যতক্ষণ না চিকিৎসক সতর্ক করেন ততক্ষণ পর্যন্ত রক্তচাপ নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। অথচ স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মূলে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ। শুধু তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদি রোগভোগও ডেকে আনে হাই ব্লাড প্রেশার। তাই চিকিৎসকরা একে বলেন, ‘সাইলেন্ট কিলার’।

রক্তচাপজনিত সমস্যার প্রভাব বেশ গভীর। রক্তচাপ উচ্চ বা নিম্ন হোক তা শরীরের নানা অঙ্গে সরাসরি প্রভাব সৃষ্টি করে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সাধারণত এই সব সমস্যা দেখা দেয়, ১) স্ট্রোক, ২) হার্ট অ্যাটাক, ৩) চোখের রেটিনায় সমস্যা এবং ৪) কিডনির সমস্যা বা নেফ্রোপ্যাথি ইত্যাদি। একই ভাবে নিম্ন রক্তচাপ জনিত সমস্যাকে বলে ‘হাইপোটেনসিভ শক’। এই রোগের ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্তের প্রবাহ কমে যায়। ফলে ওই সব অঙ্গ কর্মক্ষমতা হারায়।

রক্তচাপের ঠিকঠাক মাত্রা : রক্তচাপ সাধারণভাবে বয়স, পরিবেশ এবং লিঙ্গভেদে পৃথক হয় তবে সাধারণভাবে ১২০/৮০ রক্তচাপকেই চিকিৎসকেরা ‘স্বাভাবিক’ বলে থাকেন। এটা ১৪০/৯০ হলে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়। আর রক্তচাপ ১৮০/১২০ হলে সেটাকে গুরুতর বলা হয়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

সোডিয়াম : লবণের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে হাই ব্লাড প্রেশার দেখা যায়। তাই এ ক্ষেত্রে কাঁচা লবণ খেতে বারণ করা হয়। শুধু তাই নয় প্যাকেজড এবং বেকড খাবারগুলোতেও সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

পটাশিয়াম : এবার সোডিয়ামকে কাউন্টার করতে বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বলা হয়, শরীরে যত বেশি পটাশিয়াম ঢুকবে ততটাই সোডিয়াম প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। পালং শাক, ব্রকোলি, অ্যাভোকাডো, কলা, বীট শাক, কমলালেবু, টমেটো, ডাব পটাশিয়ামের ভাল উৎস। সঙ্গে সবুজ শাকসবজি বেশি পরিমাণ খেতে হবে।

মানসিক চাপ নয় : উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে এর সরাসরি প্রভাব নেই। তবে যখন কোনও ব্যক্তি চাপে থাকেন তখন তার রক্তচাপের মাত্রাও বেড়ে যায়। অত্যধিক চাপ নিলে রক্তনালীর দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভুল ডায়েট, অতিরিক্ত মদ্যপান ধূমপানও উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী।

পর্যাপ্ত ঘুম : ভালো ঘুম না হলে রক্তচাপ বাড়ে। অনিদ্রার রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা ৪৮ শতাংশ বেশি। তারওপর যাদের এইচবিপি আছে ভালো ঘুম না হলে তাদের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।

মদ্যপান : শরীরে অ্যালকোহল গেলে রক্তনালীর পেশিগুলো সংকুচিত হয়। ফলে শরীরের সর্বত্র রক্ত পাঠানোর জন্য হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত পাম্প করতে হয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওর বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

সতর্কতা : হঠাৎ বুকে চাপ অনুভব করা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, পা ফুলে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। একই ভাবে কোনো ব্যক্তির এই রোগ থাকলে তাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি।

সূত্র : নিউজ ১৮