যেভাবে ধরা পড়ল আকাশ
টিপু ও প্রীতি - ছবি : সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফনান হত্যাকাণ্ডে জড়িত অস্ত্রধারী একজন 'ভাড়াটে খুনি' বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে বগুড়া পুলিশের সহায়তায় গ্রেফতার করেছে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে যানজটে আটকে থাকা একটি মাইক্রোবাসের সামনের সিটে বসা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গাড়ির জানালা দিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায় এক বন্দুকধারী।
ওই সময় মাইক্রোবাসটির পাশে থাকা রিক্সা আরোহী সামিয়া আফনান প্রীতি গুলিতে নিহত হন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
যেভাবে ধরা হলো
তিনি জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃত মাসুম মোহাম্মদ আকাশ নামে এক 'ভাড়াটে খুনিকে' বগুড়া থেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে পালিয়ে যাওয়ার জন্য একজন মোটরসাইকেল চালক তার সহযোগী ছিল।
তার নামে হত্যা সহ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেনি মি. আক্তার। ঘটনার পরের দিন সহযোগীসহ জয়পুরহাটে চলে যান মাসুম মোহাম্মদ।
সেখান থেকে তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা না পেরে মাসুম মোহাম্মদ বগুড়ায় অবস্থান নেন। তিনি কার নির্দেশে গুলি করেছেন সেটি বিস্তারিত তদন্ত করে জানা যাবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন একেএম হাফিজ আক্তার।
এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি এখনো উদ্ধার হয়নি। অস্ত্র উদ্ধারের আগে তার সম্পৃক্ততা কিভাবে বোঝা গেল সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি নিজে স্বীকার করেছেন।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
সিসিটিভি ফুটেজে তার শরীরের গঠন দেখে এবং ব্যবহৃত মোটরসাইকেল থেকে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন আগে হত্যার জন্য তাকে ভাড়া করা হয়েছিল এবং তিন দিন আগে কাকে হত্যা করা হবে ওই নামটি তাকে দেয়া হয়। এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে কিনা সেটি পরিষ্কার নয়, বলেন মি আক্তার।
তিনি জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত মাসুম মোহাম্মদের বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি ঢাকার একটি ইন্সটিটিউট থেকে গ্রাফিক ডিজাইনে পড়াশোনা করেছেন। তার স্ত্রী এবং এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
সেদিন যা ঘটেছিল
দশ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখা গেছে রাস্তার পাশের একটি দোকানের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়।
যাতে দেখা গেছে, একটি সাদা মাইক্রোবাসের সামনে বাঁদিকে আরোহীর আসনের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে গুলি করে দৌড়ে গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তার অপর প্রান্তে চলে যায় একজন।
গুলির শব্দে সাদা মাইক্রোবাসটির পাশে থাকা রিক্সা থেকে নেমে কয়েকজন যাত্রী দৌড়ে দূরে সরে যাচ্ছেন।
গুলি করে বন্দুকধারী দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির পেছনের দরজা খুলে কয়েকজন বের হয়ে আসেন এবং বন্দুকধারীকে ধাওয়া করেন।
কিছুক্ষণের মধ্যে তারা ফিরে এসে গুলিবিদ্ধ জাহিদুল ইসলাম টিপুর কাছে যান। গুলিতে ইসলামের গাড়িচালকও আহত হন।
আহত অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর গুলিবিদ্ধ কলেজ ছাত্রী এবং জাহিদুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
নব্বইয়ের দশক থেকেই জাহিদুল ইসলাম মতিঝিল এলাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
২০১৩ সালের জুলাই মাসে গুলশানের একটি ব্যস্ত শপিং মলের সামনে প্রকাশ্যে গুলিতে নিহত যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যাকাণ্ডের মামলায় একজন এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন জাহিদুল ইসলাম টিপু। যদিও পুলিশের অভিযোগপত্রে পরে তার নাম ছিল না।
ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে এবং তখন হত্যাকাণ্ডটি ঘিরেও ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল।
সূত্র : বিবিসি