ভারতীয় হাইকোর্টের রায় : খোরপোশের অধিকারী স্বামীরাও
ভারতীয় হাইকোর্টের রায় : খোরপোশের অধিকারী স্বামীরাও - ছবি : সংগৃহীত
বিবাহবিচ্ছেদের পর খোরপোশ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সাবেক স্বামী। নিম্ন আদালত আর্জি মঞ্জুর করেছিল। এবার ভারতের বম্বে হাইকোর্টও বহাল রাখল ওই নির্দেশ। ঐতিহাসিক রায়ে বম্বে হাইকোর্টের আওরঙ্গাবাদ বেঞ্চ জানাল, খোরপোশের দাবি জানাতে পারেন স্বামীরাও।
আবেদনকারীর সাবেক স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা। নানদেদের নিম্ন আদালত ২০১৭-তে মামলার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত সাবেক স্বামীকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা দিতে ওই শিক্ষিকাকে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ওই শিক্ষিকা টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ জন্য দু’বছর পর আরও একটি নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। ২০১৯ সালে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রিন্সিপালকে শিক্ষিকার বেতন থেকে পাঁচ হাজার টাকা কেটে আদালতকে পাঠাতে বলা হয়। বকেয়াসহ স্বামীর প্রাপ্য মেটানোর জন্যই এই নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
বিচারপতি ভারতী ডাঙ্গরের বেঞ্চে নিম্ন আদালতের দু’টি নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ জানান শিক্ষিকা। শুনানির পর হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করেছে। বিচারপতি বলেছেন, ১৯৫৫-র হিন্দু বিবাহ আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী স্বামীর অন্তর্বর্তী খোরপোশের আর্জি সম্পর্কে সঠিক নির্দেশই দেয়া হয়েছে। স্বামীরও অন্তর্বর্তী খোরপোশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আইনের ২৪ ও ২৫ ধারার ভিত্তিতে হাইকোর্ট নির্দেশ বহাল রাখার কথা জানিয়েছে। আদালত বলেছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যিনি আর্থিক দিক থেকে সঙ্গতিহীন, তিনি খোরপোশের দাবি জানাতে পারেন। ওই ধারা অনুযায়ী তার অন্তর্বর্তী বা স্থায়ী খোরপোশের দাবি জানানোর সম্পূর্ণ অধিকার আছে।
ওই দম্পতির বিয়ে হয় ১৯৯২ সালের ১৭ এপ্রিল। পরে অত্যাচার ও অশান্তির কারণ দেখিয়ে ওই শিক্ষিকা বিবাহবিচ্ছেদের আর্জি জানান। ২০১৫-তে নানদেদ আদালত বিবাহবিচ্ছেদ অনুমোদন করে। এরপর স্বামী মাসে ১৫ হাজার টাকা খোরপোশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। স্বামীর যুক্তি ছিল, তার কোনো রোজগার নেই। স্ত্রী এমএ, বিএড। স্কুলে শিক্ষকতা করেন। স্ত্রীকে উচ্চশিক্ষায় সাহায্য করতে তিনি বাড়ির সব কাজ সামলাচ্ছেন। ফলে নিজের কেরিয়ারের দিকে মন দিতে পারেননি। বিয়ের পরই স্ত্রী চাকরি পেয়েছেন। তার কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি নেই। আয়-রোজগারও নেই। এখন স্বাস্থ্যও ভালো নয়। তাই, তার পক্ষে জীবনধারণের জন্য কোনো কাজ করাও সম্ভব নয়। স্ত্রী মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন পান। এই খোরপোশ দেয়া তার পক্ষে অসম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, বিবাহবিচ্ছেদ তাকে মানসিক দিক থেকে বিধ্বস্ত করে তুলেছে।
এই আর্জির বিরোধিতা করে ওই স্কুল শিক্ষিকা দাবি করেন, তার স্বামীর দোকান রয়েছে। অটো-রিকশা ভাড়া দিয়েও আয় করেন। স্বামী আর্থিক দিক থেকে তার উপর নির্ভরশীল নন। বরং একমাত্র কন্যাসন্তান তার উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া, বিবাহবিচ্ছেদের দু’বছর পর খোরপোশের আর্জি জানানো হয়েছে। তাই তা খারিজ করার আবেদন জানান শিক্ষিকার আইনজীবী। যদিও আদালত এই যুক্তি স্বীকার করেনি। হাইকোর্ট বলেছে, খোরপোশ যেকোনো সময় দাবি করা যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত নিম্ন আদালতের নির্দেশই বহাল রাখে বম্বে হাইকোর্টের আওরঙ্গাবাদ বেঞ্চ।
এই রায় সম্পর্কে রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ডঃ নীরদরঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘এটি অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আর পাঁচটা রায়ের থেকে আলাদা। তা আকর্ষণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। তবে উচ্চ আদালত এই মামলায় যে রায় দিয়েছে, তা আমাদের বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখতে হবে’।
সূত্র : বর্তমান