পাশাপাশি গবেষকরা জানিয়েছেন, এক বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে জীবনচর্চা ও খাদ্যাভ্যাসে বহু ধরনের বদল আনার প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার ধার দিয়েও হাঁটেন না রোগীরা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
স্নায়ু রোগ পারকিনসন্স
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
সচরাচর চলতে গেলেই এক ধরনের লোকের দেখা পাওয়া যায় যাদের হাত অনবরত কাঁপতে থাকে। এ ধরনের ব্যক্তিই পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত। এটি বেশ পুরাতন রোগ। ১৮১৭ সালে জেমস পারকিনসন ছয় ব্যক্তির এ রোগ সম্বন্ধে বর্ণনা দেন। তার নামানুসারে এ রোগের নাম রাখা হয়েছে।
ব্রিটেনের প্রতি ৫০০ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশে এমন কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। অনেকে মনে করেন এ রোগ ভালো হয় না বা এ রোগের চিকিৎসা নেই। তাই তারা নিয়তি বলে মেনে নিয়ে কষ্টকর জীবনযাপন করতে থাকেন। কিন্তু এটি পুরোপুরি সত্য নয়। এ রোগের চিকিৎসা আছে। এ রোগ ওষুধে পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না সত্য, তবে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
বিশ্বব্যাপী ১১ এপ্রিল পালিত হলো বিশ্ব পারকিনসন্স ডিজিজ দিবস। জনগণের মধ্যে এ রোগ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই এ আয়োজন। বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালিত হয়েছে।
কারণ : এ রোগের কারণ কি তা আজও জানা যায়নি। মস্তিষ্কের সাবসটেনশিয়া নিগ্রা নামক স্থানে ডোপামিনযুক্ত স্নায়ু নষ্ট হলে এ রোগ দেখা দেয়। বয়সের কারণে এটি হয়। সাধারণত বেশি বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগে আক্রান্তের হার বাড়ে। বংশে কারো এ রোগ থাকলে আক্রান্তের হার ৪-৬ গুণ বাড়ে। এ ছাড়া যারা আগাছা ও পোকা-মাকড় দমনের ওষুধ ছিটানোর কাজে জড়িত তাদের মধ্যে এ রোগের হার বেশি বলে গবেষণায় জানা গেছে।
লক্ষণ : শুরুতে লক্ষণ এতটা বোঝা যায় না। সাধারণত হাতের কাঁপুনির মাধ্যমে এ রোগ লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। কোনো কাজের সময় কাঁপুনি বেশি হয়। তবে বিশ্রামকালীনও কাঁপুনি এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। হাঁটাচলা করতেও সমস্যা দেখা দেয়। হাঁটা শুরু করতে দেরি হয়। সামনের দিকে ঝুঁকে ছোট ছোট পায়ে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ করে ঘুরতে গেলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনো কাজ শুরু করতে দেরি হয়। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়, যেমন বাহু বাকাতে গেলে বেশ বেগ পেতে হয়। এ রোগে আক্রান্তদের চেহারা দেখে মনে হবে তাদের কোনো ইমোশন নেই। গলার স্বর ভারী ভারী ও মোনোটোনাস হয়। কথায় জড়তা ভর করে। হাঁটার সময় হাত শরীরের সাথে লেগে থাকে।
রোগ নির্ণয় : এ রোগ নির্ণয় করতে পারে এমন কোনো পরীক্ষা নেই। চিকিৎসগণ রোগের ইতিহাস শুনে ও শারীরিক পরীক্ষা করে এ রোগ সম্বন্ধে নিশ্চিত হন। তার পরও কিছু ইনভেস্টিগেশনের প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা : এ রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই। রোগের লক্ষণ কমানোর জন্য কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। লেভোডোপা ও কার্বিডোপা সেবনে লক্ষণগুলো অনেকাংশে কমে যায়। এখন পর্যন্ত এটি এ রোগ চিকিৎসার সেরা ওষুধ। এ ছাড়া টেট্রাহেক্সিফেনিডল, প্রামিপেক্সল, রোপিনিরোল, রাসাজেলিন, সেলেজিলিন, এন্টেকাপন, এমানটিডিন ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া সার্জারি করা যায়। যেটাকে ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন বলে। বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে এ সার্জারি হয়। তবে খুব কম।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতোই এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তাই এ রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। ওষুধ আজীবনের জন্য সেবন করতে হয়। অনেকে ওষুধ সেবন করে কিছুটা সুস্থ হলে আর ওষুধ সেবন করতে চান না। ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। একজন নিউরোলজিস্টের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করে সুস্থ থাকুন।
কনসালটেন্ট
ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গুলশান-২, ঢাকা