হাঁপানি রোগীদের করোনা কেন গুরুতর হয় না?
হাঁপানি রোগীদের করোনা কেন গুরুতর হয় না? - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে যারা সবচেয়ে বেশি আশঙ্কায় ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো হাঁপানি বা অ্যাজমার রোগীরা। তারা এমনিতেই শ্বাসকষ্টে ভোগে। তাদের শঙ্কা ছিল, করোনাভাইরাস যেহেতু ফুসফুসে বেশি আঘাত হানে, সে কারণে তারা সহজেই এর শিকার হবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে ভিন্ন।
করোনাভাইরাসের সর্বশেষ ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের একটি বড় অংশেরই প্রাথমিক উপসর্গ ছিল হয় মৃদু সর্দি, কাশি নয়তো মাঝারি ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা। বা অনেকেই ছিলেন আগাগোড়াই ছিলেন উপসর্গহীন। কিন্তু তার পরও তাদের কোভিড গুরুতর হয়েছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। ওমিক্রন সেই রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের পর দেহের অনেক গভীরে পৌঁছেছে। ফুসফুসের যথেষ্ট ক্ষতি করতে পেরেছে।
অথচ শ্বাসকষ্টজনিত রোগে যারা ভোগেন তাদের মধ্যে মূলত ক্রনিক অ্যাজমা বা হাঁপানির রোগীদের ক্ষেত্রে কিন্তু কোভিডকে সেই মাত্রায় গুরুতর হয়ে উঠতে দেখা যায়নি।
কেন হাঁপানির রোগীদের ক্ষেত্রে কোভিড গুরুতর হয়ে উঠতে পারেনি এই প্রথম তার কারণ জানা গেল। যা আগামী দিনে কোভিড চিকিৎসার সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
আমেরিকার চ্যাপেল হিলে নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ। বুধবার।
গবেষকরা দেখেছেন, হাঁপানির রোগীদের ক্ষেত্রে কোভিডের গুরুতর না হয়ে ওঠার কারণ তাদের শরীরে পরিচিত সাইটোকাইন- ‘ইন্টারলিউকিন-১৩’-র ভূমিকা। এরাই দু’টি কোষের ভিতরের এলাকায় সার্স-কোভ-২ ভাইরাসকে সংক্রমণে বাধা দেয়। কোষে ঢুকতে বাধা দেয়। এমনকি, কোষে ঢোকার পরও এই ইন্টারলিউকিন-১৩ সাইটোকিনের জন্যই ওমিক্রন, ডেল্টাসহ করোনাভাইরাসের কোনো রূপই প্রত্যাশিত হারে বংশবৃদ্ধি করতে পারে না।
সাইটোকাইন মানবদেহের খুব ক্ষুদ্র প্রোটিন বা প্রোটিন কণা। এরা দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও রক্তকোষগুলোর বাড়বৃদ্ধি ও কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে নানা ধরনের বার্তা (‘সিগন্যাল’) পাঠিয়ে। মানবদেহে কোনো প্রদাহ হলে তা কিভাবে রোখা যায় সেই বার্তাও মূলত সাইটোকাইন পাঠায় প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলিকে।
তবে এই সাইটোকাইনের মাত্রা দেহে অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে হিতে বিপরীত হয়। কোভিডেও সাইটোকাইন ঝড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য।
হাঁপানিতে ইন্টারলিউকিন-১৩ যে ভূমিকা নেয় তা শ্বাসকষ্টের অন্য রোগ সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ)-তে নিতে পারে না বলেই কোভিডকে সিওপিডি রোগীদের ক্ষেত্রে গুরুতর হয়ে উঠতে দেখা গেছে। বহু সিওপিডি রোগীর মৃত্যুও হয়েছে কোভিডে।
গবেষকরা অবশ্য এও জানিয়েছেন, কোভিডের চিকিৎসায় ইন্টারলিউকিন-১৩-কে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা উচিত হবে না। কারণ, ইন্টারলিউকিন-১৩ মানবদেহে নানা ধরনের প্রদাহের অন্যতম প্রধান কারণ। তবে যে ভাবে ইন্টারলিউকিন-১৩ মানবকোষে করোনাভাইরাসের প্রবেশ ও বংশবৃদ্ধি রুখে দিতে পারছে তাকে অনুসরণ করে কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি কোভিডের গুরুতর হয়ে ওঠা রুখে দিতে পারে আগামী দিনে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা