ডলারের উৎপত্তি যেভাবে
ডলার - প্রতীকী ছবি
ডলার বলতে সাধারণভাবে মার্কিন ডলারকেই বোঝানো হয়। আরো অনেক দেশের মুদ্রার নাম ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কারণেই শব্দটি এত পরিচিত।
‘ডলার’ শব্দটির উৎপত্তি মধ্যযুগীয় ইউরোপে। ইউরোপের দেশগুলো দ্রুত অর্থ প্রদানের একটি আন্তর্জাতিক উপায়ে হিসেবে এর উৎপত্তি ঘটায় এবং প্রতিটি ইউরোপীয় জাতি তাদের নিজস্ব ভাষা-বান্ধব এর নাম দেয়। ইংল্যান্ড প্রথম এটাকে ‘ডালার’ বলতো এবং পরে শব্দটি ‘ডলার’ হয়ে উঠল।
আঠারো শতকের শেষের দিকে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যখন সক্রিয়ভাবে বিকাশ লাভ করছিল, তার নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থাটির উত্থান শুরু হয়েছিল, তখন প্রথমদিকে ১৭৯৪ সালে ডলারকে রৌপ্য মুদ্রা হিসেবে তৈরি করত যার ওজন ছিল ২৭ গ্রাম। ১৭৯৭ সালে এই দেশটি কাগজের নোট জারি করতে শুরু করেছিল।
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে ডলার। বৈশ্বিক মুদ্রা ও বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় ডলারের দ্বারা। ডলার বিশ্ব মুদ্রা ব্যবস্থার প্রধান বিনিময় মাধ্যম। তাহলে ডলার কিভাবে বিশ্বমুদ্রায় পরিণত হলো এবং তার বিরুদ্ধে এখনকার প্রধান বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব ঠিক কোথায় তা বুঝতে হলে বিশ্বমুদ্রা হিসেবে ডলারের একচেটিয়া আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রক ভূমিকা বুঝতে হবে।
বহু বছর ধরে পৃথিবীতে স্বর্ণের মানের ওপর নির্ধারিত হতো অর্থনীতি ও লেনদেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র দেশগুলোর কাছে যেসব সামরিক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি করেছে সেগুলোর মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে স্বর্ণের মাধ্যমে। এর ফলে বিশ্বের মোট রিজার্ভের ৭০ শতাংশ স্বর্ণ চলে যায় আমেরিকার হাতে। অন্যদিকে আমেরিকান ডলারের মূল্য নির্ধারিত ছিল তখন স্বর্ণের ওপর ভিত্তি করে। সে সময় ধনী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আমেরিকাই ছিল একমাত্র দেশ যেখানে যুদ্ধের কোনো আঁচড় লাগেনি। এ ছাড়া ইউরোপ তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। যেহেতু তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ আমেরিকার কাছে ছিল এবং স্বর্ণের ওপর ভিত্তি করে আমেরিকান ডলার স্থিতিশীল ছিল সেহেতু বিশ্বের ৪৪টি দেশ ব্রেটন উডস এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ডলারকে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে রাখতে একমত হয়েছে। সেই থেকে ডলারের আধিপত্য শুরু।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ডলারকে আরো শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেন। তিনি ১৯৭১ সালে ঘোষণা করলেন, স্বর্ণের ওপর ভিত্তি করে ডলারের মূল্য আর নির্ধারিত হবে না। বিশ্বজুড়ে আমেরিকান ডলারের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে এবং চাহিদা বাড়ানোর জন্য ১৯৭৪ সালে সৌদি আরবের সাথে একটি চুক্তি করে আমেরিকা। বিশ্ব বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণকারী একক মুদ্রা হিসেবে ডলারকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং টিকিয়ে রাখার মহৌষধ ছিল ডলারকে পেট্রোডলারে রূপ দিতে পারা। পেট্রোডলার আসলে কোনো ডলার নয়; আবার পেট্রোল নামক দাহ্য পদার্থও নয়। পেট্রোডলার মূলত ডলারের বিনিময়ে পেট্রোল ক্রয়ের চুক্তি যা বাদশা ফয়সাল ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মধ্যে ১৯৭৪ সালে করা হয়েছে।