প্রাণনাশের আশঙ্কাতেও বুলেটপ্রুফ বর্ম পরতে রাজি নন ইমরান!
ইমরান খান - ছবি : সংগ্রহ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে ইমরান খান বহাল থাকবেন কি না তা নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এর মধ্যেই ইমরান খানের প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করলেন ক্ষমতাসীন তেহরিক-এ-ইনসাফ দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা ফয়সাল বাওদা। জনসভায় বক্তৃতা দেয়ার সময় তাকে বুলেটপ্রুফ বর্ম পরতে বলা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন। কিন্তু এই ‘উপদেশ’ মেনে নেননি ইমরান। এমনটাই জানিয়েছেন ফয়সাল। ফয়সাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বুলেটপ্রুফ বর্ম পরার পরামর্শ দেওয়া হলে তিনি তা পরতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আল্লাহর ঠিক করা নির্ধারিত সময়েই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন।’
ইমরানকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী’ বলেও অভিহিত করেন তিনি।
অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে পাকিস্তান সংসদে ভোটাভুটির আগেই পাক সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে হেরেছেন ইমরান। ইমরান সরকার স্পষ্ট পতনের মুখে রয়েছে বলে মনে করা হলেও তিনি ইস্তফা দেবেন না বলেও জানিয়েছেন ইমরান।
বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে পাক পার্লামেন্টে ৩ এপ্রিল, রোববার ভোট হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগে বড় ধাক্কা খেয়েছেন ইমরান। ভোটের আগে ইমরানকে ছেড়ে বিরোধী শিবিরে যোগ দেয় তার দলের প্রধান জোটসঙ্গী। ইমরানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারের প্রধান জোটসঙ্গী ছিল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম)। কিন্তু মাঝপথেই ইমরানের হাত ছেড়ে বিরোধী দল পাকিস্তান পিপল্স পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে জোট বাঁধে এমকিউএম।
এমকিউএম হাত মেলানোর পর ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদলের পক্ষে সংসদ সদস্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭। ইমরানের সমর্থনে আছেন ১৬৪ জন সদস্য। অনাস্থা ভোটে ইমরানকে হারাতে ১৭২ জন সদস্যের ভোটের প্রয়োজন বিরোধীদের। অর্থাৎ, সংখ্যার এই সমীকরণ জারি থাকলে সহজেই গদিচ্যুত হবেন ইমরান।
ইমরান পদত্যাগ করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন শাহবাজ শরিফ!
পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট চলছে। ক্রমাগত স্পষ্ট হচ্ছে যে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে আস্থা ভোট না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই পরিষ্কার হবে না।
তবে আস্থা ভোটে হেরে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইমরান খান ইস্তফা দিতে পারেন- এমন গুঞ্জনের মধ্যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়ে গেছে। ওই জল্পনা আরো জোরদার হয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির এক ঘোষণায়। বুধবার তিনি জানান, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন শাহবাজ শরিফ।
উল্লেখ্য, শাহবাজ হলেন পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি-র বিরোধী দলনেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। পিপিপি-র চেয়ারম্যান বিলাবল সংবাদ সম্মেলনে জানান, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গদিচ্যুত করতে পিপিপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এ জন্য এমকিউএম-পি-কে ধন্যবাদও জানিয়েছেন বিলাওয়াল।
তিনি বুধবার বলেন, 'ইমরান খান সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। তিনি আর প্রধানমন্ত্রী নন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) পার্লামেন্টের অধিবেশন। আগামীকাল ভোট দিয়ে বিষয়টি স্থির করতে হবে। এর পর আমাদের কাজ হবে স্বচ্ছ নির্বাচন করে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা।' কে এই শাহবাজ শরিফ, যাকে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর মুখ বলে দাবি করা হচ্ছে?
শাহবাজের প্রথম পরিচয় তিনি নওয়াজ শরিফের ভাই। এ ছাড়াও ২০১৮ থেকে তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলনেতা। এর আগে তিনি পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হন। পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন)-এর প্রেসিডেন্ট শাহবাজ। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে যখন সেনা অভ্যুত্থান হয়, শাহবাজ পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। ২০০৭-এ ফের পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ওই বছরই তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা