বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন জটিলতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন জটিলতা - ছবি : সংগ্রহ
উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে এবারো জটিলতা তৈরি হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এখন আবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে গত বছরের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে এবারো শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে কি না সেই প্রশ্ন? ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও গুচ্ছ পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া হয়েছে। আবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বয়ং নিজ থেকেই গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার পরীক্ষার (সেকেন্ড টাইম) সুযোগ দেয়ার বিষয়ে জোর দাবি জানানো হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসিতে) বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে সে বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাথে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আজ ভিসিদের একটি সভা রয়েছে। সেখানে গুচ্ছের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ বৈঠকের পর কোনো একদিন উপাচার্য পরিষদের আরেকটি সভা রয়েছে। সেখানে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। সূত্রমতে, সম্প্রতি গুচ্ছে না থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন জগন্নাথ, কুমিল্লা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতি আলাদা সভা করে নিজ নিজ ভিসিকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। গুচ্ছে থাকলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভর্তি কার্যক্রম থেকে বিরতি নেবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামও গুচ্ছে থাকার পক্ষে নন।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষকদের দাবিগুলোর একটা চিঠি হাতে পেয়েছি। তাদের দাবির সাথে আমিও একমত। কয়েক দিন পর আমাদের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত মিটিং আছে সেখানে এসব দাবি উত্থাপন করবো।
উল্লেখ্য দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করতে ও আর্থিক অপচয় রোধ করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি ফলপ্রসূ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ভর্তির ক্ষেত্রে সমন্বয় না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী সঙ্কটে ভুগেছে। এতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। বাধ্য হয়ে আসন ফাঁকা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে হয়েছে তাদের।
সূত্র আরো জানায়, গতবার গুচ্ছের নেতৃত্বে ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এবার এ দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে না থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সেই সাথে আরো কয়েকটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গুচ্ছের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছে পদ্ধতিটি। এদিকে দেশের সেরা চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এবারো নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) আমাদের ইউজিসির সাথে একটা বৈঠক রয়েছে। সেখানে আশা করি, গুচ্ছে কে থাকবে বা কে থাকবে না সেটি ঠিক হয়ে যাবে। গণমাধ্যমে দেখেছি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি গুচ্ছে না থাকার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলো এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি গুচ্ছ থাকবে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষকই গুচ্ছ পদ্ধতি চান। তিনি আরো বলেন, গুচ্ছ না থাকলে আমরাও আলাদা ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেবো। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় সিলেবাস কী হবে সেটি নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষায় যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হয়েছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সেই সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা নিতে আগ্রহী। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, তারা পুরো সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা নিতে চাইছেন।