পুতিনের প্রধান লক্ষ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র!
বাইডেন ও পুতিন - ছবি : সংগৃহীত
আলোচিত রুশ কৌশলবিদ ও দার্শনিক আলেকজান্ডার ডুগিনের মতবাদে প্রধান লক্ষ্যই হলো যুক্তরাষ্ট্র। পুতিনের ঘোষিত অঘোষিত লক্ষের সাথে এর কোনো পার্থক্য নেই। ডুগিন বলেছেন, রাশিয়ার উচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে অস্থিতিশীলতা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদে ইন্ধন দিতে ‘আফ্রো-আমেরিকান বর্ণবাদীদের’ উস্কে দেয়া। তিনি আরো বলেছেন, রাশিয়ার উচিৎ, ‘আমেরিকার অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপে ভূ-রাজনৈতিক ব্যাধি প্রবর্তন করা, সব ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং জাতিগত ও সামাজিক দ্বন্দ্ব উৎসাহিত করা, চরমপন্থী, বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীসহ সব ভিন্নমতের আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করা। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।’
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশ হওয়া গত ২২ মার্চের এ সংক্রান্ত এক কলামেও ট্রাম্পের বিদায়কালে ক্যাপিটল হিলের ঘটনার সাথে আমেরিকান রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাকে সমর্থন করার ডুগিনের পরামর্শ বাস্তবায়নের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়। এতে বলা হয়, মার্কিন কংগ্রেসের করিডোরে জানালা ভাঙা দাঙ্গাবাজ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের ব্রেক্সিট এবং রাশিয়ান প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর জার্মানির ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা দেখে ডুগিন অবশ্যই অনুভব করেন যে, পুতিন শাসনে জিনিসগুলো ঠিকঠাক এগিয়ে চলছে।
আমেরিকান ফাইভ আই (ইংরেজি ভাষাভাষি ৫ দেশ)-এর বিপরীতে জার্মান-ফ্রান্স অক্ষ তৈরির প্রচেষ্টার পেছনে একই লক্ষ সক্রিয় থাকতে পারে। ডুগিন আমেরিকান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রভাব খর্ব করতে দেশটির অভ্যন্তরে জাতীয়তাবাদী উগ্রপন্থা উস্কে দিয়ে দেশটিকে রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত করে রাখার পাশাপাশি বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা তৈরির কথাও বলেছেন, যার মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত। পুতিন এখন চীনা নেতা শি জিন পিংয়ের সাথে মিলে সেটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেন। এই এজেন্ডায় চীন ও রাশিয়ার স্বার্থ একই বিন্দুতে। রাশিয়ার মতো চীনও তাইওয়ানকে ঘিরে এক সময় একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে। নিষেধাজ্ঞার এই অস্ত্রকে ভোঁতা করতে সুইফটের বিকল্প টিপস এবং বৈশ্বিক ডিজিটাল মুদ্রা প্রচলন ও জাতীয় মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেন করার ব্যবস্থা নিয়ে বেইজিং কাজ করছে। এতে চীনের চাইতে রুশ স্বার্থও কোনো অংশে কম নয়।
তবে এই উদ্যোগ বিশ্ব ব্যবস্থায় আমেরিকা তথা পশ্চিমা বলয়ের আধিপত্য অবসানের এক চূড়ান্ত প্রয়াস, যা ওয়াশিংটনের জন্য কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ পুতিনের অভিযানে আমেরিকা বা পাশ্চাত্যের একাধিপত্যে ভারসাম্য আনার প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছেন। তারা ভাবছেন এর মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধকালীন ভারসাম্য আবার ফিরে আসবে। কিন্তু রুশ সাম্রাজ্যের স্বপ্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে রাশিয়ার প্রতিবেশী কোনো দেশ স্বাধীনতা নিয়ে নিরাপদ থাকবে না। নানা সঙ্কট দেখা দিলেও যুক্তরাষ্ট্র তার বাড়ির কাছের কিউবা বা ভেনিজুয়েলাকে সহ্য করে গেছে। পুতিনের মনোভাবে সেই সহনশীলতার দেখা মেলে না।
কিন্তু রুশ আগ্রাসনে সে অভিজ্ঞতা হচ্ছে আশপাশের দেশগুলোর। পুতিনের ‘মস্তিষ্ক’ ডুগিনের মতবাদের পুরোটা বাস্তবায়ন হলে যা দাঁড়াবে তা কেবল কল্পনাতে আনলেও গা শিউরে ওঠে।
mrkmmb@gmail.com