পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই স্বস্তি পেলেন শাহবাজ শরিফ

অন্য এক দিগন্ত | Apr 11, 2022 05:04 pm
শাহবাজ শরিফ

শাহবাজ শরিফ - ছবি : সংগ্রহ

 

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সাময়িক স্বস্তি পেলেন শাহবাজ শরিফ। সোমবার ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ’-এর প্রেসিডেন্ট শরিফের বিরুদ্ধে চলা আর্থিক নয়ছয়ের মামলা আপাতত মুলতুবি রাখাল পাকিস্তানের স্পেশ্যাল এফআইএ কোর্ট।

ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শাহবাজ শরিফের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত চালায় পাকিস্তানের ‘ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি’ (এফআইএ)। তদন্তকারীদের রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে শাহবাজ শরিফের পরিবারের ২৮টি বেনামি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলোর মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেআইনি লেনদেন হয়েছে। বলে রাখা ভালো, ২০২০ সালে শরিফের ছেলে শাহবাজ ও সুলেমানের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি দমন ও আর্থিক নয়ছয় বিরোধী আইনে মামলা করে এফআইএ। এবার সেই মামলায় সাময়িক স্বস্তি পেলেন পাকিস্তানে হবু প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, ইমরানের দলের নেতা তথা পাকিস্তানে প্রাক্তন আইনমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী অভিযোগ জানিয়েছেন যে লাহোরে এফআইএ পক্ষের প্রধান আইনজীবিকে আদালতে হাজির না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে মামলাটির রায়দান আটকে যায়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই মামলায় এফআইএ-র প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তঅ মোহম্মদ রিজওয়ান ইস্তফা দিয়েছেন। জানা গেছে, শাহবাজ শরিফ, হামজা শাহবাজ এবং তেহরিক-ই-ইনসাদের বিদ্রোহী নেতা জাহাঙ্গীর তারিনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছিলেন তিনি। এদিকে, শরিফ পরিবারের অভিযোগ, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণে সাজানো হয়েছে।

এই মুহূর্তে পাকিস্তানে প্রচারের বেশিরভাগ আলো কেড়ে নিচ্ছেন যে ব্যক্তি, তিনি শাহবাজ শরিফ। শনিবার মধ্যরাতে ক্ষমতাচ্যুত ইমরান খান আস্থাভোটে হেরে ক্ষমতা হারানোর পরই নতুন প্রধানমন্ত্রীর দিকে ঘুরে গিয়েছে যাবতীয় প্রচারের আলো। তিনি আর কেউ নন, সদ্য প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা শাহবাজ শরিফ। সম্পর্কে তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। শাহবাজ তার বড় ভাইয়ের মতোই পাকিস্তানের রাজনীতিতে পোড় খাওয়া ব্যক্তিত্ব। গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ সামলেছেন। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। ছিলেন পাঞ্জাবের সবচেয়ে বেশি সময়ের মুখ্যমন্ত্রী। পর্যায়ক্রমে তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হন। ক্ষমতাচ্যুত ভাই দেশ ছাড়তে বাধ্য হলে পাক রাজনীতিতে শাহবাজের গুরুত্ব হু হু করে বেড়ে যায়। কারণ এরপর তিনিই পাকিস্তানের অন্যতম বিরোধী দলের সর্বোচ্চ নেতা হয়ে ওঠেন। মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হন।

রাজপথে বিপুল সমর্থন দেখে আপ্লত ইমরান : ‘এমন জনসমুদ্র কখনো দেখিনি’
শনিবার মাঝরাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন ইমরান খান। শেষমুহূর্ত পর্যন্ত গদি আঁকড়ে ধরার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেননি তিনি। তবে এখনো হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। রোববার রাতে ইমরানের ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানের রাজপথে নেমে পড়েন তার হাজার হাজার সমর্থক। আর এই ঘটনায় আপ্লুত পাকিস্তানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে পাকিস্তান তেহরিক-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান লেখেন, 'এহেন জনসমুদ্র কখনো দেখিনি। এতেই বোঝা যায় মানুষ জালিয়াতদের আমদানি করা বিদেশী সরকারকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। স্থানীয় মির জাফরদের দ্বারা তৈরি মার্কিন মদতপুষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকল পাকিস্তানি নাগরিককে ধন্যবাদ। মির জাফররা জামিনে মুক্ত জালিয়াতদের ক্ষমতায় বসাতে চলেছে।'

বলে রাখা ভালো, রোববার রাতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে ইমরান খানের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। মশাল হাতে ইসলামাবাদ, করাচির মতো শহরের রাজপথে নেমে পড়েন হাজার হাজার মানুষ।

বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, মূল্যবৃদ্ধি ও আর্থিক দুর্নীতির জেরে অনেকেই ইমরান খানকে দুষছেন। কিন্তু অনেকেই আবার আমেরিকার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় ইমরানকে নায়ক বলে মনে করছেন। রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক মজবুত করার জেরে ওয়াশিংটনই যে কলকাঠি নেড়ে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে সেই কথা বিশ্বাস করেন পাকিস্তানি যুবসম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ।

উল্লেখ্য, লড়াই যে শেষ হয়নি সেই ইঙ্গিত দিয়ে রোববার বিকেলে টুইট করেন সদ্য ক্ষমতা হারানো রাষ্ট্রনেতা। ডাক দেন দেশের জন্য নতুন স্বাধীনতা আন্দোলনের। ক্ষমতা হারানোর পরে শনিবার রাত থেকে রোববার সারা দিন প্রকাশ্যে আসেননি ইমরান। আস্থা ভোটে হারের পরও টুইটারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি তিনি। কোনো বার্তা দেননি দেশবাসীর উদ্দেশেও। ফলে ইমরানকে নিয়ে ক্রমশ জল্পনা বাড়ছিল। অবশেষে মুখ খুললেন তিনি। এবং তার গদি হারানোর পিছনে বিদেশী ষড়যন্ত্রের কথাই ফের শোনা গেল তার মুখে। এর আগেও ইমরান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বৈদেশিক শক্তি। এমনকী, একবার তিনি আমেরিকার নামও নিয়ে ফেলেন। তার অভিযোগ, আমেরিকাই কলকাঠি নাড়ছে তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে। এবার ফের সেই ইস্যুতেই সরব হলেন তিনি।

সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us