প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে যেসব নিয়ম মেনে চলবেন
প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে যেসব নিয়ম মেনে চলবেন - ছবি : সংগ্রহ
পুরুষদেহে প্রস্টেট গ্রন্থির সুস্থতা খুব প্রয়োজনীয়। এর সমস্যা একবার শুরু হলেই কিন্তু মুশকিল। বর্তমান সময়ে কমবেশি অ্যালকোহল কিংবা ধূমপান অনেকেই করে থাকেন। তবে এর মাত্রা বেড়ে গেলেই হতে পারে সমস্যা। প্রস্টেট গ্ল্যান্ড এর রোগ মানেই তার থেকে ক্যানসার কিংবা কিডনির কোনো মারণ রোগ। বিশেষ করে দেখা যায়, মূত্রে জ্বালা, রক্ত প্রবাহ এগুলোই শরীরের অবস্থা খারাপ করে রেখে দিয়েছে।
প্রস্টেট গ্ল্যান্ড এর সুস্থতা নির্ভর করে, শরীরের মেটাবোলিজম এবং দৈহিক দশা তথা রীদমের ওপর। বিশেষ করে যারা ভাতা দশার মানুষ তাদের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ বেশি থাকে। শরীর শুকিয়ে গেলে খুব মুশকিল। যে বিষয়গুলো এইসময় মনে রাখবেন তার মধ্যে রয়েছে-
* হজমের ক্ষমতা কিংবা ডাইজেস্টিভ ফায়ার তথা অগ্নিকে সক্রিয় রাখুন। এতে শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান হয় সুতরাং মাথায় রাখবেন ভাতা দশার প্রভাবে যেন এটি কমে না যায়।
* বেশি করে পানি এবং ফ্লুইড জাতীয় খাবার খেতে হবে। তার কারণ এটিই শরীরকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় দেখা যায় শরীরে ফলের রস দারুণ বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
* ভাজ্রলি মুদ্রা অভ্যাস করুন। সোজা হয়ে বসে, পা সামনের দিকে তুলতে হবে এবং নিজেকে একরকম নৌকার ন্যায় হেলিয়ে দিতে হবে। এর থেকে অনেক সমস্যা কমবে।
* বেশ কিছু আয়ুর্বেদিক ওষধি যেমন অশ্বগন্ধা, কিংবা সারভি এগুলি সেবন করলে রোগের মাত্রা অনেক কমে যায় বলে অনেকে বলে থাকেন।
* সারাদিন এক জায়গায় বসে থাকবেন না। বিশেষ করে স্কোয়াড, সিট আপ ছাড়া অভ্যাস করলে অনেক ভালো ফল পাবেন।
শরীরের সাথে প্রাকৃতিক বিষয়ের যথেষ্ট যোগাযোগ। মূত্র, হাঁচি, কাশি এগুলো একটাও চেপে রাখা উচিত নয়। এর থেকে জটিল রোগের সূত্রপাত হতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু হাইজিন মেনে শরীরকে সুস্থ রাখা নিয়ে কথা।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
রোজা রেখেও ডায়াবেটিক রোগীরা যেভাবে সুস্থ থাকতে পারেন
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সুস্থভাবে রোজা রাখতে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। কিভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রেখে রোজা রাখা যেতে পারে, কী ধরণের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নেয়া উচিত, ইত্যাদি বিষয়ে ওই গাইডলাইনে তুলে ধরা হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, খুব তাড়াতাড়ি সারা দেশের ডায়াবেটিক রোগীদের কাছে এই গাইডলাইনটি পৌঁছে দেয়া হবে।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট)-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২৬ লাখ আর ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৮৪ লাখ।
অনলাইন ভিত্তিক চিকিৎসকদের প্ল্যাটফর্ম বিডি ফিজিশিয়ান ওই গাইডলাইনটি প্রকাশ করেছে।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই রোজা শুরু হতে যাচ্ছে।
ওই গাইডলাইন তৈরির সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকদের একজন ডা. শাহজাদা সেলিম বলছেন, 'ডায়াবেটিক রোগীদের কঠোর নিয়মকানুন মেনে খাবার ও ওষুধ গ্রহণ করতে হলেও তারাও রোজা রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেকেই হাইপো বা নানারকম সমস্যায় পড়েন।'
