খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে বিশেষ উপকার হয়?
খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে বিশেষ উপকার হয়? - ছবি : সংগ্রহ
অনেকেই কাজের ফাঁকে বিকেলে একটি বা দু’টি খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙেন। সারা বিশ্বেই এই চল রয়েছে। আবার পুরো দুনিয়াতেই ইফতারে খেজুর অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে থাকে। এই কাজ কি শুধুই রীতি মেনে করা হয়? নাকি খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে শরীরেরও উপকার হয়?
প্রথমত, সারাদিন না খেয়ে থাকার পর এমন কিছু খাওয়া জরুরি, যা কম সময়ে জোগাবে কর্মশক্তি। তার জন্য খেজুর খুব উপযোগী একটি খাদ্য। পাশাপাশি, খেজুরে রয়েছে আরো নানা গুণ। জেনে নেয়া যাক তেমন কয়েকটি।
১) খেজুর হজমশক্তি বাড়াতে সক্ষম। সারাদিন না খাওয়ার পর সন্ধ্যায় ইফতারে ভালোমন্দ খাওয়ার চল রয়েছে গোটা বিশ্বেই। বিশেষ করে নানা ধরনের ফল এবং ভাজাভুজি খান অনেকে। খেজুর সে সব খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
২) খেজুরে রয়েছে পুষ্টির নানা উপাদান। বিশেষ করে টানা না খেয়ে থাকার সময়ে শরীরের ফাইবার প্রয়োজন। খেজুর তা জোগাতে পারে।
৩) রোজা মানেই সারা দিন কিছু না খেয়ে থাকা। কিন্তু দিনের কাজ তো চালিয়ে যেতে হয়। তার জন্য শরীর সচল রাখতে হবে। খেজুরে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন। এই তিনটি উপাদান শরীর সচল রাখে।
৪) খেজুরে উপস্থিত রয়েছে ক্ষারীয় লবণ। তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে শর্করার মাত্রাও।
৫) খেজুর হজম করা সহজ।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
সুখনিদ্রার জন্য করণীয়
ডা: শাহজাদা সেলিম
জন্মের পর প্রথম দিকে যেখানে দিনে প্রায় ১৮ ঘণ্টা ঘুম হতো। তা ২০ বছর বয়সে এসে ৬ ঘণ্টা নেমে আসে। বয়স বাড়তে থাকলে সময়ও কমতে থাকে। বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত অভ্যন্তরীণ ঘড়িটি বিপাক ক্রিয়া হরমোনজনিত কারণে ঘুম কমিয়ে দেয়, জেগে থাকার বৃদ্ধি করে। ঘুমের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাবার জন্য আরো কিছু কারণ আছে- ধূমপান/ মদ্যপান, ২০/২২ বছর বয়সে; ছোট বাচ্চা, ২৮/২৯ বছর বয়সে; মূত্রাশয়ের ডাকে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে। আর ক্রমে বিছানা হয়ে উঠে কণ্ঠকাকীর্ণ। আর এভাবেই আমরা দিনের বেলায়ও দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকি। মানসিক অস্থিরতা, অবসাদ ও উৎকণ্ঠা বোধ করি। এগুলো আবার শারীরিক ব্যাপক সমস্যা যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, দিনের বেলায় কাজের সময় মনোযোগ হারিয়ে ফেলা বা ঘুমিয়ে পড়া ইত্যাদি ঘটনার জন্ম দেয়।
এখানে ৩টি বয়স বিভাগে ঘুম সহায়ক কিছু পরামশ দেয়া হচ্ছে।
২০ বছর বয়সে সুখনিদ্রার জন্য
- এ বয়সে ৬ ঘণ্টা ঘুমাতে পারলেই চলবে। তবে ৮-৯ ঘণ্টা ঘুম হলে তা পর্যাপ্ত। এক্ষেত্রে ৪টি করণীয় আছে।
- রাত ১০টার মধ্যে শুয়ে পড়ুন। জেগে থাকার অভ্যাস বাড়িয়ে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবেন না।
- সন্ধ্যার পর আর চা পান করবেন না।
- রাত ১১.৩০ মিনিটের দিকে মেলাটোনিন নামক হরমোন নিরসন হয় যা আমাদের ঘুমাতে আরো গভীর করে। গবেষকরা বলছেন, রাতে ০.৩ মিলিগ্রাম মেলাটোনিন খেলে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া যায়।
- সপ্তাহান্তে ছুটির আমেজে দীর্ঘক্ষণ ঘুমাবার চেষ্টা করবেন না। ঘুমালে আপনার অভ্যন্তরীণ ঘড়ির ছন্দ হারাবে এবং আপনার সব বিনিয়োগ বৃথা যাবে।
৩০ বছর বয়সে সুখ নিদ্রার জন্য
গত দশকে চেয়ে সামান্য একটু বেশি ঘুম হতে পারে আপনার। তবে তা যথেষ্ট নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ ও ৪০ এর দশকে মানুষের ৮২% কম গভীর ঘুম হয়। এ সময় অগভীর ঘুম বেশি হয়। এখানে সুখনিদ্রার জন্য করণীয়-
- প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৫ (প্যান্টোথেনিক এসিড) সমৃদ্ধ খাবার খান। এটি স্ট্রেম হরমোন কটিসোকের কার্যকারিতা হ্রাস করবে। ভিটামিন বি৫-এর উত্তম উৎস হলো ডাল, পশুর যকৃৎ, বৃক্ক, ব্যাঙের ছাতা, নারিকেল, বাদাম, বেল, তরমুজ, ডিম, শ্যাওলা জাতীয় খাদ্য গম ইত্যাদি। এতেও কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো এসপিরিন খাওয়া যেতে পারে। এসপিরিন কটিসোপের নিঃসরণ কমাবে।
- শিশুরা ঘুম ভাঙাতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের টেলিভিশন দেখার নিয়ন্ত্রণ করুন। বাচ্চারা যত টেলিভিশন দেখতে থাকবে তত তাদের নিজেদের ঘুম এলোমেলো হবে এবং বাবা-মার ও ঘুমের প্রতিদিনকার ছন্দ নষ্ট হবে।
- প্রতিদিন ২-৩ কিলোমিটার হাঁটুন। বিকালে হাঁটাই উত্তম। হালকা ব্যায়াম ও করতে পারেন।
৫০ বছরের পরবর্তী সময়ে সুখনিদ্রা
এ সময়ে অধিকাংশ মানুষই নিদ্রাহীনতায় ভোগে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০-এর বেশি বয়সের পুরুষরা তাদের প্রতি ১০ বছর অতিক্রমের জন্য ২৮ মিনিট করে কম ঘুমায়। ৬০ বছর বয়সের আগেই তাদের গভীর ঘুম উধাও হয়। ৫০ বছর বয়সের একজন মানুষের রক্তে তার ৩০ বছর বয়সের ১০ গুণ কটিসোল উপস্থিত থাকে। যা তার ঘুম হরণ করে। আবার প্রতি ২৫ জনে ১ জনের ঘুমের মধ্যে হঠাৎ খুব অল্প সময়ের জন্য শ্বাস আটকে যায় সে জেগে ওঠে। এর সঙ্গে যোগ হয় প্রস্টেট গ্রন্থির কারণে নানাবিধ সমস্যা ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া, তলপেট মূত্রাশয় ভার থাকার কারণে টান টান হয়ে থাকা।
এ বয়সে গভীর ঘুমের জন্য করণীয়-
- প্রচুর ভিটামিন বি৫ সমৃদ্ধ খাদ্য খান। রাতে শর্করা জাতীয় বেশি পরিমাণে খাবার চেষ্টা করুন। এতে কটিসোল নিঃসরণ কমবে, সোরাটোনিন নিঃসরণ বাড়বে, ঘুম আসবে।
- ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসলে তার জন্য চিকিৎসা করাতে হবে।
- যাদের হৃদরোগের জন্য ওষুধ খেতে হচ্ছে তাদের চিকিৎসক তার অনিদ্রা বা গভীর ঘুম না হওয়ার কথাটি জানাবে অথবা অন্যান্য ওষুধ খাবার বেলায়ও ঘুমের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
- রাতে ৩-৪ বার প্রস্রাব করতে যেতে হলে আপনার ডাক্তারকে জানান। প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়ার কারণে এরূপ হতে পারে।
সবার জন্য করণীয়-
- ওষুধের দোকান থেকে নিজের ইচ্ছামাফিক ঘুমের বড়িও কিনে খাবেন না। এতে আপনার বড় ধরনের ঝুঁকি হতে পারে। ওষুধ সেবনে আন্তরিক হোন।
- চিকিৎসক আপনাকে ওষুধ ছাড়াও ঘুমানোর জন্য কিছু কিন্তু পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে পারেন। তা অভ্যাস করার চেষ্টা করুন।
- ঘুমানোর সময় ও পরিবেশ যতটা সম্ভব অপরিবর্তনীয় রাখুন।
- রাতের খাবার নির্দিষ্ট সময়ে খাবেন। রাতে সবজি কম খাবেন শর্করা বেশি খাবেন।
- শেষ কাপ চা ঘুমানোর সময় থেকে যতটা সম্ভব আগেই শেষ করুন।
- ঘুমানোর ৪০-৪৫ মিনিট আগে ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল করে নিতে পারেন।