বুদ্ধির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে ৩ খাবার
বুদ্ধির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে ৩ খাবার - প্রতীকী ছবি
মস্তিষ্ক হো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের একটি। মস্তিষ্ক থেকে সঙ্কেত পেলে তবেই হৃদ্যন্ত্র ঠিক ভাবে কাজ করে, ফুসফুস নিজের দায়িত্ব পালন করে, চোখ দেখতে পায়। অর্থাৎ, মস্তিষ্কের ওপর নির্ভর করে গোটা শরীরের কার্য ক্ষমতা। ফলে মস্তিষ্কের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে দিকে নজর দেয়া জরুরি।
কিন্তু আমরা অজান্তে এমন অনেক কাজ করি, যার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। যেমন কিছু খাবার আছে, যা মস্তিষ্কে কুপ্রভাব ফেলে। নিয়মিত সে সব খাদ্য খেলে কমে যেতে পারে বুদ্ধি। সঙ্গে দুর্বল হতে থাকে স্মৃতিশক্তিও। এ সব খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ডিমেনশিয়ার মতো রোগের আশঙ্কাও বাড়ে বলে জানাচ্ছে হালের এক সমীক্ষা রিপোর্ট। সে সমীক্ষায় এমনও আশঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে যে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে গোটা পৃথিবীর ছয় কোটিরও বেশি মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হবেন শুধু খাদ্যাভাসের কারণে।
জেনে নিন কোন তিনটি খাদ্য বুদ্ধির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কী খেলে কমতে পারে বুদ্ধি?
১) অতিরিক্ত চিনি দেয়া যেকোনো খাবার মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। তার মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হলো চিনিযুক্ত সব নরম পানীয়, সোডা এবং বোতলবন্দি ফলের রস।
২) যে সব খাবারে ট্রান্স ফ্যাট বেশি, তা-ও মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। ট্রান্স ফ্যাট মাংস কিংবা দুধে যথেষ্ট থাকে। তা আশঙ্কার নয়। কিন্তু প্রযুক্তির সাহায্যে কারখানায় তৈরি ট্রান্স ফ্যাট ক্ষতি করে। ফলে এক দিকে যেমন কম খেতে হবে সাদা তেল, তেমনই মার্জারিন, প্যাকেট বন্দি চিপ্স-চকোলেটও বাদ দিতে হবে। ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে প্যাকেটবন্দি কেক-কুকিজেও।
৩) মদ্যপান যারা করেন, তারা জানেন সামান্য মদেরও প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের উপর। মদের প্রভাবে বুদ্ধি লোপ তো পায়ই, সাথে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়, ভাবনা ওলট-পালট হয়ে যায়। এমনকি, দৃষ্টিশক্তিও কমে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
রাতকানা রোগ কি কেন হয়
ডা: মো: ছায়েদুল হক
রাতকানা রোগ কি কেন হয় -
রাতকানা রোগ কী
রাতকানা রোগ বলতে রাতে বা কম আলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম যদিও দিনের বেলায় বা আলোতে তেমন একটা দৃষ্টিসমস্যা থাকে না। এমনটি কেন হয়? আসলে দেখার জন্য আমাদের চোখে একই সাথে দু’টি সিস্টেম বিদ্যমান। দিনের আলোতে দেখার জন্য একটি এবং কম আলো বা অন্ধকারে দেখার জন্য ভিন্নতর একটি সিস্টেম কাজ করে।
দেখার জন্য চোখ আলোর মাধ্যমে বস্তু থেকে প্রাথমিক সঙ্কেত বা সিগন্যাল সংগ্রহ করে ফটোরিসেপ্টর নামক রেটিনার বিশেষ এক ধরনের কোষ। এই ফটোরিসেপ্টর আবার দুই ধরনের। কোণ ফটোরিসেপ্টর এবং রড ফটোরিসেপ্টর। কোণ ফটোরিসেপ্টর দিনের বেলায় বা অধিকতর আলোতে সংবেদনশীল। আর রড ফটোরিসেপ্টর অন্ধকার বা স্বল্প আলোতে সংবেদনশীল। একটি সক্রিয় হলে অন্যটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্ক্রীয় হয়ে যায়।
দিনের বেলা যখন চোখে আলো আপতিত হয় তখন দ্রুত কোণ ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হয়। একই সময়ে কিছু রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হলেও দ্রুতই এটি সংবেদনশীলতা হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ফলে তখন একমাত্র কোণ ফটোরিসেপ্টর সক্রিয় থাকে। এমতাবস্থায় দেখার সব কাজ কোণ ফটোরিসেপ্টরের মাধ্যমে সাধিত হতে থাকে। দিন শেষে বা আলো থেকে যখন আমরা অন্ধকার বা কম আলোতে প্রবেশ করি তখন উল্টো ঘটনার অবতারণা হয়। এখানে দ্রুত কোণ ফটোরিসেপ্টর তার সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে এবং রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হতে থাকে। ৫-১০ মিনিট সময়ের ব্যবধানে রড ফটোরিসেপ্টরের সংবেদনশীলতা কোণকে ছাড়িয়ে যায় এবং ১৫-৩০ মিনিটের সময়ের মধ্যে রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে দেখার জন্য শতভাগ প্রস্তুত হয়ে যায়। এটিকে বলা হয় ডার্ক এডাপ্টেশন বা অন্ধাকারে মানিয়ে নেয়া। রাতের বেলায় গাড়ি চালক গাড়ির ভেতরের আলো নিভিয়ে দিয়ে আসলে অন্ধকারে চোখকে মানিয়ে নিতে তথা রড ফটোরিসেপ্টর সিস্টেমকে সক্রিয় করে থাকে।
এখন যদি কোন কারণে রড সিস্টেম বা রড ফটোরিসেপ্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে রাতের দেখায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। এটিকে বলা হয় রাতকানা বা নিক্টেলোপিয়া।
রাতকানা রোগের কারণ
ভিটামিন এ স্বল্পতা : শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ ঘাটতিজনিত কারণে চোখের রড সিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে শিশুর ডায়রিয়াজনিত কারণে হঠাৎ করে ভিটামিন এ ঘাটতি তীব্র হলে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। ভিটামিন এ কেম্পেইনের কারণে এ সমস্যার তীব্রতা আগের যেকোনো সমসয়ের চেয়ে কম। তবে এখনো এটি ঝুঁকিমুক্ত নয়।
চোখের রোগ : চোখের এমন কিছু সমস্যা আছে যেগুলোতে রড সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাতকানা রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা (আরপি); হাই মায়োপিয়া; রেটিনাল ডিস্ট্রোফি ইত্যাদি।
চিকিৎসা
উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন-এ ব্যবহারে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে। প্রাণিজাত যেমন কলিজা এবং শাকসবজি যেমন গাজর, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বিদ্যমান।
সতর্কতা
ধুমপান ও রেটিনো টক্সিক কিছু ওষুধ যেমন হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই ইত্যাদিতে ব্যবহৃত), টেমোক্সিফেন (ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত) সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
উচ্চমাত্রার ভিটামিন-এ বা বিটা কেরোটিন দীর্ঘদিন ব্যবহারে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার ধুমপান ও বিটা-কেরোটিন সাপ্লিমেন্ট দীর্ঘদিন একসাথে চলতে থাকলে ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে।
এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস (চক্ষু)
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক- জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল।
কনসাল্ট্যান্ট- আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার
৩৮/৩-৪ রিং রোড, আদাবর, ঢাকা।
ফোন : ০১৯২০৯৬২৫১২