পাকিস্তানে মার্কিন হস্তক্ষেপ : ইমরানের দাবির যৌক্তিকতা

গৌতম দাস | Apr 16, 2022 03:04 pm
ইমরান খান

ইমরান খান - প্রতীকী ছবি

 

ইমরান খান পাকিস্তানজুড়ে আমেরিকান হস্তক্ষেপের কথা ছড়িয়ে দিয়েছেন সেই আমেরিকার সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেন নেই, ছিল না- এটা প্রমাণে সেনারা হাত-পা ধুয়ে নেমে পড়েছে। পাক সেনাবাহিনী এর আগে এমন বেচাইন হতে কেউ দেখেনি।

বরং এতে হলো তাকে বলা যায়, আমেরিকা ও পাক-সেনাবাহিনীর ‘আন্ডারহ্যান্ড সম্পর্ক’ বিশেষ করে যা এখন রাজনীতিবিদ ইমরান এই সম্পর্ককে অনুমোদন না দিয়ে বরং খোলাখুলি পাবলিকের সামনে এর বিচার দেয়াতে এখন পাকিস্তান সেনাদের টনক নড়েছে। আর তা থেকেই তারা তওবা পড়ে বের হয়ে আসতে চাইছে যেন। আর এটা এমনই ছ্যাঁকা খাওয়া যে সেনাপ্রধান বাজওয়া এখন সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হয়ে যেতে চান, যিনি অনেক বদনাম কামিয়েছেন। তাই এখন আগামী ঠিক ২৯ নভেম্বরেই এ বছরে তিনি অবসরে চলে যাবেন, কোনো এক্সটেনশন দিলেও নাকি নেবেন না- তা আগ বাড়িয়ে ওই জেনারেল বাবরকে দিয়ে রটিয়ে দিয়ে পার পেতে চাইছেন। তার মানে হলো- ‘ঠাকুর ঘরে কে রে? না আমি কলা খাই নাই, দেখিই নাই এবং আমি আর জীবনে কলা খাবো না’ দশা!

তাতে এখন সারকথা হলো যে, ইমরান এদেরকে এই ছ্যাঁচা দেয়াতে ওই কুচক্রী ত্রিশক্তি- এদেরকে একেবারে এই প্রথম ইমরান ল্যাংটা করে ছেড়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, ইমরান এই ত্রিশক্তির কুচক্রীপনা বিশেষত, আমেরিকান তৎপরতা একেবারে উদাম করে দিয়েছেন। আজ পাকিস্তানের গৃহবধূরাও নিজ বাচ্চাদের সাথে নিয়ে রাতে রাস্তায় প্রতিবাদে শামিল। এমনিতেই ইমরানের সবচেয়ে বড় সমর্থক গোষ্ঠী এক ব্যাপক সংখ্যক সব বয়সের নারী। কয়েকটা সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাসে দেখা যাচ্ছে, এই নারী-পুরুষেরা ইমরানের পক্ষে দাঁড়িয়ে আমেরিকার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এর সাথে কিছু ইন্টারভিউও দেখা গেল; তারা শামিল হয়েছে। অর্থাৎ ওই তিন কুচক্রী শক্তি যারা এতদিন রাজত্ব করে গেছে ‘ভিক্ষুক তত্ত্ব’ দিয়ে, এরা যে একদিন পাকিস্তানের গৃহবধূদের হাতে নাকানি-চুবানি খাবেন, তাদের অকাম সব উদাম হয়ে যাবে তা তারা কখনো অনুমানই করেননি মনে হচ্ছে। কিন্তু এটাই পাকিস্তানে এখন হয়েছে এবং তা বাস্তব। সম্ভবত সে কারণে সেনাবাহিনী সবার আগে সব ছেড়ে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে। জেনারেল বাবরের প্রেসের সামনে নিজে যেচে ওই প্রসঙ্গ তুলে কথা বলা তাই প্রমাণ করে। আসলে শাহবাজের ভিক্ষুক তত্ত্ব- এই ত্রিশক্তি মানে সেনা-আমেরিকাসহ পুরোনো রাজনীতিবিদ সবাইকেই পাবলিকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে! এটাই ইমরানের এক বিরাট রাজনৈতিক সাফল্য।

এমনকি এ নিয়ে সাম্প্রতিকালের আমেরিকান প্রতিক্রিয়াও দেখার মতো। ঘটনাটা হলো, পেন্টাগন মানে, আমেরিকান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা দেখাশুনা যাদের কাজ, সেই ডিপার্টমেন্ট পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি গত ১৩ এপ্রিল এক প্রেস ব্রিফিং ডেকে বসেন। উদ্দেশ্য ইমরানের দল সারা পাকিস্তানের সব বড় শহর যেভাবে তোলপাড় করে আমেরিকার হস্তক্ষেপ করে বিরোধী দল লেলিয়ে দেয়ার কাহিনী উন্মোচন করে দিয়েছে তাতে ব্যাপকভাবে ইমেজ হারানো আমেরিকা তা পুনরুদ্ধার করা, কমপক্ষে বলা যে, আমরা এত খারাপ না- যেন সে জন্যই এই প্রেস ব্রিফিং। ইমরানের অভিযোগের জবাবে এটুকু তিনি বলতে এসেছিলেন যে, ইমরানের অভিযোগ সত্যি নয়। অবশ্য এটা একই কথা; যেটা পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি অনুমোদিত যে কড়া প্রতিবাদ (ডিমারসে) সেটা ইমরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট পৌঁছে দেয়ার পরও তারা এভাবেই অস্বীকার করেছিল।

কিন্তু জন কিরবির একটি বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘ওই অঞ্চলে পাকিস্তান (আমাদের জন্য) এক নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছিল। আমরা পাকিস্তান ও পাকিস্তানের জনগণের এই ভূমিকা স্বীকার করি। সেটা এমন ছিল যে [আমাদের সাহায্য করতে গিয়ে] পাকিস্তানিরা যে, নিজ দেশের ভেতরেই টেররিস্ট আক্রমণের শিকার হয়েছেন সেটাও স্বীকার করি।’ ফলে সেখান থেকে আমাদের একটা স্বার্থ-শেয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান সেনাদের সাথে আমাদের সেনাদের একটা ভালো (হেলদি) সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’ অর্থাৎ যেন বলতে চাইলেন, বিশ্বাস করেন- আমরা ওই তিন কুচক্রী শক্তি হিসেবে পাকিস্তান সেনাদের কোনো খারাপ পথে নেইনি।

এ ছাড়া আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতায় তারা দূরেও ‘কোনো আমেরিকান সেনাভূমিকা দেখেন না।’ এ কথা বলেই তিনি সাথে সাথে জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলেন, ‘ভাই, আমাকে আবার পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলে ফেলার দিকে টেনে নিয়েন না, মাফ চাই!’

সার কথায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর আমেরিকা প্রশাসন, তাদের গোমর পাকিস্তানি জনগণের সামনে ইমরান নিয়ে যাওয়াতেই এসব ঘটছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সবাই এখন নিজের গা ধুয়ে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে গেছে।
ওদিকে সেনা আইএসপিআরের ডিজি জেনারেল বাবর সেনাপ্রধান বাজওয়ার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে গিয়ে ফেঁসেছেন। তিনি দাবি করছেন, আমেরিকার বিরুদ্ধে পাঠানো পাকিস্তানের কড়া প্রতিবাদ-পত্রে ‘কনস্পিরেসি’ শব্দটা ছিল না। কিন্তু তাতে কী? ফরমাল দুদেশের কূটনৈতিক বার্তায় অনেক শব্দই থাকে না যা কূটনীতিতে অনুমোদিত ভাষা নয়। কিন্তু এরপর আবার নিজেই বলছেন, আমাদের প্রতিবাদলিপি যেটা গেছে সেখানে মূল কথাটা ছিল মূলত ‘আমেরিকার অকূটনীতি-সুলভ শব্দ ব্যবহারের বিরুদ্ধে যে শব্দগুলো পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সমান।’
তাহলে এটা আমেরিকান ‘কনস্পিরেসি’ হতে বাকি থাকল কী? তবুও ‘কনস্পিরেসি’ শব্দটা পাকিস্তান ব্যবহার করেনি ইচ্ছা করেই এজন্য যে, তাতে পাকিস্তানেরও ‘অকূটনীতি-সুলভ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়ে যেত।

তাহলে যেটা আসল কথা এটা নিয়ে পাকিস্তান সেনাদের এখন কথা বলার কী আছে? তারা কী আমেরিকাকে সার্ভিস দিতে চাচ্ছে, আমেরিকান কনসার্নটা তারা হাজির করতে চাইছে? কিন্তু এটা কি পাকিস্তান সেনাদের কাজ? তাদের আনুগত্যের জায়গাটা কোথায়? আমেরিকান প্রশাসন? তাহলে দেখা যাচ্ছে ইমরান আসলে ভিক্ষুক তত্ত্বের বিরুদ্ধে দেশের স্বার্থরক্ষার প্রশ্ন আর আমেরিকান হস্তক্ষেপ ইস্যুটাকে পাকিস্তানের সাধারণ্যে একেবারে গৃহবধূর পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে সঠিক পদক্ষেপ ও কাজটাই করেছেন! এখন মনে হচ্ছে পেন্টাগণের জন কিরবি আর পাক সেনাবাহিনী একটা ভালো শিক্ষাই পেয়েছে এ থেকে!


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us