ইমরানের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শাহবাজ শরিফ!
শাহবাজ শরিফ - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট চলছে। ক্রমাগত স্পষ্ট হচ্ছে যে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে আস্থা ভোট না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই পরিষ্কার হবে না।
তবে আস্থা ভোটে হেরে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইমরান খান ইস্তফা দিতে পারেন- এমন গুঞ্জনের মধ্যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়ে গেছে। ওই জল্পনা আরো জোরদার হয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির এক ঘোষণায়। বুধবার তিনি জানান, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন শাহবাজ শরিফ।
উল্লেখ্য, শাহবাজ হলেন পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি-র বিরোধী দলনেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। পিপিপি-র চেয়ারম্যান বিলাবল সংবাদ সম্মেলনে জানান, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গদিচ্যুত করতে পিপিপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এ জন্য এমকিউএম-পি-কে ধন্যবাদও জানিয়েছেন বিলাওয়াল।
তিনি বুধবার বলেন, 'ইমরান খান সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। তিনি আর প্রধানমন্ত্রী নন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) পার্লামেন্টের অধিবেশন। আগামীকাল ভোট দিয়ে বিষয়টি স্থির করতে হবে। এর পর আমাদের কাজ হবে স্বচ্ছ নির্বাচন করে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা।' কে এই শাহবাজ শরিফ, যাকে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর মুখ বলে দাবি করা হচ্ছে?
শাহবাজের প্রথম পরিচয় তিনি নওয়াজ শরিফের ভাই। এ ছাড়াও ২০১৮ থেকে তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলনেতা। এর আগে তিনি পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হন। পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন)-এর প্রেসিডেন্ট শাহবাজ। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে যখন সেনা অভ্যুত্থান হয়, শাহবাজ পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। ২০০৭-এ ফের পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ওই বছরই তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
এদিকে ক্রমাগত মিত্র হারাচ্ছে ইমরান খানের পিটিআই। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পিটিআইয়ের আর এক জোটসঙ্গী বেলুচিস্তান আওয়ামি পার্টিও সরকারের হাত ছেড়েছে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তাদের পাঁচ সদস্যের মধ্যে একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জাবেদ জালাল ছাড়া বাকি চারজন জোট ছাড়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
দু’দিন আগেই শরিক পিএমএল-কিউকে পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন ইমরান। মনে হচ্ছিল, তার এই চালে কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ল বিরোধীরা। কিন্তু ইমরানের পিটিআই আরো বড় ধাক্কা খেল আজ। সকালেই পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারি দাবি করেছিলেন, শাসক জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক এমকিউএম-পির সঙ্গে তাদের সমঝোতা সম্পূর্ণ। পরে সংবাদ সম্মেলনে এমকিউএম-পি জানিয়ে দেয়, ‘জাতীয় স্বার্থে’ তারা বিরোধী জোটে যোগ দিচ্ছে। এই দলের দুই মন্ত্রী-সহ সাতজন এমপি রয়েছেন। ফলে এক ধাক্কায় ইমরানের সাতটি ‘উইকেট’ পড়ে যায়।
পিটিআইয়ের আর এক জোটসঙ্গী বেলুচিস্তান আওয়ামি পার্টিও সরকারের হাত ছেড়েছে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তাদের পাঁচ সদস্যের মধ্যে একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জাবেদ জালাল ছাড়া বাকি চারজন জোট ছাড়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি পিএমএল-কিউয়ের পাঁচ এমপি-র মধ্যে জলসম্পদ মন্ত্রী তারিক বশির চিমা ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। ৩৪২ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আস্থা ভোটে জিততে হলে ইমরানের দরকার ১৭২টি ভোট। কিন্তু অঙ্ক বলছে, শাসক জোটের ঝুলিতে এখন রয়েছে মাত্র ১৬৪টি আসন। বিরোধীদের রয়েছে ১৭৬টি।
তবে সন্ধ্যার মধ্যেই জল্পনা চরমে ওঠে, ইমরান কি ইস্তফাই দেবেন? যদিও সেই তত্ত্ব খারিজ করে পিটিআইয়ের মুখপাত্র নীলম ইরশাদ শেখ বলেন, ‘ইমরান খান শেষ বল পর্যন্ত খেলবেন। সেনাপ্রধান এবং আইএসআইয়ের ডিজি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেবেন।’ যদিও পরে বক্তৃতার পরিকল্পনা বাতিল করেন ইমরান। সরকারের দাবি, সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে বলেনি।
গত রোববার ইসলামাবাদের জনসভায় পাক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, চিঠি দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে তাদের। এ দিন ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে ইমরান বলেন, ‘অনাস্থা প্রস্তাব তো একটা বৈধ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। এখানে যা হচ্ছে, সেটা হলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে আমদানি করা সঙ্কট। আমি এ বার শরিক দলগুলোকে ওই নথি (চিঠি) দেখাব। সিনিয়র সাংবাদিকদেরও দেখাব।’
পরে কয়েক ন সাংবাদিককে ডেকে পাঠান ইমরান। একটি চ্যানেলের দাবি, চিঠিটিতে ‘কোনো একটি দেশের’ কর্তাদের সাথে ওই দেশের পাকিসতআন দূতাবাসের এক কর্তার বৈঠকের নির্যাস রয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। পাক সরকারের ইউক্রেন-নীতি এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ওই দেশটি নাকি অসন্তুষ্ট। কিন্তু সেটি কোন দেশ, তা খোলসা করেনি পাক সরকার। পাক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে চ্যানেলটি বলেছে, ‘চিঠিতে রয়েছে, ইমরান খান ক্ষমতায় থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট দেশটি মনে করছে।’
ইমরানের দাবি, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব পেশের আগেই ওই চিঠিতে অনাস্থা প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছিল। তবে কী ‘হুমকি’ দেওয়া হয়েছিল, তা বলেননি তিনি। তবে পিটিআইয়ের বর্ষীয়ান নেতা ফয়সল ভওড়া দাবি করেছেন, ইমরানের প্রাণসংশয় হতে পারে। তাকে খুনের ছক কষা হয়েছে।
আস্থা ভোটের দিনে দলের এমপি-দের হয় অনুপস্থিত থাকতে অথবা ভোটদানে বিরত থাকতে বলেছেন ইমরান। শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘আজ সব বিরোধী একজোট। দৃষ্টান্ত রেখে ইস্তফাই দেওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীর।’ ইতিহাস বলছে, এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রী আস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হননি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা