ইমরান ও তার দল সংসদকে অত রাত পর্যন্ত নিয়ে গেছেন কেন?
ইমরান খান - প্রতীকী ছবি
ওই ৯ এপ্রিলের পরে ১০ এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত কেন সুপ্রিম আদালত আর এই ইস্যুটাকে আর আদালতে তোলেনি? এর মানে কী? এর সোজা অর্থ, সংসদেই শেষে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়েছে এবং ইমরান ও তার দলের কেউ এতে কোনো বাধা সৃষ্টি করেইনি। এটাই ফ্যাক্টস! এর অর্থ আদালতের আগাম শঙ্কা প্রকাশ পুরাটাই অমূলক তা প্রমাণিত। যে আদালত আগাম শঙ্কা প্রকাশ করে সেটা আর আদালতই নয়। আদালত তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একেবারেই নয়। তাই আগাম অনুমানে সিদ্ধান্ত নেয়া তার কাজ নয়, হতে পারেন। অপরাধ ঘটার পরেই না বিচার শুরু করতে পারে। তাহলে এখন প্রশ্ন ইমরান ও তার দল কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত হবার আগেই তাদের সন্দেহের খাতায় বিচারকেরা ফেলেছেন কেন? এটাতে তো বিচারকেরাই বড় অপরাধী। অপরাধ করতে পারে মনে করে আদালত খুলে বসে থাকা বিচারক তারা! এই কি তাহলে তাদের পরিচয়?
আর সোজা অর্থ এই বিচারক গোষ্ঠী আসলে ভিখারি তত্ত্বে আপ্লুত। নিজ বিচার কাজ বা নিজ দায়দায়িত্ব কী সেসব কিছু ভুলে তারা আমেরিকা বা সেনাবাহিনীকে খেদমত করতে নিজ মর্যাদা বিসর্জন দিয়েছে এমন বিচারপতি তারা। এক কথায় তারা অযোগ্য ডিস-কোয়ালিফায়েড বিচারপতি।
এখন উল্টা দিকে আসি। তাহলে ইমরান ও তার দল সংসদকে অত রাত পর্যন্ত নিয়ে গেছেন কেন? বিচারকদের অবিচারকসুলভ টেনশন বাড়িয়েছেন কেন?
প্রথমত কারো টেনশন বাড়ানো তাদের উদ্দেশ্য মনে হয়নি। তাদের মূল অবস্থান হলো, বিরোধী জোট যে আমেরিকান পাপেট (ইমরানের ভাষায় ইম্পোরটেড বা আমদানিকৃত সরকার) সেটা তুলে ধরা। সে কারণে তারা কৌশল নিয়েছেন রাত ১১টার পরে তাদের পিটিআই দলের স্পিকার পদত্যাগ করবেন আর সংসদ সদস্যরা পরে অনাস্থার ভোট শুরু হলে সংসদ ত্যাগ করবেন। অর্থাৎ এক. ইমরানের দলের স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি কার্যক্রম পরিচালনাই করবেন না। কিন্তু তা বলে সংসদের কার্যক্রমে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে বরং বিরোধী জোটের পছন্দের এক স্পিকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে পদত্যাগ করে চলে যাবেন। যা কোনো যুক্তিতেই কোনো বাধা দেয়া হবে না। আবার ইমরানের দলের বাকি এমপিরা, এরাও অনাস্থা প্রস্তাবের কার্যক্রমের সময় সংসদে উপস্থিত থাকবেন না। এটা তো তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত। তারা এটা নিতেই পারেন। আর সেটা অবশ্যই অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে কোনো বাধা সৃষ্টি কোনোভাবেই নয়। তা-ই হয়েছিল। অর্থাৎ ভোটাভুটির সময় সংসদে কেবল বিরোধী জোটের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এক কথায়, ইম্পোর্টেড সরকার গঠনের সময় এর সাথে কোনো সংসর্গ ইমরান রাখতে চাননি। এটাই তাদের কৌশল ছিল আর সেটাই তারা বাস্তবায়ন করেছেন। এবং তা সংসদে ভোটাভুটি কার্যক্রমে বাধা না দিয়েই। সবচেয়ে বড় কথা, ইমরান বা তার দল সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে সারা দিন কোথাও বাধাসৃষ্টিমূলক কোনো কাজ করেননি এবং ইমরানের দল পরিকল্পিতভাবেই ৯ এপ্রিলের দিনটা শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। তাই এটা কোনো যুক্তিতেই আদালতের উদ্বেগের কোনো ঘটনাই নয়। বরং আদালত অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আগাম ও মিথ্যা অনুমান করে আদালত খুলে বসে থেকেই সবচেয়ে বড় অপরাধটা করেছেন। এখান থেকেই সিদ্ধান্ত যে, আদালত আসলে বায়াসড, প্রিজুডিস (ঘটনা ঘটার আগেই ওর বিচার করা, পক্ষ নিয়ে ফেলা) হয়ে গেছেন!
তাহলে এখান থেকে আরো বড় প্রশ্ন উঠে আসে। তাহলে আমেরিকার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ- সুপ্রিম আদালতের এই পয়েন্টটাকে আমলে না নিয়ে এটা ছাড়াই সংসদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ভুল বলে রায় দেয়া- এটাও তো আসলে ছিল বিচারকদের পক্ষপাতিত্ব ও প্রজুডিস চোখে ঘটনাকে দেখা ও বিচার করা যা এক বিরাট অবিচারের নজির!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com