এবার জাপান-রাশিয়া লড়াই!

মো: বজলুর রশীদ | Apr 15, 2022 03:10 pm
এবার জাপান-রাশিয়া লড়াই!

এবার জাপান-রাশিয়া লড়াই! - ছবি : সংগৃহীত

 

রাশিয়া জাপানের কাছে বিশাল সামরিক মহড়া করেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে নতুন জাপানের সাথে আরেকটি যুদ্ধের জন্য পুতিন প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন সেনাদের জাপানের বিভিন্ন কৌশলগত এলাকায় আশ্রয় দিতে ৮০০ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে জাপান ।

চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া কুরিল দ্বীপগুলোতে ব্যাপক সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এই মহড়ায় প্রায় তিন হাজার ৫০০ সেনা, এসইউ-৩৫, এমআই-৮ হেলিকপ্টার, বেসশন-পি উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, টি-৭২বি৩ ট্যাংক এবং ইউএভি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই পদক্ষেপকে জাপানের বিরুদ্ধে পুতিনের ‘শক্তি প্রদর্শন হুঁশিয়ারি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মস্কো টোকিওর সাথে আঞ্চলিক শান্তি আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দেয়ার পর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

দক্ষিণের চারটি কুরিল দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে বিরোধ চলছে। এই বিরোধে রাশিয়ার কামচাতকা উপদ্বীপ এবং জাপানের হোক্কাইডোর মধ্যে সংযোগকারী বেশ কয়েকটি দ্বীপ জড়িত। আঞ্চলিক বিরোধটি চারটি দ্বীপপুঞ্জকে কেন্দ্র করে- যা রাশিয়া বলেছে যে, এটি তার কুরিল শৃঙ্খলের অংশ এবং জাপান এগুলোকে তার উত্তর অঞ্চল বলে অভিহিত করে। এই দ্বীপগুলো প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ওখোতস্ক সাগরকে পৃথক করেছে এবং রাশিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে জাপানও এগুলো দাবি করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জয় করে।

কুরিল দ্বীপপুঞ্জ বিরোধ জাপানে উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল বিরোধ নামে পরিচিত। চারটি দক্ষিণতম কুরিল দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে জাপান এবং রাশিয়ার মধ্যে আঞ্চলিক বিরোধ। কুরিল দ্বীপপুঞ্জের চেইনটি দক্ষিণ প্রান্তে জাপানি দ্বীপ হোক্কাইডো ও তাদের উত্তর প্রান্তে রাশিয়ান কামচাতকা উপদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। কুরিল চেইনটি চারটি বিতর্কিত দ্বীপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন সংযুক্ত করেছিল। বিতর্কিত দ্বীপগুলো সাখালিন ওব্লাস্টের দক্ষিণ কুরিল জেলা হিসেবে রাশিয়ান প্রশাসনের অধীনে রয়েছে। জাপান তাদের উত্তরাঞ্চল বা দক্ষিণ চিশিমা হিসেবে উল্লেøখ করে এবং হোক্কাইডো প্রিফেকচারের অংশ মনে করে।

১৯৫১ সালে সান ফ্রান্সিসকো শান্তিচুক্তি মিত্র ও জাপানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় যেখানে বলা হয়- জাপানকে অবশ্যই ‘কুরিল দ্বীপপুঞ্জের সমস্ত অধিকার, শিরোনাম ও দাবি’ ত্যাগ করতে হবে; তবে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সার্বভৌমত্বকেও স্বীকৃতি দেয়নি। জাপান দাবি করে, কিছু বিতর্কিত দ্বীপ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের অংশ নয় বিধায় এই চুক্তির আওতায় পড়ে না। রাশিয়া মনে করে, দ্বীপগুলোর ওপর সোভিয়েত ইউনিয়নের সার্বভৌমত্ব যুদ্ধোত্তর চুক্তিতে স্বীকৃত। জাপান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৬ সালে সোভিয়েত জাপান যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের অবসান ঘটালেও কোনো শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেনি। যৌথ ঘোষণার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়, সোভিয়েত ইউনিয়ন জাপানকে শিকোটান ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জের দু’টি ছোট দ্বীপকে জাপানের বিনিময়ে ইতোরুপু এবং কুনাশিরির দু’টি বড় দ্বীপের সমস্ত দাবি ত্যাগ করার প্রস্তাব দেয়; কিন্তু জাপান এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক প্রদত্ত দুই দ্বীপের প্রস্তাব এবং জাপানের দু’টি বড় দ্বীপ পুনরুদ্ধারের দাবির মধ্যে এই মতানৈক্যটি বর্তমান দিনেও বিতর্ক-বিরোধ চালানোর মূল ভিত্তি। তিন শক্তি- যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গ্রেট ব্রিটেন একমত হয়েছিল যে, কুরিল দ্বীপপুঞ্জ সোভিয়েতের হাতে তুলে দিতে হবে।

