কোন দেশের বৈদেশিক ঋণ সবচেয়ে বেশি?
কোন দেশের বৈদেশিক ঋণ সবচেয়ে বেশি? - প্রতীকী ছবি
বিশ্বব্যাংকের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, জি৭ ভুক্ত বড় অর্থনীতির আমেরিকার বেলায় তার ঋণের টিপিং পয়েন্ট হচ্ছে ৭৭%। কিন্তু সেই ১৯৪৬ সালেই মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে যখন আমেরিকা একচ্ছত্র গ্লোবাল নেতা হিসাবে উঠে এসেছিল তখনই খোদ আমেরিকার টিপিং পয়েন্ট ছিল ১০৬% যার সোজা মানে এটা ৭৭% চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু এটা সত্ত্বেও আমেরিকা সেকালে গ্লোবাল নেতাই ছিল এবং অন্য সব দেশকে ঋণ দেবার মূল উৎস ছিল- তা সরাসরি দ্বিপাক্ষিকভাবে অথবা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে।
এ ছাড়া আরো বড় ঘটনাটা হলো, পরে আমেরিকার এই ঋণ-বনাম-জিডিপি অনুপাত কমতে থাকে। শেষ ১৯৭৪ সালের মধ্যে এটা নেমে ২৩% হয়ে যায়।
তাহলে এখন কত?
পরে ১৯৮০ সাল থেকে আমেরিকার এই অনুপাত আবার বাড়তে থাকে; ২০০৭ সালের গ্লোবাল মহামন্দার সময় আরো বাড়ে। আর ২০০৯ সাল থেকে এটা ৭৭% এর বেশি হতে শুরু করেছিল যেটা এখনো বৃদ্ধির দিকে। ২০২০ সালের সেকেন্ড কোয়ার্টারে এটা সর্বোচ্চ ১৩৫.৯% (গড়ে ১৩৪%) হয়ে আছে।
সার কথায়, বিশ্বব্যাংকের টিপিং পয়েন্টই শেষ কথা নয়; একটা স্টান্ডার্ড মাত্র। ফলে এটা ছাড়ালেই সব ভেঙে পড়বেই এমন নয়, তবে হতে পারে। আর দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বড় অর্থনীতির দেশের ঘাত সহ্য ক্ষমতা বেশি, অভিজ্ঞতায় তাই দেখা গেছে।
কোন দেশ সর্বোচ্চ অনুপাতে
২০২০ সালের হিসাবে এমন দেশ হলো ভেনিজুয়েলা। তার অনুপাত ছিল ৩০৪%। আমরা সবাই কমবেশি ভেনিজুয়েলার অবস্থা জানি। তার ওপর আমেরিকান তেল অবরোধ দেয়া আছে সুদীর্ঘ সময় ধরে। ফলে সুনির্দিষ্ট কিছু দেশেই সে একমাত্র ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রাতেই কেবল তেল বিক্রি করে যেটুকু বিদেশি মুদ্রা আয় করতে পারে। সে কারণে ভেনিজুয়েলার অনুপাত অমন উঁচু। তুলনায় সেকেন্ড সর্বোচ্চ অনুপাত ছিল জাপান ২০৪%। আর আমেরিকা ছিল ষষ্ঠ প্লেসে, ১৩৪%। তাহলে বিশ্বব্যাংকের স্টান্ডার্ড ৭৭% এখানে কার্যত অকেজো!
তাহলে ভারতের কী অবস্থা
এশিয়ার সবদেশই ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ পড়ে ডুবে গেল- এই হলো ভারতের প্রবল প্রপাগান্ডার সার কথা। এই মিথ্যা প্রপাগান্ডায় আবার আমেরিকার থেকেও ভারতের গলা বেশি উঁচু। তাহলে ভারতের নিজের কী অবস্থা এই প্রসঙ্গে? সে খবর নিতে হয়। ব্লুমবার্গ আমেরিকার ফাইন্যান্সিয়াল নিউজ মিডিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম। সে ভারতের কুয়িন্ট নিউজের সাথে খবর শেয়ার করে ভারতে ছাপে। তাদেরই এক রিপোর্ট বলছে, ভারতের ঋণ বনাম জিডিপি অনুপাত ২০২১ সালে ৮৭.৮%। এই রিপোর্টের শিরোনাম হলো, ‘বাজেট ২০২২- রাষ্ট্রের ঋণ নামিয়ে আনতে হলে একটা শক্ত অর্থনৈতিক উন্নতি দেখাতে হবে।’ আর তাহলেই নাকি আগামী বছর এই অনুপাত কমে ৮৭.৪% হতে পারে। অর্থাৎ ভারতকে যদি রাইজিং অর্থনীতির দেশ গণ্য করি, তাহলেও ওর বিশ্বব্যাংক স্টান্ডার্ড অনুপাত হয় ৬৪%। অথচ এই স্টান্ডার্ড থেকে ৮৭% অনেক দূরের ফিগার অবশ্যই। তাহলে কোন সুখে ভারত সব দেশের বিরুদ্ধে লেগে সেখানে ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ খুঁজে ফেরে?
তাহলে শেষ অবস্থাটা কী
গত ৪ এপ্রিল ভারতের অনেক পত্রিকাতেই একটা নিউজ ছাপা হয়েছে। তা হলো, অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে মোদি তার দু’ডজন সিনিয়র সচিব বা কর্তাদের নিয়ে লম্বা চার ঘণ্টার এক মিটিং করেছেন। ওই রিপোর্টের শিরোনাম হলো, ‘বুরোক্রাটেরা মোদিকে লাল পতাকা দেখিয়েছেন এই বলে যে, শ্রীলঙ্কার মতো ক্রাইসিস ভারতেও দেখা দিতে পারে।’ তারা আসলে বলতে চাইছেন অনেক রাজ্যে যেভাবে নয়া প্রকল্প নেয়া হচ্ছে তা ভালো হচ্ছে না। এতে অর্থ সঙ্কটে পড়বে ভারত। হিন্দুস্থান টাইমস এ নিয়ে একটা ভিডিও ক্লিপও বানিয়েছে। আর এতে ভারতে হৈ চৈ পড়া অবস্থা যে, তাহলে কি খোদ ভারতই এখন শ্রীলঙ্কা হতে যাচ্ছে? এর সাথে এক অসমর্থিত খবর বলছে, সম্প্রতি মোদিকে যে বাইডেন ফোন করেছিলেন, রাশিয়া থেকে ভারত যেন তেল না কিনে এই ইস্যুতে, সেখানে ভারত বাইডেনের কথায় আসলে রাজি হয়েছে। কারণ, বাইডেন মোদিকে শ্রীলঙ্কা ধরনের অর্থনৈতিক ক্রাইসিস সামলাতে ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দিতে কবুল করেছেন। ভারতের ৬১৪ বিলিয়ন বৈদেশিক ঋণ শোধে কিস্তি দেরিতে দিতে ও সুদ কমাবার আবেদন করেছেন মোদি।