হিজাব : কী ও কেন?
হিজাব : কী ও কেন? - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের কর্নাটক রাজ্যের হাইকোর্ট গত ১৫ মার্চ রায় দিয়েছে, হিজাব পরা ইসলাম ধর্মের জন্য ‘অপরিহার্য’ নয়। একই সঙ্গে শ্রেণীকক্ষে হিজাব নিষিদ্ধ করে রাজ্য সরকারের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছে আদালত। হিজাবের পক্ষে পাঁচটি মামলাও খারিজ করে দেয়া হয়। কর্নাটক হাইকোর্টের এই আদেশ ভারতজুড়ে কার্যকর হতে পারে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ১২৯ পৃষ্ঠার আদেশে বলা হয় ‘ধর্মগ্রন্থের মধ্যেই এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করার জন্য পর্যাপ্ত অন্তর্নিহিত উপাদান রয়েছে যে হিজাব পরার ব্যাপারটি শুধুমাত্র সুপারিশ করা হয়েছে। যদি তাই হয় যা ধর্মীয়ভাবে বাধ্যতামূলক নয় তা জনবিক্ষোভের মুখে বা আদালতে আবেগপূর্ণ যুক্তির মাধ্যমে ধর্মের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।’
গত জানুয়ারিতে কর্নাটকের এক কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব পরায় মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের কলেজে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। এ নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের মুখে রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ বেশ কিছু দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছু সংখ্যক মুসলিম শিক্ষার্থী আদালতে আবেদন করে যুক্তি দেয় ভারতের সংবিধান তাদের হিজাব পরার নিশ্চয়তা দিয়েছে। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদালত বলেছে, শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্মের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়ার এখতিয়ার রাজ্য সরকারের রয়েছে। ওই বৃহত্তর বেঞ্চ অন্তর্বর্তী এক আদেশে জানায়, চূড়ান্ত রায়ের আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় পোশাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না। ফলে অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী ক্লাসে যাওয়া বাদ দেয়। অনেকে পরীক্ষাতেও অংশ নিতে পারেনি।
এ রায়ের পরই কর্নাটক রাজ্যের একটি জেলায় ৮ শিক্ষার্থী বোরকা পরে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করতে পারেননি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্নাটকের ইয়াদগির জেলার কেমভাভি গ্রামের পিইউ কলেজে হিজাব পরে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা দিতে আসা আট শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞার আগে, এই কলেজে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের ভেতরে হিজাব পরার অনুমতি দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারলেও রায় ঘোষণার পর তারা আর পরীক্ষা দিতে পারেনি।
ইসলামে হিজাব অপরিহার্য নয় বলে কর্নাটক হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তা দেশ-বিদেশে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রায়ের বিরোধিতা করে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানি বলেছেন, এই রায় দেশ ও মুসলিমদের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। বাস্তবে কোনো সমাজ শুধু আইনের ওপর নির্ভর করে চলে না; বরং তা সামাজিকতা ও ঐতিহ্য উভয়টির দ্বারা গ্রহণযোগ্য হতে হয়। এই রায়ের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকবে, বিশেষত মুসলিম মেয়েদের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সৃষ্টি করা এই পরিস্থিতিতে নিজেদের স্বাধীনতা ও নির্ভরতা হারিয়ে ফেলব।
মাওলানা মাদানি বলেন, ভারতে প্রাচীনকাল থেকেই সাংস্কৃতিকভাবে ও ঐতিহ্যগত দিক থেকে এবং বিশেষ করে মুসলিম নারীদের বিশ্বাস ও আকিদায় হিজাব ও পর্দার প্রয়োজনীয়তা সাব্যস্ত। এরকম একটি বিষয়কে শুধু আদালতের রায়ের মাধ্যমে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, যে ধর্মের বিষয়ে রায় দেয়া হবে, সেই ধর্মের আকিদা ও বিশ্বাসের ফায়সালা ওই ধর্মের সংশ্লিষ্ট আলিম ও স্কলাররা দেবেন। আদালত এর মধ্যে নিজের তরফ থেকে পৃথক কৌশল ব্যবহার করতে পারে না। প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সরকার ধর্মের সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যগত ও বিশ্বাসের বিষয়গুলো সমুন্নতের দায়িত্ব পালন করুন। আর যদি সমস্যার সমাধান আদালতের মাধ্যমে না হয়, তাহলে গণতন্ত্র অ্যাসেম্বলি ও পার্লামেন্টকে আইন প্রণয়নের অধিকার দিয়েছে। তাই জাতীয় স্বার্থে আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে (নয়া দিগন্ত অনলাইন, ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২২; কওমি আওয়াজ ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের ভেরিফাইড পেজ)।
বিশ্বের সুন্নি মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মিসরের আল-আজহার, এক ফতোয়া বা ধর্মীয় ডিক্রিতে জোর দিয়ে বলেছে যে, ইসলামে মহিলাদের জন্য হিজাব বা পর্দা করা বাধ্যতামূলক, যারা এটি অস্বীকার করে তারা ‘চরমপন্থী’ এবং ‘অস্বাভাবিক’। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রনিক সেন্টার ফর ফতোয়াস অফ আল-আজহার দ্বারা প্রকাশিত এক বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে যে, পর্দা বা হিজাব, ইসলামের শিক্ষা দ্বারা আরোপিত একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব এবং এই বিষয়ে যেকোনো বিতর্ক অগ্রহণযোগ্য। সংস্কৃতি নির্বিশেষে জনসাধারণ বা বিশেষজ্ঞ নয় এমন ব্যক্তিবর্গের এই বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করা গ্রহণযোগ্য নয়। হিজাবের লক্ষ্য (মহিলাদের) নারীসুলভ স্বভাব রক্ষা করা।
এতে বলা হয়েছে যে, ইসলামে পর্দা বাধ্যতামূলক এই সত্যটি নারীদের সমাজে সফল এবং উৎপাদনশীল হতে সাহায্য করে এবং তাদের কেবল একটি দেহ হিসাবে দেখা থেকে বিরত রাখে। ফতোয়ায় বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন ভারত, চীন এবং জাপানের নারীরা ইসলামের পর্দার অনুরূপ পোশাক পরেন কারণ তারা তাদের জাতির প্রকৃতি অনুসরণ করতে আগ্রহী। যারা ইসলামে পর্দা বাধ্যতামূলক বলে অস্বীকার করে তাদের সবাইকে তাদের মতামত প্রচার বা ফতোয়া জারি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয় তারা এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞ বা অনুমোদিত নয় (ইজিপ্ট ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ২০১৭)।
কর্নাটক হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তার প্রতিবাদ করেছেন বিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নোমানী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশে প্রতিটি ধর্মের মানুষের ধর্মানুশীলন ও পরিপালনের স্বাধীনতা রয়েছে। কোনো সরকার সংবিধানের স্পিরিটবিরোধী কোনো আইন করতে পারে না। তার মতে, সরকারের কোনো ধর্মের বিরুদ্ধেই কড়া শর্ত আরোপ করা উচিত নয়। একই সাথে আদালতের ওই রায়ের বিরোধিতা করেছেন অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানী। তিনি বলেছেন, এই রায় অত্যন্ত হতাশাজনক এবং সাংবিধানিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। ল’ বোর্ড শিগগিরই এই বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসবে। কেননা, হিজাব ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ নামাজ-রোজা না করলে এই দুই ইবাদতকে ইসলামের বিষয় নয় বলা যায় না। অনেক মুসলিম সম্পূর্ণভাবে শরিয়াহ মেনে চলেন না কিন্তু সেই কারণে হিজাব, নামাজ ও রোজাকে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বলা যেতে পারে না। মাওলানা রাহমানী বলেন, মুসলিম সংগঠন ও এনজিওদের আইনি লড়াইয়ে এগিয়ে আসা উচিত। কেননা, সরকার অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, তাদের ধর্মীয় অনুশীলনে কোনো বাধা নেই কিন্তু কলেজে ছাত্রীদের হিজাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। এমনিতেই দেশে কলেজগুলোতে সাধারণত নির্দিষ্ট পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা নেই। তাছাড়া একজনের ইউনিফর্ম কী পরবে, সেটা আদালতে আইনি ঝগড়ার বিষয় হওয়া উচিত ছিল না (নয়া দিগন্ত, ঢাকা ১৭ মার্চ, ২০২২)।
