পেটে চর্বি মানেই মারাত্মক বিপদ!

অন্য এক দিগন্ত | Apr 13, 2022 03:03 pm
পেটে চর্বি মানেই মারাত্মক বিপদ!

পেটে চর্বি মানেই মারাত্মক বিপদ! - প্রতীকী ছবি

 

সুস্থ থাকার জন্য নিজের কোমরের ওপর নজর রাখার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শরীরের মাঝামাঝি এই জায়গায় অতিরিক্ত পরিমাণে বিপদজনক চর্বি জমা হলে সেটা নানা ধরনের স্বাস্থ্য-ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এজন্য নিয়মিত বিরতিতে কোমরের মাপ নেয়ার জন্য লোকজনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

কত চওড়া হবে
ডাক্তাররা বলছেন, স্বাস্থ্য-ঝুঁকি কমাতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের কোমরের মাপ তার উচ্চতার অর্ধেকেরও কম থাকতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে আপনি যদি ১৭৫ সেমি বা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা হন তাহলে আপনার কোমরের মাপ ৮৭.৫ সেমি কিম্বা ৩৪ ইঞ্চির কম হতে হবে।

ইংল্যান্ডে স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর হেলথ এন্ড কেয়ার একসিলেন্স বা নাইস এই পরামর্শ দিয়েছে।

পুষ্টিবিদ এবং ঢাকায় স্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইলের ব্যাপারে সেবা দিয়ে থাকে এরকম একটি প্রতিষ্ঠান ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা শারমিন আক্তার জানান, প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য কোমরের আদর্শ মাপ হচ্ছে ৩৫ ইঞ্চি কিম্বা ৮৮ সেমি, আর পুরুষদের কোমরের জন্য এই মাপ ৪০ ইঞ্চি কিম্বা ১০১ সেমি।

'এর চেয়ে বেশি হলে সেটা বিপজ্জনক। কোমর এর চেয়ে চওড়া হলে টাইপ টু ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ক্যান্সার, হৃদরোগ ইত্যাদি হতে পারে,' বলেন তিনি।

বিএমআই হিসাব
নাইস বলছে, দেহের স্থূলতা মাপার জন্য যে বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই পদ্ধতি সেটাও উপকারী কিন্তু পেটের ওখানে ওজন বেড়ে গেলে এই পদ্ধতিতে সেটা ধরা পড়ে না।

এর ফলে যারা বিএমআই-এর হিসেবে স্বাস্থ্যবান ক্যাটাগরিতে আছেন তারাও আসলে তাদের কোমরে অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি বহন করতে পারেন।

শরীরের উচ্চতা আর ওজন হিসেব করে এই বিএমআই পরিমাপ করা হয়।

"মেয়েদের ক্ষেত্রে নাভির দুই ইঞ্চি উপরে এবং এবং ছেলেদের নাভি বরাবর কোমরের মাপ নিতে হবে," বলেন তিনি।

পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার আরো একটি হিসেবের কথা বলেছেন যা দিয়ে একজন ব্যক্তির ওজন বিপদসীমার উপরে চলে গেছে কি না সেটা পরিমাপ করা যায়।

কোমর ও হিপের অনুপাত করে এই হিসাব করা হয়। এজন্য কোমরের মাপকে হিপের মাপ দিয়ে ভাগ করা হয়।

এই মাপের ফল যদি ০.৭ থেকে ০.৮ হয় তাহলে সেটাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু এর চেয়ে বেড়ে গেলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

মিস আক্তার বলেন মেয়েদের ক্ষেত্রে একটা পর্যায়ে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে আরেক পর্যায়ে কোমরের মাপ বেড়ে যেতে পারে।

এর সাথে খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি জড়িত।
তিনি বলেন, আমরা যেভাবে বসে কাজ করি তার ফলেও তলপেটে চর্বি জমে যেতে পারে।

"আমরা তলপেটের ওপর ভর দিয়ে বসে কাজ করি। তখন তিন/চার মাসের মধ্যেই কোমর চওড়া হয়ে যেতে পারে।"

এজন্য তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বসে না থেকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে উঠে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করার ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, কোমরে দু'ধরনের চর্বি থাকে। এক ধরনের চর্বি ভেতরে বসে থাকে এবং ভেতর থেকে সে বাইরের দিকে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে বাইরে থেকে সেই চর্বি দেখা যায়।

এই চর্বিকে সামাল দেয়ার জন্য আরেক ধরনের চর্বি এসে তলপেটে জমা হয়।

তিনি জানান, স্যাচুরেটেটেড ফ্যাট বেশি খাওয়ার পাশাপাশি ঠিক মতো ঘুম না হলেও কোমরে চর্বি জমতে পারে।

যেসব অসুবিধা হয়
"এছাড়াও বয়স যখন ৪০ এর বেশি হয়, ছেলে বা মেয়ে, তখন তলপেটে ধীরে ধীরে চর্বি জমে যেতে থাকে। এর ফলে দেহের আকার বদলে যায়। উপরের অংশ চিকন এবং নিচের অংশ চওড়া হয়ে যায়।"

"তখন অগ্নাশয় ও আথ্রাইটিসের, মেরুদণ্ডের সমস্যা দেখা দেয়," বলেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নাইসের নতুন নির্দেশনায় বলা হচ্ছে ব্রিটেনে কিছু এশীয় জনগোষ্ঠী এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে কোমরে অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বিজাত টিস্যু জমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি।

সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, বাংলাদেশেও এখন এই সমস্যা বাড়ছে। এধরনের সমস্যা নিয়ে প্রচুর মানুষ তাদের কাছে আসছে।

"অনেকেই আছে সারা দেহে হয়তো তেমন ফ্যাট সেল নেই, কিন্তু শুধু পেটটা কমানোর জন্যই তারা আমাদের কাছে আসছেন," বলেন তিনি।

তিনি বলেন, "কোনো নারীর ওজন হয়তো বেশি না কিন্তু তলপেট বেড়ে গেলে হরমোনের ভারসাম্যে সমস্যা দেখা দেয়। ব্যাক-পেইন হয়, হাঁটুতে ব্যথা করে, গর্ভধারণে সমস্যা হয়। কোমর চওড়া হয়ে যাওয়ার কারণে পুরুষেরও এই একই ধরনের সমস্যার পাশাপাশি তাদের ইনফার্টিলিটি বেড়ে যাচ্ছে।"

তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, কোমর মাপার এই পদ্ধতি যে সবার জন্য কাজ করে তা নয়। যারা খর্বকায় বা খুব বেশি ছোট অথবা ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ, বয়সের সাথে সাথে যাদের উচ্চতা কমে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে এই পরিমাপ সঠিক চিত্র নাও পাওয়া যেতে পারে।

সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us