'রোজার সময় দেখা যায়, অনেক ডায়াবেটিক রোগী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা যেন সঠিক চিকিৎসা পান এবং অন্যান্য ডিসিপ্লিনের চিকিৎসকরা যেন তাদের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন, সেজন্য রোজার সময় ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার এই গাইডলাইনটি তৈরি করেছি,' তিনি বলেন।
সেলিম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
রোজাদারদের ঝুঁকি হাইপোগ্লাইসিমিয়া আর হাইপারগ্লাইসিমিয়া
কলাবাগানের বাসিন্দা বিলকিছ বানুর ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে পাঁচ বছর আগে। দুই বছর আগে রোজা রাখতে গিয়ে তাকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়েছিল।
'দুপুরের পর থেকেই প্রচণ্ড দুর্বল লাগছিল। নড়াচড়াও করতে পারছিলাম না। তখন ভেবেছি, সারাদিন রোজা আছি, তাই দুর্বল। একসময় হাইপো হয়ে যায়। তখন বাসার লোকজন দ্রুত মুখে চিনির শরবত দেয়ার পর ঠিক হয়,' তিনি বলছেন।
এরপরও তিনি রোজা রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্বল বা খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়লে আর জোর করে রোজা অব্যাহত রাখেন না।
'আল্লাহ নিশ্চয়ই বুঝবেন যে, আমি ইচ্ছা করে নয়, শারীরিক কারণে রোজা রাখতে পারছি না।' তিনি বলছেন।
রক্তে চিনির মাত্রা খুব কমে গেলে অনেক সময় মানুষ অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন, যাকে বলা হয় হাইপো বা হাইপোগ্লাইসিমিয়া। আবার রক্তে চিনির মাত্রা খুব বেশি হয়ে গেলে হাইপারগ্লাইসিমিয়া হতে পারে। তখন অবসান, মাথাঘোরা, মাথাব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি সমস্যার তৈরি হতে পারে।
এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চিনির মাত্রা সবসময় নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে।
সুরাইয়া জাহানের ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে প্রায় আট বছর আগে। দুপুরে ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হতো বলে প্রথম দিকে তিনি রোজা রাখতে পারতেন না। তবে গত দুই বছর ধরে চিকিৎসকের পরামর্শে আবার রোজা রাখতে শুরু করেছেন।
'ডাক্তার আমার ওষুধে কিছু পরিবর্তন করে দিয়েছে। যেটা রাতে খাবার ছিল, সেটা সেহরিতে খাই, আর ভোরেরটা খাই ইফতারির সময়। এভাবে এখন রোজা রাখছি,' তিনি বলছেন।
রোজাদারদের জন্য যেসব পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা
ডায়াবেটিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম বলছেন, ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসায় আমরা একটি কমপ্লিট গাইডলাইন দিয়েছি। এ থেকে ডায়াবেটিক রোগীরা যেমন নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হতে পারবেন, তেমনি বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও একটা নির্দেশনা পাবেন।
ওষুধ ও খাদ্যের সমন্বয়
ডায়াবেটিস রোগীদের বিকাল বেলায় রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেকে হাইপো হতে পারে, এমন আশঙ্কায় ওষুধ না খেলে বা কম খেলেও সমস্যার তৈরি করতে পারে। ফলে তাদের ওষুধের সমন্বয় ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
পাঁচ বেলা চিনির মাত্রা পরীক্ষা
রোজা শুরুর অন্তত প্রথম তিন দিন পাঁচ বেলা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়মিতভাবে মাপতে হবে। এটা হলো সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, আবার সকাল ১১টায়, বিকাল ৪টায়, ইফতারের ঠিক আগে এবং ইফতারের দুই ঘণ্টা পরে। এসব পরীক্ষার ফলাফল দেখে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ও খাদ্যের সমন্বয় করে নিতে হবে।