পটসডেম ঘোষণাপত্রে জাপানি অঞ্চলগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কায়রো ঘোষণার শর্তাবলি কার্যকর করা হবে এবং জাপানি সার্বভৌমত্ব হনশু, হোক্কাইডো, কিউশু, শিকোকু ও যে ক্ষুদ্র দ্বীপগুলো নির্ধারণ করা হয় তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।’

১৯৪৩ সালের কায়রো ঘোষণায় কুরিল দ্বীপপুঞ্জের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে বলা হয়েছিল- ‘জাপানকে সহিংসতা ও লোভের কারণে গৃহীত অন্যান্য সমস্ত অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা হবে।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কুরিলকে বোঝায়।

ইতোরুপু ও কুনাশিরি দ্বীপগুলো কুরিলের অংশ কি না এবং এভাবে তারা সান ফ্রান্সিসকো চুক্তির আওতাভুক্ত কি না, তা কুরিল দ্বীপপুঞ্জের বিরোধের অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। এই বিবাদে জাপানকে বেশ কিছু ছাড় দিয়েছে রাশিয়া। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়া কুরিল দ্বীপপুঞ্জে জাপানি নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ চালু করেছে। জাপানের জেলেদেরও রাশিয়ার একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে মাছ ধরার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো সফর করে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে কুরিল দ্বীপপুঞ্জের বিরোধ নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে ল্যাভরভ বলেন, ‘রাশিয়া ও জাপানের অবস্থানের মধ্যে গুরুতর পার্থক্য রয়ে গেছে।’ আরো বলেন, ‘জাপানকে অবশ্যই দ্বীপগুলোতে রাশিয়ার সার্বভৌম ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। দ্বীপগুলোর ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব আলোচনার বিষয় নয়।’ ল্যাভরভ উক্তি করেন, ‘জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল মেনে নিয়েছে কি না।’
২০২০ সালের অক্টোবরে রাশিয়া জানায় যে, তারা কুরিল দ্বীপপুঞ্জে সামরিক মহড়ার জন্য একটি অ্যান্টি-এয়ার মিসাইল সিস্টেম স্থাপনের কাজ করছে। রাশিয়া বিতর্কিত দ্বীপ ইতোরুপু যুদ্ধের দায়িত্ব পালনের জন্য এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম মোতায়েন করেছিল। ইতোরুপুতে আগে থেকেই স্বল্প পাল্লøার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল সিস্টেম চালু ছিল।

৭ মার্চ, ২০২২ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দক্ষিণ কুরিল দ্বীপগুলো ‘জাপানের এমন অঞ্চল যেখানে জাপানের সার্বভৌমত্ব রয়েছে। ৮ মার্চ, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এই চারটি দ্বীপকে জাপানের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে এমন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অথচ সাবেক জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি ২০১৯ সালে দ্বীপগুলোকে জাপানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন কি না, তখন তিনি রাশিয়ার সাথে ‘আলোচনার ক্ষতি না করার জন্য’ প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকার করেছিলেন।

২০২২ সালের ২১ মার্চ রাশিয়া জাপানের সাথে শান্তিচুক্তি আলোচনা থেকে সরে আসার ঘোষণা এবং ইউক্রেনের ওপর জাপান কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে বিতর্কিত কুরিল দ্বীপপুঞ্জ সম্পর্কিত যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো স্থগিত করে দেয়। ২৫ মার্চ, রাশিয়া বিতর্কিত দ্বীপগুলোসহ কুরিল দ্বীপপুঞ্জে তিন হাজার পাঁচ শতাধিক সেনা ও শত শত আধুনিক সামরিক যানবাহন নিয়ে মহড়া শুরু করে।

