এ সময়ের ডায়রিয়া : যা করবেন
এ সময়ের ডায়রিয়া : যা করবেন - ছবি : সংগৃহীত
কিছু দিন ধরে ডায়ারিয়ার প্রকোপ অনেক বেড়েছে এটা সবাই জানেন। হাসপাতালে আসা বহু রোগী ডায়ারিয়াক্টবমির সমস্যা নিয়ে এসেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো আজ খেয়াল করলাম হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অধিকাংশেরই অকও/অজঋ (একিউট রেনাল ফেইলিউর) ধরা পড়েছে। এর কারণ হলো শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া অতিরিক্ত লবণ-পানির ঘাটতি পূরণ না হওয়া। বাচ্চাদের জন্য যা বেশি মারাত্মক।
ষ আমরা সব কিছু গোগ্রাসে খাই অথচ স্যালাইন খাওয়ার সময় কত এক্সকিউজ...! অনেকে খেলেও পরিমাণে কম খাওয়ায় বেশি অসুস্থ হয়েছেন। শিক্ষিত অনেকেই জেনেও স্যালাইন খেতে অলসতা করেন!
ষ দুইবারের বেশি পাতলা পায়খানা হলেই (এমনকি একবার অনেক বেশি পরিমাণে পানির মতো পায়খানা হলে) অবশ্যই ওরাল স্যালাইন খাবেন। সাথে জিংক ট্যাবলেট খেলে ভালো।
ষ শরীর নেতিয়ে পড়লে/বেশি দুর্বল লাগলে/জিহবা-গলা শুকিয়ে গেলে/সাথে বমি থাকলে নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে যান। ডাক্তার আপনার ডিহাইড্রেশনের মাত্রা বুঝে শিরাপথে স্যালাইন, এন্টিবায়োটিক দিবেন। (ডঐঙ ঞৎবধঃসবহঃ ঢ়ষধহ ই/ঈ)
ষ মোবাইলে চিকিৎসার ওপর আস্থা কম রাখুন।
স্যালাইন কিভাবে খাবেন : ওরাল স্যালাইন সবার জন্য মূল চিকিৎসা। প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী স্যালাইন তৈরি করবেন। (ডঐঙ ঃৎবধঃসবহঃ ঢ়ষধহ অ)
ষ বয়স ২ বছরের নিচে : প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ৫০-১০০ মিলি
ষ বয়স ২-১২ বছর : ১০০-২০০ মিলি প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর
ষ বয়স ১২+ সবাই : ২০০-৪০০ মিলি প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর
স্যালাইন সবাই খেতে পারবে? জি পারবেন, ডায়াবেটিস, প্রেসার, গর্ভবতী উপরোক্ত নিয়মে খেতে পারবেন।
সাবধানতা : আগে থেকেই হার্ট/লিভার/কিডনি ফেইলিউরের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফ্লুইড ব্যালেন্স করবেন।
প্রতিকার :
বাইরের খোলা খাবার, বাসি খাবার পরিহার করতে চেষ্টা করুন।
ষ বাইরে যারা খেতে বাধ্য পানি খাওয়ার সময় বিশুদ্ধ পানি পান করবেন। নীল জারে টঙ দোকানে ১ টাকা গ্লাস এ যে পানি খাই, অনেক সময়ই তা বিশুদ্ধ থাকে না।
ষ বিষয়টি মনে রাখুন; আপনার পাশেরজনকে জানান; অন্যের উপকারে অংশীদার হউন।
আবারও বলছি ডায়ারিয়া হলে
স্যালাইন অবশ্যই
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে রমজান
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
রমজানের রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী না অপকারী তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। কারণ কিছু রোগ ব্যতীত রোজা রাখা নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটা মুসলিমদের নিজেদের বানানো কথা নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে তা প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালে প্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল কনগ্রেস অন হেলথ অ্যান্ড রমাদান’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুসলিম ও নন-মুসলিম গবেষকরা রোজা ও স্বাস্থ্য শিরোনামে প্রায় ৫০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এর কোনোটিতেই দেখা যায়নি যে, সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য রোজা স্বাস্থ্যের জন্য অপকারী। বরং তা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকার নিয়ে আসে।
