পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির লজ্জাজনক কাজ!

গৌতম দাস | Apr 16, 2022 02:57 pm
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি

পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি - প্রতীকী ছবি

 

পাকিস্তানের তিন কূচক্রী শক্তির ‘ভিখারি তত্ত্ব’, এই বয়ান মূলত সারা পাকিস্তানকেই সব সেক্টরে মেরুদণ্ড ভাঙা করে রেখে দিয়েছিল। সেটাই এখন বুঝা যাচ্ছে। এ থেকে এমনকি আদালতও বাইরে মানে, তারা প্রভাবিত হয় নাই, তা বলা যাচ্ছে না। এমনকি গত ৯ এপ্রিল যেদিন সংসদে ইমরানের ওপর অনাস্থা ভোট পাশ হয়েছিল; সেদিনের আদালতের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ এবং তারাও যে ভিখারি তত্ত্বে আপ্লুত হয়ে ওই তিন কূচক্রীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিল এই ইঙ্গিত ও প্রমাণ থেকে গেছে। আমেরিকা বা পাক-সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু করতে যেন বিচারকদের ভিখারি মন সায় দেয়নি। অথচ ইমরান বা তার দলের আদালতের নির্দেশ অমান্য করা, এমন কোনো অভিপ্রায়ই যে ছিল না এটা এখন প্রমাণিত।

৭ এপ্রিল রাতে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে, সংসদ যা ভেঙে দিয়েছিল ইমরানের সরকার তা পুনর্বার জাগিয়ে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে। আর সুনির্দিষ্ট করে বলেছিল নয় এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় পুনরায় সংসদ বসিয়ে অনাস্থা ভোট নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে। ইমরান সরকার ও স্পিকার ঠিক সে মোতাবেক সবকিছুই করেছিল। আর রায়ে অবশ্যই এমনটা বলা ছিল না যে, কতক্ষণের মধ্যে এই অনাস্থা প্রস্তাবে পাস করতে হবে। কারণ এটা বলা বেকুবি হতো এবং সেটা বলা অবশ্যই বিচারকদের এখতিয়ারবহির্ভূতও হতো।

এদিকে এটা পরিষ্কার হয়ে পড়ছিল যে আদালতের রায়ে ইমরান অসন্তুষ্ট ও হতাশ হলেও তিনি রায় মেনে নিয়েছেন। ফলে এমন আচরণ ইঙ্গিত তিনি দিয়ে গেছেন। এমনকি আগের রাতে (৮ এপ্রিল) ছিল ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেষ পাবলিক বক্তৃতা। তিনি সেখানে পরোক্ষে বলেই দেন যে, কাল থেকে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী থাকছেন না।
কিন্তু ওই তিন-কুচক্রী-শক্তি তবু আস্থা রাখতে পারেনি। যেন তারা তাদের স্বভাব দিয়ে ইমরানকে ব্যাখ্যা করতে গেছে। কিন্তু এরা যা খুশি করুক তাতে আদালতেরই এতে প্রভাবিত হয়ে পড়ার তো কোনো কারণ নেই। অথচ তাই ঘটেছিল! সুপ্রিম কোর্ট (যেটা সারা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত) আর ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (পাঞ্জাব প্রদেশের সর্বোচ্চ আদালত) এ দুটোই রাত ১২টার আশপাশের সময় আগাম আদালত খুলে বসেছিল। কেন? কেন তারা কোনো সদুত্তর দেননি?

