স্মিথ আর রক : কে ঠিক?
স্মিথ আর রক : কে ঠিক? - ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ সময়ে সোমবার সকালে অস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ‘থাপ্পড় পর্ব’ নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে সারা বিশ্বে। দর্শকরা ভুলেই গিয়েছেন, সেরা বিদেশি সিনেমা কোনটি ছিল, কিংবা উইল স্মিথ নিজে কোন সিনেমার জন্য মনোনীত হয়ে পুরস্কার জিতে নিলেন।
উইল স্মিথ বড়পর্দার খুব পছন্দের এক হিরো। কয়েক দশক জুড়ে মানুষকে বিনোদন দিয়েছেন নিজের মতো করে। স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন, যে খুশি থাকা অনেক সময় বানান বদল করেও আসে, বিশেষ করে জীবনে যখন Happiness চরিত্র বদল করে হয়ে যায় Happyness— তাই বলে গতকালের থাপ্পড়ের ঘটনার সরলতম বিশ্লেষণ অনুচিত। বরং সামাজিক আয়নায় এর অনুধাবন করা একান্ত প্রয়োজন। আজ সাতসকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন উইল স্মিথ নিয়েছেন। হতেই পারে, পুরো বিষয়টি হয়তো টিআরপি বাড়ানোর সস্তা কৌশল ছিল। তবুও কেন?
সোশ্যাল মিডিয়ার পৃথিবীতে যারা উইল স্মিথকে বাহবা দিচ্ছেন, বা বলছেন যে, সপাটে চড়টা আমার হেব্বি লেগেছে, তাঁদের অনেকের যুক্তি হলো যে বডি শেমিংয়ের প্রতিবাদ এরকম হওয়া উচিত— যদি সেটি নারীবিরোধী এবং কুরুচিকর হয়। কিন্তু তথাকথিত ব্যঙ্গের বিচার কে করবে? কতটুক ব্যঙ্গ মেনে নেয়া যেতে পারে, সেটিও বড় প্রশ্ন।
উল্টা দিকের মতামতের অনেকেই বলেছেন যে লাইভ টিভিতে যদি শেষমেশ সহিংসতার বশবর্তী হতে হয় কাউকে, তাহলে পৃথিবীতে তো উচ্ছন্নে যাবে। কথায় কথায় এক দেশ আরেক দেশের সঙ্গে, কিংবা এক পাড়া আরেক পাড়ার সঙ্গে হাঙ্গামা শুরু করে দেবে। সহনশীলতা নিয়েও প্রশ্ন করে দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী না হয় এক সময় পেশাদার কৌতুকশিল্পী ছিলেন, তাই বলে কৌতুকশিল্পী বা জোকারের সব কথা কি খুব গুরুত্ব দিতে হবে? নেটিজেনদের অনেকের বক্তব্য যে ‘ক্যালানো’ খুব দরকারি জানিস, যাতে কেউ আর এরকম সাহস করবেন না।
মজা কি শুধু নিজেকে নিয়েই করা যায়, না অন্য কাউকে নিয়ে করলে তা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে? সত্যি কথা বলতে, এই তর্ক শেষ হওয়ার নয় এবং সমাজের কাছে বোধহয় স্পষ্ট উত্তরও নেই। সমাজ অনেক চালাক, উইল স্মিথ বলে এরকম ভাবছে, পাড়ার পাঁচু হলে বোধহয় শূলে চড়িয়ে দিত!
এই যুগে কোন চার্লি চ্যাপলিন নেই। তাই চটুল চ্যাটচ্যাটে হাসির জমানা চলছে এখন। তাই আরও একবার ফিরে যেতে হয় উইল স্মিথের সেই ক্ষমা প্রার্থনা বা দুঃখপ্রকাশ করার ফেসবুক পোস্টে। সকলকেই মেনে নিতে হবে বা মানিয়ে নিতে হবে এটা ভেবে যে ‘We are a work in progress’।
ইনস্টাগ্রামে স্মিথ লিখেছেন, ‘আমি প্রকাশ্যে আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি ক্রিস। আমি সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিলাম এবং আমি ভুল করেছি। আমার কর্মকাণ্ডের জন্য আমি লজ্জিত। আমি যে ধরনের মানুষ হতে চাই, এটা তার পরিচয় নয়।’
স্মিথ আরো লিখেছেন, ‘সহিংসতা মাত্রই ক্ষতিকারক এবং ধ্বংসাত্মক। গত রাতের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে আমার আচরণ গ্রহণযোগ্য ছিল না, ক্ষমাহীন অপরাধ করেছি। কৌতুক আমাদের পেশার অংশ। কিন্তু জাডার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মজা করা আমার পক্ষে সহ্য কঠিন ছিল এবং আমি আবেগপ্রবণ হয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম, যা ঠিক হয়নি।’
তিনি আরো লিখছেন, ‘আমার এই ব্যবহার বিশ্ব জুড়ে যারা দেখেছেন, তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। ক্ষমাপ্রার্থী অ্যাকাডেমি, অনুষ্ঠানের প্রযোজক এবং সব অংশগ্রহণকারীর কাছে। উইলিয়ামস পরিবার এবং কিং রিচার্ড পরিবারের কাছেও অপরাধ কবুল করছি। অস্কারের আলোকজ্জ্বল মঞ্চে আমার এহেন আচারণ একটি দাগ ফেলে গেছে। যা ক্ষমাহীন অপরাধ।’