ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার পথে বাধা
মোদি ও বাইডেন - প্রতীকী ছবি
আর এখান থেকেই দৃশ্যপটে ভারতের প্রবেশের সুযোগ খুলে যায়। রাশিয়ার ওপর এখন আমেরিকা, ইউরোপ ছাড়াও আমেরিকান কোয়াড সদস্য (কেবল ভারত ছাড়া) সবারই অবরোধ আরোপিত আছে। রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এক বড় উপায় হলো তার মাটির নিচের সম্পদ বিক্রি করা। কাজেই এই সম্মিলিত অবরোধ রাশিয়ার উপরে যথেষ্ট ভারী প্রভাব এনেছে। আবার ভারতের জনসংখ্যা ১৩৫ কোটি যার কাছাকাছি একমাত্র চীন। এমন বিশাল জনসংখ্যার দেশে জ্বালানি চাহিদা অনুমেয়। তাই পুতিনও ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলার সমতুল্য ছাড় দেয়াতে ভারত ১৬ বিলিয়ন ব্যারেল তেল কিনে নিয়েছে রাশিয়া থেকে রুবলে। আর এটা স্বভাবতই আরোপিত সব অবরোধকেই ফাঁকি দেয়া। অতএব আমেরিকার চোখে ভারত বেয়াড়া এক দুষ্ট ছেলে হয়ে উঠেছে। তাই আমেরিকা ভারতকে প্রথমে বুঝিয়ে বলা, পরে কড়া কথা আর হালকা হুমকি দিতে দিতে গত এক মাস পার করে ফেলেছে। এখন এরপর আগামী পরশু ওয়াশিংটনে বসছে দুপক্ষের এক ক্রুশিয়াল বৈঠকে।
এমনিতে বাইডেনের দুই অস্ত্র- অবরোধ আর মানবাধিকারের কথা যদি বলি তবে শুরু থেকেই বাইডেনের মানবাধিকার- এই অস্ত্র তাক করা ছিল মূলত ভারতের দিকে। না ভারতকে ঠিক কোনো বিশেষভাবে ঘায়েল করার জন্য নয়। বরং বাইডেনের দেখানো দরকার এই অস্ত্র তিনি সবার উপরে সমান প্রয়োগ করছেন কোনো বৈষম্য বা কাউকে খাতির ছাড়া। এ ছাড়া এটা বাইডেনের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল। বরং ভারতের পাওনা তিনটা অবরোধের সিদ্ধান্ত তৈরি আছে কিন্তু তিনি কার্যকর না করে ফেলে রেখেছেন। অর্থাৎ বাইডেনের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই বাইডেন-ভারত এক লাইনে অ্যালাইন করে আর নাই, চলছে না এবং এটাই তাদের ফান্ডামেন্টাল বিরোধ। মানে কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে চলতে পারবেন না। কেন?
যে শাসক নরেন্দ্র মোদি নিজেরই এক জনগোষ্ঠী- মুসলমানদের খুন করার প্রকাশ্যে আহ্বান চলার ব্যবস্থা করে দিতে দ্বিধাগ্রস্ত নন- এই মোদিকে চিনতে হবে। কেন মোদি এমন ডেস্পারেট? তার খোঁজ নিলে দেখব, এটাই তার নির্বাচনে জিতে আসার কৌশল। সব পথ হারিয়ে এটাই এখন মোদির একমাত্র অবলম্বন।
কাজেই মুসলমান নিগৃহীত করা তার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। তবেই জোশে হিন্দু ভোট তার বাক্সে আসবে। অতএব, এ জায়গায় বাইডেনের মানবাধিকারের কথায় কোনো ছাড় দিতে পারবেন না। আবার বাইডেনও ভারতকে মানবাধিকারে এমন জলজ্যান্ত লঙ্ঘন উপেক্ষা করতে পারবেন না। কারণ, অবরোধ ও মানবাধিকার এ দুই এখন তার প্রধান অস্ত্র। তিনি এই অস্ত্র প্রয়োগ বাতিল না করে বড়জোর পিছিয়ে যত দিন দেরী করা যায় তা করতে পারেন, এটাই কেবল বাইডেনের হাতে আছে। তাই এটা হলো বাইডেন-ভারত সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা না হওয়ার পথে প্রধান এক বাধা।