শান্তিচুক্তির জন্য জাপানকে পুতিন প্রস্তাব দিয়েছেন। কেননা, জাপান ও রাশিয়া এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শত্রুতা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেনি। পুতিন আরো জানান, অঞ্চলের নিরাপত্তা একটি প্রধান ইস্যু। এখানে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের বিষয়ে রাশিয়া উদ্বিগ্ন। কিন্তু জাপান যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ রাডার স্টেশন ও প্রতিরোধ যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুতিন বলেন, ‘এর সব কিছুই আলোচনার বিষয়। আমরা ৭০ বছর ধরে আলোচনাই করছি।’ এ বিষয় নিয়ে পুতিন জাপানের সাথে ২২ বার বৈঠক করেছেন।

বিরোধ সমাধানের জন্য আলোচনা চলাকালে ইউক্রেন ইস্যুতে জাপানি নিষেধাজ্ঞার জবাবে এ বছরের ২১ মার্চ মস্কো একতরফাভাবে সরে আসে। এর কিছুদিন আগে ইউক্রেন আক্রমণের পর মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে টোকিও।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জাপানের সাথে শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা মস্কোর নেই। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর কারণ ব্যাখ্যা করে জানায়, আলোচনা ও চুক্তির জন্য বন্ধুসুলভ মনোভাব থাকা দরকার। যারা রাশিয়ার যুদ্ধকালীন দুর্দিনে বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়, দেশের ক্ষতির জন্য যারা যুদ্ধে ইন্ধন জোগাচ্ছে, তাদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে তাদের সাথে কিভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মৌলিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে? শান্তি আলোচনা থেকে রাশিয়ার সরে আসায় জাপান তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে সর্বশেষ পরিস্থিতি ঘটেছে এবং এই বিষয়টিকে জাপান-রাশিয়া সম্পর্কের দিকে নিয়ে যাওয়ার রাশিয়ায় প্রচেষ্টা অত্যন্ত অযৌক্তিক এবং একেবারে অগ্রহণযোগ্য।’

মার্কিন সেনাদের হোস্ট করার জন্য জাপানের সংসদ চলতি বছর, ২৫ মার্চ অনুমোদন দিয়েছে। এতে আট বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হবে। এই পদক্ষেপটি সামরিক ইন্টিগ্রেশন, সমন্বিত প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিরোধের ওপর সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তুলে ধরবে। উন্নত ভার্চুয়াল যুদ্ধ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ক্রয়ের জন্য ১৬৪ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচের একটি নতুন তহবিল বিভাগও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জাপান তার তিন প্রতিবেশী- চীন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া থেকে ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। রাশিয়া জাপানের নিকটবর্তী বিতর্কিত দ্বীপগুলোতে সামরিক মহড়া চালিয়েছে এবং উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে উত্তেজনা বাড়ছে, তাতে জাপানও উদ্বিগ্ন। আবার তাইওয়ানকে বিপদকালীন সহায়তার জন্য জাপান তাইওয়ানের সাথে চুক্তি করেছে, যেখানে সামরিক ও সব সহায়তা রয়েছে। এই চুক্তি চীনকে দারুণ ক্ষেপিয়ে দিয়েছে। চীন প্রথম সতর্কতামূলক শটটি নিক্ষেপ করেছিল কারণ তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাপানকে চীনের বিরুদ্ধে কোনো মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। তারপরও জাপান অকাস এবং কোয়াডের অন্যতম অ্যাক্টিভ সদস্য। উত্তর কোরিয়া যেসব পরীক্ষা চালায় সেগুলো সব সময় জাপানের তীরবর্তী এলাকা লক্ষ করে চালানো হয়। যদি জাপানের বিরুদ্ধে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া একত্রিত হয়, কোনো জোট, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত জাপান ও প্রশান্ত সাগরে এসে জাপানকে উদ্ধার করা সহজসাধ্য বিষয় হবে না।