ডা. শাহজাদা সেলিম বলছেন, 'ইসলামী বিশেষজ্ঞ এবং ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা মিলে একত্রে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, রোজার সময় রক্ত পরীক্ষা এবং দিনের বেলায় ইনসুলিন নিলেও রোজা ভঙ্গ হবে না।'
খাবারের সময় পরিবর্তন
যাদের সকালে নাস্তার আগে বা পরে ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হয়, সেটি তারা ইফতারের সময় খাবেন। আর রাতের ওষুধ খাবেন সকালে সেহরির সময়। দুপুরের ওষুধ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় করে নিতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের কিছুক্ষণ পরপর অল্প খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোজার সময় তাদের প্রায় ১৪/১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। ফলে ভোরে ওষুধের মাত্রা একই রকম থাকলে বিকালের দিকে রক্তে চিনির মাত্রা অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, বিশেষ করে যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাদের জন্য। এ জন্য ভোরে ইনসুলিন গ্রহণের পরিমাণ অর্ধেকের কাছাকাছি গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রক্তে চিনির মাত্রা ৩.৯ হলে আর রোজা নয়
ডা. শাহজাদা সেলিম বলছেন, 'আমরা রোগীদের বলি, আপনি নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ মাপবেন। সেখানে যদি দেখতে পান যে, গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৯ এর নীচে নেমে এসেছে, তাহলে আর আপনার রোজা অব্যাহত রাখা ঠিক হবে না। কারণ হাইপো হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন বা মৃত্যুও হতে পারে।'
দিনের যেকোনো সময় এটা হলে তাকে দ্রুত খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে দুপুরে বা বিকালে হলে তার কোন ঝুঁকি নেয়া উচিত হবে না। তবে এটা যদি ইফতারের আগে আগে দেখা যায় ৪.৫ বা ৫ আছে, হয়, তাহলে হয়তো তিনি আর কিছুটা অপেক্ষা করতে পারেন। কিন্তু এটা সকালে বা দুপুরে হলে তার বিকালে তার হাইপোগ্লাইসিমিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
আবার একইভাবে কারো রক্তে চিনির মাত্রা ১৬.৭ বা তার চেয়ে বেশি, তিনিও রোজা অব্যাহত রাখলে নানারকম জটিলতায় আক্রান্ত হবেন। তার তখন দ্রুত ওষুধ খাওয়া উচিত।
কোভিড-১৯ বিষয়ে সতর্ক থাকুন
যদিও বাংলাদেশে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হার কমে এসেছে। কিন্তু ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে বলছেন ডা. শাহজাদা সেলিম।
এছাড়া হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, স্ট্রোক করেছে, ডায়রিয়া বা লুজ মোশন হচ্ছে, এরকম সময়েও রোজা ভেঙ্গে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন মি. সেলিম।
'ধর্মের বিধিবিধানেও কিন্তু বলা হয়েছে, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখার দরকার নেই, সেটা পরবর্তী কোনো সময়ে রাখা যাবে।' তিনি বলছেন।
শারীরিক পরিশ্রম
ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে রোজার সময় তাদের এই অভ্যাসে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে নীতিমালায়।
ডা. শাহজাদা সেলিম বলছেন, 'অনেক রোগী সকালে বা ভোর বেলায় হাঁটেন। এখানে নীতিমালা হলো যাদের শারীরিক শ্রমের দরকার আছে কিন্তু ওজন কমানোর দরকার নেই, তারা তারাবির নামাজ পুরোটা পড়লে শারীরিক শ্রম হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। কিন্তু যাদের ওজন কমানোর দরকার আছে, তাদের তারাবির নামাজের পর ২০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে।'
'কিন্তু দিনের বেলায় যতটা সম্ভব শারীরিক শ্রম তাদের বর্জন করতে হবে। একান্তই করতে হলে সকালে বা ভোরে করতে পারেন, কিন্তু বিকালে করা যাবে না,' তিনি বলছেন।
সূত্র : বিবিসি