পাকিস্তানের পরিবর্তন মুসলিম দুনিয়ায় প্রভাব ফেলবে?
ইমরান খান - ছবি : সংগ্রহ
পাকিস্তানে সাড়ে তিন বছরের ইমরান খানের শাসনে নানা সাফল্য ব্যর্থতার পরও তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা এখনো রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনি ভালো সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু জনসমর্থন পাকিস্তানের মতো দেশে সাফল্যের একমাত্র নির্ণায়ক হয় না। জনসমর্থন থাকলেও সামরিক এস্টাবলিশমেন্ট না চাইলে তিনি পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবেন কিনা সংশয় রয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা প্রস্তাবের আগে দেয়া ভাষণে অতীতে রাজনৈতিক তিক্ততা ভুলে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন। প্রতিহিংসার রাস্তায়ও তিনি অগ্রসর হবেন না বলে জানিয়েছেন। এসব বক্তব্য আগের বলা কথাবার্তার সাথে মেলে না।
এতে ধারণা করা হয় যে, সামরিক প্রতিষ্ঠানের সাথে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবর্তে শান্তিপূর্ণভাবে দেশটির জন্য জটিল সময় পার করার আলোচনা হয়ে থাকতে পারে। ইমরান খানের প্রতিও প্রভাবশালী পক্ষ থেকে এই বার্তা দেয়ার কথাই জানা যাচ্ছে যে তিনি দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার মতো প্রচার প্রচারণায় না গিয়ে যেন দলকে শক্তিশালী করে পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন। ২০২২ সালের শেষ দিকে এই নির্বাচন হতে পারে মর্মে আশ্বাস দেয়ার কথা জানা যাচ্ছে। পরস্পরবিরোধী বহু দলের যে কোয়ালিশন এখন সরকার গঠন করছে তাতে ডিপ স্টেট চাইলে যেকোনো সময় সরকার ভেঙে পড়তে পারে। ফলে নতুন সরকারের আয়ু এক বছরের কম সময় হওয়া স্বাভাবিকই হতে পারে।
পাকিস্তানের পরিবর্তন মুসলিম বিশ্বকে কতটা প্রভাবিত করবে সেই প্রশ্নও আলোচিত হচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন আমেরিকান স্বার্থের অনুকূলে বলে বিবেচনা করা হয়। ইন্দোনেশীয় সরকার ভারসাম্যের নীতি অনুসরণ করলেও অর্থনৈতিক কারণে পাশ্চাত্যের সাথে ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এর মধ্যে এখনো আমেরিকার সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্য। মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ন্ত্রক প্রভাব ফিরে পাওয়ার জন্য ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় প্রয়োজন। এটি ঘটলে এক দিকে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা নির্মাণের উদ্যোগ গতি হারাবে। অন্য দিকে আমেরিকান প্রভাব যে চীন-রুশ বলয়ের কারণে চ্যালেঞ্জে পড়ছে সেটি ভিন্ন মুখ নিতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী মনযোগের কেন্দ্র। পাকিস্তানের ওপর প্রভাব প্রতিষ্ঠা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক হতে পারে। আগামী বছর তুরস্কে নির্বাচন। ন্যাটো সদস্য দেশ হলেও তুরস্কের সাথে বাইডেন প্রশাসনের সম্পর্ক খুব একটা স্বস্তিকর নয়। ফলে অনেকের ধারণা বাইডেনের রেজিম চেঞ্জের তালিকায় সৌদি আরব, আমিরাতের সাথে তুরস্কও রয়েছে। এ বিষয়ে সচেতন থাকায় তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তিক্ততা কমিয়ে এনে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করছে। আমিরাত, সৌদি আরব, মিসর, ইসরাইল এমনকি গ্রিস, আর্মেনিয়ার সাথেও দূরত্ব কমিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে আঙ্কারা।
ইউক্রেন সঙ্কটে তুরস্কের ভূমিকা ছিল বেশ সতর্ক। এই যুদ্ধ সামনে আরো গড়ালে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আঙ্কারার অবস্থান কতটা টিকে থাকবে বলা কঠিন। এই যুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে তুরস্ক। পাকিস্তানের ইমরান খানের সাথে এরদোগানের বোঝাপড়া বেশ গভীর বলে মনে করা হতো। নতুন সরকারের সাথে সম্পর্কের সমীকরণ কী দাঁড়ায় সেটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী হবার পর এরদোগান তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন বিলওয়াল জারদারি। তাদের পারিবারিক মিত্র হলো এমবিজেড এর নাহিয়ান পরিবার। অন্য দিকে শরিফ পরিবারের পৃষ্ঠপোষক মনে করা হয় সৌদি আরবকে। তবে পাকিস্তানের নতুন পর্বে সরকারের ওপর আমেরিকান প্রভাব থাকবে অনেক বেশি। শরীফ পরিবারের সাথে মোদির সম্পর্ক বরাবরই উষ্ণ। পাকিস্তানের পরবর্তী পররাষ্ট্র সম্পর্কে এর প্রভাব কমবেশি পড়বে। তবে রাজনীতিবিদরা ইচ্ছা করলেই দেশটিতে সবকিছু করতে পারেন না। জটিল নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র কৌশলের নিয়ন্ত্রণ থাকে সামরিক প্রতিষ্ঠানের উপর।
mrkmmb@gmail.com