জাপানকে তার আত্মরক্ষা বাহিনীর প্রস্তুতি পরীক্ষা করতে হবে; তবে কর্মীদের ঘাটতি জাপানের এক সমস্যা। একটি যুদ্ধের ক্ষেত্রে, টোকিও রিজার্ভ বাহিনীকে ডাকতে হবে। সে সংখ্যা খুব একটা বড় নয় এবং তাদের প্রস্তুতির মাত্রা অজানা। জাপানের বর্তমান আইনি ব্যাখ্যাগুলো তিনটি রাজনৈতিক শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো শক্তি প্রয়োগে বাধা দেয়। শত্রুতা শুরু হওয়ার আগে বাহিনীর দ্রুত অবস্থান করতে অক্ষমতা দেশের জন্য একটি বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। জাপানকে খুব বেশি অ্যান্টি-এয়ার এবং অ্যান্টি-শিপ মিসাইল এবং মাল্টিপল-লঞ্চ রকেট সিস্টেম মজুদ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে জাপানকে শিক্ষা নিতে হবে। ইউক্রেন রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশী সহায়তা একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রয়োজনের সময় পাশে না দাঁড়ায় তবে জাপান অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে; অবরোধ, নিন্দাবাদ, মানবিক সহায়তা জাপানের ক্ষেত্রে তেমন কাজ নাও করতে পাারে। কৌশলগত ওকিনাওয়াতে বর্তমানে ৫০ হাজারের মতো মার্কিন সেনা রয়েছে। জাপান ২০২৪ সালের মার্চ নাগাদ ২৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করতে যাচ্ছে। জাপানে কর্মী ব্যবস্থাপনা সঙ্কট রয়েছে। প্রায় ১০ লাখ বিদেশী শ্রমিক জাপানে কাজ করে। এর মধ্যে চীনা নাগরিকই সর্বাধিক, প্রায় সাত লাখ। এর পর ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন।

জাপানকে এখন অবশ্যই বুঝতে হবে, রাশিয়া থেকে তথাকথিত উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার চেষ্টা করা একটি নিষ্ফল অনুসন্ধান এবং সে অনুযায়ী কাজ করাও। ভøাদিমির পুতিন ক্ষমতায় থাকার সময় জাপান দক্ষিণের কুরিল দ্বীপপুঞ্জের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য কয়েক দশক ধরে তার দীর্ঘকালীন উচ্চাকাক্সক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হবে না, যা আগে হোক্কাইডো প্রিফেকচারের অংশ ছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন পুতিনের কঠোর মনোভাবের প্রকাশ যিনি ভূখণ্ড অর্জনের জন্য বদ্ধপরিকর।

যাই হোক, ২০১৯ সালে শিনজো আবের ‘দুই-দ্বীপ’ পদ্ধতিকে একটি সম্ভাব্য সাফল্য বলে মনে হয়েছিলÑ দক্ষিণ কুরিলের কুনাশিরি এবং ইতোরুফু দ্বীপপুঞ্জে জাপানের দাবি পরিত্যাগ করা এবং কেবল শিকোটান ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জের প্রত্যাবর্তনকে গ্রহণ করা।

জাপানের নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে যা আরো গুরুতর, রাশিয়া তখন থেকেই উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোতে সামরিক অবস্থান ও আঞ্চলিক মালিকানাকে সুসংহত করে চলেছে। সামরিক মহড়া হওয়ার সাথে সাথে দ্বীপগুলোতে রাশিয়ার সামরিকীকরণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে।

জাপান শান্তিচুক্তি সম্পাদন করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সেখানে একটি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনসহ সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের অনুমতি দেবে। যদিও এসব কিছু অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান, পুতিন বিষয়টি আগেভাগে বুঝে ফেলেছেন এবং বৈঠক বাতিল করার এটিও অপর এক কারণ।
আলোচনাকালে পুতিন ওকিনাওয়াসহ জাপানি ভূখণ্ডে অবস্থানরত মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিষয় নিয়ে জাপানকে প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার জোট থেকে সরে আসতে হবে, এমন অসম্ভব শর্তটি নির্ধারণ করেছেন। এ থেকেই জাপানকে আরো কৌশলী হওয়া দরকার ছিল। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, ‘রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক আমরা আর আগের মতো রাখতে পারব না।’

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us