এটা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির জন্য চরমতম লজ্জার। এতে বিচারকরা যে আর নিরপেক্ষ নন এই দাগ লেগে গেছে তার গায়ে। প্রধান বিচারপতি একটা রায় দিয়েছেন ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় যে, সংসদকে আবার বসে অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা করতে হবে। এ নিয়ে সমাজের কোনো কর্নারে তো অমান্য করার ইঙ্গিত নেই। আর সেটা থাকার কোনো কারণ ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা রায়ে সংসদ ৯ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় বসার কথা বলা আছে আর ঠিক তাই-ই ঘটেছে। এখন কতক্ষণে অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা হবে এর কোনো সময়সীমা নেই, বিচারকেরা সঠিকভাবেই তা দেননি। আর তা দেয়ারও তার সুযোগ ছিল না। তবুও সেদিন প্রায় মধ্য রাতেও সংসদ চলমান। কাজেই ওই সংসদ কিভাবে শেষ হয় অন্তত সেদিন রাত ১২টা পর্যন্ত তো তাকে সময় দিতেই হবে এবং সারা বিচারক গোষ্ঠীকে এজন্য অপেক্ষা করতেই হতো। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো অনুমান ছাড়াই যে, ইমরান বা তার দল ‘বিচারের রায় অমান্য করবেই’। অমান্য করেছে কিনা সেটা দেখার পরেই কোনো আদালত তার কাজ শুরু করতে পারে। এর আগে একেবারেই নয়। কারণ সেটা অবশ্যই প্রিজুডিস হবে। অথচ তাকে কেন আগাম রাত ১২টায় আদালত খুলে বসতে হলো?

এর মানে তাকেও কি আমেরিকা ও সেনাবাহিনীকে খুশি করতে হবে- এই ভিক্ষুকের স্বভাব পেয়ে বসেছিল? ধরা যাক আগের রাত ১২টাতেও সংসদ অনাস্থার সুরাহা করেনি এবং পরদিন সকালে আবার সংসদ বসেছে ইত্যাদি যেটাই হোক সেটা দেখেও তো তিনি পরদিন বসে ব্যবস্থা নিতে পারতেন? অর্থাৎ তিনি আগাম ইমরান ও তার দল সম্পর্কে এক চরম নেতি মিথ্যা ধারণা ও এক আগাম ধারণা যে, ইমরানের দল ‘রায় ভায়োলেটর’ বলে আগাম সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছিলেন- কেন? এমন আগাম অনুমান, একেই আদালতের ভাষায় বলে প্রিজুডিস- মানে বিচারপ্রার্থী সম্পর্কে পক্ষ-বিপক্ষ শোনা আদালতের এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই বিচারপ্রার্থী সম্পর্কে নেতি ধারণা পোষণ করা। আর এজন্যই প্রিজুডিস যেকোনো বিচারকের জন্য সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা! যার সোজা মানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ পাঁচ বিচারক প্রিজুডিস রোগে আক্রান্ত। যার সোজা অর্থ তারা অযোগ্য প্রমাণিত।

যেমন আজও বাস্তবতা হলো, ওই ৯ এপ্রিলের পরে ১০ এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত কেন সুপ্রিম আদালত আর এই ইস্যুটাকে আর আদালতে তোলেনি? এর মানে কী? এর সোজা অর্থ, সংসদেই শেষে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়েছে এবং ইমরান ও তার দলের কেউ এতে কোনো বাধা সৃষ্টি করেইনি। এটাই ফ্যাক্টস! এর অর্থ আদালতের আগাম শঙ্কা প্রকাশ পুরাটাই অমূলক তা প্রমাণিত। যে আদালত আগাম শঙ্কা প্রকাশ করে সেটা আর আদালতই নয়। আদালত তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একেবারেই নয়। তাই আগাম অনুমানে সিদ্ধান্ত নেয়া তার কাজ নয়, হতে পারেন। অপরাধ ঘটার পরেই না বিচার শুরু করতে পারে। তাহলে এখন প্রশ্ন ইমরান ও তার দল কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত হবার আগেই তাদের সন্দেহের খাতায় বিচারকেরা ফেলেছেন কেন? এটাতে তো বিচারকেরাই বড় অপরাধী। অপরাধ করতে পারে মনে করে আদালত খুলে বসে থাকা বিচারক তারা! এই কি তাহলে তাদের পরিচয়?

আর সোজা অর্থ এই বিচারক গোষ্ঠী আসলে ভিখারি তত্ত্বে আপ্লুত। নিজ বিচার কাজ বা নিজ দায়দায়িত্ব কী সেসব কিছু ভুলে তারা আমেরিকা বা সেনাবাহিনীকে খেদমত করতে নিজ মর্যাদা বিসর্জন দিয়েছে এমন বিচারপতি তারা। এক কথায় তারা অযোগ্য ডিস-কোয়ালিফায়েড বিচারপতি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us