কোন বয়সে কতটা ওজন আদর্শ
কোন বয়সে কতটা ওজন আদর্শ - ছবি : সংগ্রহ
আমরা সকলে জানি শরীরে মেদ জমা ভালো নয়। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রত্যেকরই একটি নির্দিষ্ট শারীরিক ওজন বজায় রাখা দরকার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন বয়সে কী রকম ওজন থাকা উচিত? বিষয়টা নিয়ে প্রচুর মতামত রয়েছে। আজকে সেই বিষয়গুলোই আলোচনা করার চেষ্টা করব।
বিএমআই কী?
বিএমআই অর্থাৎ বডি মাস ইনডেক্স। আমাদের দেহের ওজন কত হওয়া উচিত, তার কয়েকটি মাত্রা রয়েছে। কোনো ব্যক্তির ওজন ও উচ্চতাকে ব্যবহার করে এই মাত্রা নির্ধারিত হয়। ফলে জানা যায় যে প্রয়োজনের তুলনায় তার ওজন কম নাকি বেশি? সহজ ভাষায় বিএমআই নির্ধারণের অঙ্কটা হলো- শরীরের ওজনকে (কেজি) উচ্চতার (মিটার) বর্গফল দিয়ে ভাগ করা। অর্থাৎ কারো ওজন ৮০ কেজি হলে এবং উচ্চতা ১.৮ মিটার (৬ ফুট) হলে ওই ব্যক্তির বিএমআই হবে ২৪.৭। সাধারণত এক্ষেত্রে ১৮-২৫ কে আদর্শ মাত্রা ধরা হয়। ২৫-৩০ মানে ওজন বেশি এবং ৩০ এর বেশি মানে খুব মোটা ধরা হয়। অর্থাৎ বড়দের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বয়সে দেহের ওজন এই বিএমআই অনুযায়ী হওয়া উচিত।
ব্যতিক্রম ভারতীয়রা
উপরের আন্তর্জাতিক বিএমআই মানদণ্ডটা মূলত পাশ্চাত্যের কথা মাথায় রেখে তৈরি। এশিয়দের ক্ষেত্রে কিন্তু এর কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। কারণ পাশ্চাত্য সমাজের তুলনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের উচ্চতা কম হয়, শরীরে পেশির পরিমাণ কম থাকে ও মেদ বেশি থাকে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে বিএমআই ২৩ এর বেশি হলে তার ওজন বেশি ধরা হয়। আর সেটা ২৫ এর বেশি হলে তাকে ‘ওবিস’ বলা হয়।
বিএমআই নাকি ওজন
তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে যে ওজন মাপা প্রয়োজন নাকি বিএমআই? দেহের মেদ, অস্থি এবং পেশির মধ্যে কার ওজন বেশি, সেটা আলাদা করে বোঝার কোনো উপায় নেই। কোনো বডি বিল্ডারের চেহারা হয়তো ছোটখাট কিন্তু শরীরে পেশি (মাসল মাস) বেশি হওয়ার কারণে ওজন বেশি হতে পারে। তার মানে কিন্তু তিনি মোটা নন। আবার সারাদিন অফিসে বসে কাজ করছেন এমন একজন মানুষের শরীরে মেদ বেশি হলে তাকে মোটা বলা হয়। অর্থাৎ কেউ ‘মোটা’ কি না এই ধারণার সঙ্গে মূলত শারীরিক মেদের একটা যোগসূত্র রয়েছে। তাই বিএমআই ছাড়াও আলাদা করে শরীরের ফ্যাট মাস মাপাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটা বাড়িতে সহজেই পরীক্ষা করা সম্ভব। পেটের কাছে নাভি বরাবর যে পরিধি, তা যদি যথাক্রমে ৮০ সেন্টিমিটার (মহিলাদের ক্ষেত্রে) ও ৯০ সেন্টিমিটারের (পুরুষদের ক্ষেত্রে) বেশি হয়, তাহলে ওই ব্যক্তিকে মোটা বলা যেতে পারে।
বয়স অনুযায়ী ওজন
এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ বয়স, উচ্চতা, পুষ্টি, দেহের গড়ন ও আরও বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর কোনও ব্যক্তির ওজন নির্ভর করে। সাধারণত মধ্য বয়স থেকে আমাদের ওজন বাড়তে থাকে। সেটা যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেকোনো বয়সে দেহের ওজনকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হবে। আদর্শ ওজনের ধারণার জন্য বিএমআই-এর সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
পুরুষ ও মহিলাদের ওজন
একই বয়সের কোনও পুরুষ ও মহিলার ওজন সমান নাও হতে পারে। কারণ দু’জনের মধ্যে গঠনগত পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই মনে রাখতে হবে চামড়ার নীচে মেদ জমলে সেটা খুব ক্ষতিকর নয়। আবার শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার, প্যাংক্রিয়াস, হার্ট বা শিরাতে ফ্যাট জমলে (এক্টোপিক ফ্যাট) তা খুবই ক্ষতিকারক। এর থেকে ফ্যাটি লিভার, পলিসিস্টিক ওভারি, হার্ট অ্যাটাক, সুগার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমানোর বিপদ
ওজন কমাতে অনেকেই কঠোর ডায়েট মেনে চলেন। এক্ষেত্রে সাময়িকভাবে ওজন কমে। কারণ খাবার কম খেলে পেশির গ্লাইকোজেন ভাঙতে শুরু করে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার ওজন বাড়তে পারে। এইভাবে ওজন কমালে, শরীর কিন্তু তখন দেহের মেটাবলিজমের গতি কমিয়ে দেয়। ফলে মাসল লস বাড়তে থাকে, কিন্তু ফ্যাট থেকেই যায়। একটা সময়ের পর পেশির গুণগত মান কমতে শুরু করে বলে তখন কিন্তু শরীরে আবার ফ্যাট জমতে শুরু করে। তাছাড়া ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে ওজন কমলেও শরীরে অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ উপাদানের অভাব দেখা দেয়। এর ফলে ব্যক্তির কোষ্ঠকাঠিন্য, এনার্জি হারানো, মাথা ব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, বেশি খিদে পাওয়া, মাঝে মাঝে পেশিতে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। তাই নিয়মিত সুষম আহার বজায় রেখে শরীরচর্চার সাহায্যে এবং ধীর গতিতে দেহের ওজন কমানো উচিত।
কখন ওজন মাপবেন?
প্রাতঃকৃত্য করার পর খালি পেটে ওজন মাপার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন ওজন না মেপে সপ্তাহে একবার অন্তত ওজন মাপা উচিত। এক্ষেত্রে পার্থক্যটা সহজেই চোখে পড়ে। পাশাপাশি সাপ্তাহিক ওজন লিখে রাখলে প্রতি মাসে কতটা ওজন কমছে সেই সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া যায়।
মন খারাপ নয়
সবশেষে আর একটা কথা বলি। ফ্যাটের থেকেও ফিটনেস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে আপনার ওজন একটু বেশি, কিন্তু ফিটনেস খুব বেশি। আবার হয়তো বা আপনার ওজন স্বাভাবিক। কিন্তু ফিটনেস খুবই কম। সেটা কিন্তু একদমই কাম্য নয়। তাই যে কোনওভাবেই চেষ্টা করুন ফিট থাকতে। ফিট থাকলে ফ্যাটও দূরেই থাকবে।
লেখক : পিজি হাসপাতালের মেডিসিনের প্রধান
সূত্র : বর্তমান