কোলস্টেরল ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রোজা : আবুধাবির একদল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে রোজা রাখলে কোলস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ভালো কোলস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা বাড়ায় আর খারাপ কোলস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা কমায়। এ দুটোর ফলাফল হলো রক্তনালীতে চর্বি কম জমা। ফলে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে। প্রতিরোধ করে হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। গবেষকরা আরো দেখেছেন রোজা রাখলে উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয় তিন ভাবে। খাবার নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খল জীবনযাপন ও ওষুধের মাধ্যমে। রোজার মাধ্যমে খাবার নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খল জীবনযাপন করা হয় বলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। যাদের এখনো পুরোপুরি ডায়াবেটিস হয়নি কিন্তু ডায়াবেটিস হবে হবে করছে রোজা রাখার মাধ্যমে তারা ডায়ারেটিস দূরে রাখতে পারেন। রোজার মাধ্যমে যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত হয় তার প্রমাণ রোজার সময় ডায়াবেটিসের ওষুধের ডোজ কম লাগে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায় : আমেরিকার একটি গবেষণায় দেখা গেছে রোজা রাখলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে। তাই ছাত্রছাত্রীদের জন্য রোজা রাখা খুবই জরুরি।
ওজন নিয়ন্ত্রণ : বিশ্বব্যাপী স্থূল মানুষের হার দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ নানাবিধ ক্যান্সার। রোজা রাখলে শরীরের এনার্জি সরবরাহের জন্য চর্বি ভাঙে। চর্বির পরিমাণ কম হয় বলে রক্তনালীতে চর্বি জমতে পারে না। আবার স্থূলতার হার কমতে থাকে। তাই যারা ওজন কমানোর জন্য দিনের পর দিন চেষ্টা করে আসছেন তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে রমজান।
শরীরের ক্ষতিকর উপদান দূরীকরণ : চর্বির মধ্যে শরীরের ক্ষতিকর টক্সিনগুলো জমা হয়। যেহেতু এনার্জির প্রয়োজনে চর্বি ভেঙে যায় তাই টক্সিনগুলো দ্রবীভূত হয়ে কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
অবসাদ ও দুশ্চিন্তা কমায় : আমেরিকান গবেষণায় দেখা গেছে রোজা রাখলে কর্টিসল নামক হরমোনের নিঃসরণ কমে। এটি মানসিক স্ট্রেস, অস্থিরতা, অবসাদের জন্য দায়ী। আরবের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েকটি রোজা রাখার পর শরীরে এনডরফিন নামক হরমোনের মাত্রা বাড়ে যেটি ভালো লাগার অনুভূতি দেয়।
খারাপ অভ্যাস দূর করতে : ধূমপান যে কতটা ক্ষতিকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন কোনো ক্যান্সার নেই যার কারণ হিসেবে ধূমপান নেই। মদপানও কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব বদ অভ্যাস দূর করতে রোজার মতো শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা আর নেই। এটি কোনো মুসলিমের কথা নয়। এটি জানিয়েছে আমেরিকান ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস।
তবে কিছু কিছু রোগ আছে সেগুলোতে রোজা না রাখতে পারলে ক্ষতি নেই। মারাত্মক অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
একটি জিনিস মাথায় রাখবেন রোজা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য। তাই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তা পালন করতে হবে। তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি এসব উপকারও পাওয়া যাবে। কিন্তু এসব উপকারের কথা চিন্তা করে রোজা রাখলে উপকার পেলেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন নাও হতে পারে। রমজানে সবার সুস্থতা কামনা করছি।
ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্ট্রার, গুলশান, ঢাকা