রমজান ও স্বাস্থ্য

রমজান ও স্বাস্থ্য - ছবি : সংগ্রহ
আরবি নবম মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা রোজা রাখেন। রোজার সময় সূর্যোদয়ের আগে থেকে (সাহরি) সূর্যাস্ত পর্যন্ত (ইফতার) সময়ে খাবার, পানীয়, তামাক সেবন থেকে বিরত থাকতে হয়। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল বলে রোজা প্রতি বছর ১১ দিন করে এগিয়ে আসে ও ৩৩ বছরে ঋতুর একই সময়ে ঘুরে আসে। রোজার সময় মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়- পরিমাণ, ধরন উভয়ই।
কি ধরনের খাবার খাবেন?
ইফতার ও সাহরি দু’টি প্রধান খাবার স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর হওয়া ভালো। বছরের অন্যান্য সময়ের মতো শর্করা, আমিষ, চর্বিজাতীয় মিশ্রত খাবারের সাথে শাক-সবজি, ফল-মূল, দুধ, খেজুর থাকা প্রয়োজন। এসব সমন্বিত খাবারের মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি ছাড়া ও বিভিন্ন মাইক্রো নিউটিয়েন্ট পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদি থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা আবশ্যক, বিশেষ করে এ বছরের মতো গরমের সময়। সরবত, ডাব, জুস, স্যুপ খেতে পারেন যাতে পরিমিত লবণও থাকে।
বছরের অন্যান্য সময়ের মতো অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, তেল মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- পেঁয়াজু, বেগুনি, বুটভুনা, হালিম, কোলা জাতীয় পানীয় ও রাস্তার পাশে বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
সারাদিন রোজা রাখার পর একসাথে অনেক খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
রমজানে সুস্থ মানুষের কী ধরনের অসুবিধা হতে পারে?
খাবারজনিত কারণে পেটের পীড়া হওয়া ছাড়াও রক্তে গ্লুকোজ কমা, রক্তচাপ কমা, পানিশূন্যতা হয়ে দুর্বলতা, অবসাদ, খিটখিটে মেজাজ, মাথা ব্যথা, মাথা ঘুরানো, মনযোগ কমে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। বিশেষ করে এসব অসুবিধা দিনের শেষের দিকে হয়।
সাধারণ অসুখ থাকলে কি করণীয়?
উচ্চ চাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের মাত্রা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ মেপে দেখা প্রয়োজন যাতে কম বা বেশি রক্তচাপ কোনোটাই না হয় এবং প্রয়োজনে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সমন্বয় করা যায়।
ডায়াবেটিসের ওষুধ কমানো বা সমন্বয় করার প্রয়োজন হতে পারে। ইনসুলিন যারা নেন তাদের ইনসুলিন দিয়ে ইফতারের মূল খাবার খাওয়া প্রয়োজন। মাঝে মাঝে রক্তের গ্লুকোজ মাপা প্রয়োজন।
রোজা রাখা অবস্থায় ওষুধ নেয়া যায় কি না?
অসুস্থ রোগীদের জন্য, গর্ভবতী মহিলা, দুধদানকারী মা, মাসিক স্রাবের সময় রোজার বিষয়ে ধর্মীয় শিথিলতা আছে। সম্ভব হলে রোজার সময় (সাহরি থেকে ইফতার) ওষুধ ব্যবহার না করা উচিত। কিছু ওষুধ আছে যেমন শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার, চোখের ওষুধ ব্যবহারে নিষেধ নেই।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রোজার কারণে শরীরে বিভিন্ন ‘মেটাবলিক’ পরিবর্তন হয় তবে শরীরে খুব বেশি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয় না। অনেকগুলো ওষুধ যাদের খেতে হয় রোজায় এসব সঠিক ব্যবহারে অসুবিধা হতে পারে। সারা দিনে পানিশূন্যতার কারণে সুস্থ ব্যক্তির তেমন কোনো দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া হয় না বলে প্রতীয়মান।
অধ্যাপক এম এ ফয়েজ : প্রাক্তন অধ্যাপক ও মহা-পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডা: খালিশা আফরোজ : ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।