‘হিজাব বা পর্দা’ নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ। নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার কার্যকর উপায়। ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। হিজাব শব্দটির অর্থ বিভাজন। এটি পর্দা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণত নারীদের শালীনতা ও পোশাকের ইসলামিক নিয়মের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কুরআনে মাথার স্কার্ফের পরিভাষা হলো খিমার। সম্পর্কহীন পুরুষদের কাছ থেকে শালীনতা ও গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরিধান করে। কুরআন মুসলিম নারী ও পুরুষদের শালীন পোশাক পরার নির্দেশ দেয়। হিজাব হলো একই ধরনের জিলবাব বা হেডস্কার্ফের নাম। এটি পাশ্চাত্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওড়না। এই ওড়না এক বা দুটি স্কার্ফ নিয়ে গঠিত যা মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখে। পাশ্চাত্যের বাইরে, এই ঐতিহ্যবাহী বোরকা আরব বিশ্বের এবং তার বাইরেও অনেক মুসলিম মহিলা পরিধান করেন। নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হলো ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। শালীনতা অর্জনের জন্য এবং বস্তুবাদী জগতের ভোগ-মোহ থেকে নারী ও পুরুষ উভয়ের মনোযোগকে আধ্যাত্মিক জগত তথা আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য মহিলাদের হিজাব পরতে বলা হয়েছে।
হিজাব সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। হিজাব অপরিহার্য বিধান। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনায় সব নারীর জন্য হিজাব ফরজ। পবিত্র কুরআনের সূরা নূর ও সূরা আহজাবের তিনটি আয়াত দ্বারা তা সুস্পষ্ট। পবিত্র কুরআনের আয়াতত্রয় দ্বারা হিজাব ফরজ হওয়ার বিষয়টি এমনভাবে অকাট্য যে, এ সম্পর্কে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দাবি অকার্যকর ও রহিত হয়ে যায়। আল্লাহ ঈমানদার নারীদের জানিয়ে দেয়ার উদ্দেশে আয়াত নাজিল করে নির্দেশ দেন- ‘(হে রাসূল! আপনি) ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নারী, অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত আর কারো সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে চলাফেরা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (সূরা নূর : আয়াত ৩১)।
‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিনদের স্ত্রীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের (জিলবাব) কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (সূরা আহজাব : আয়াত ৫৯)। উল্লেখ্য যে, মুফাসসিরে কুরআন ইবন আব্বাস রা:-এর মতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখা যায় এমন চাদরকে জিলবাব বলা হয়।
‘হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর ঘরসমূহে প্রবেশ করো না ; অবশ্য যদি তোমাদের খাবারের অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে (প্রবেশ করো) খাবারের প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে। আর যখন তোমাদেরকে ডাকা হবে তখন তোমরা প্রবেশ করো এবং খাবার শেষ হলে চলে যাও আর কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ো না; কারণ তা নবীকে কষ্ট দেয়, তিনি তোমাদের বিষয়ে সঙ্কোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্য প্রকাশে সঙ্কোচ বোধ করেন না। আর যখন নবীপত্নীদের কাছে তোমরা কোনো সামগ্র্রী চাইবে তখন পর্দার (হিজাব) আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র (সূরা আহজাব : আয়াত ৫৩)।
হাদিসেও বহু জায়গায় হিজাব বা পর্দা মেনে চলার নির্দেশনা এসেছে। নবী-সহধর্মিণী উম্মে সালামা রা: বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা:ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন। এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদের দেখছেন না? তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না? (সুনানু আবি দাউদ ৪/৩৬১, হাদিস : ৪১১২; জামে তিরমিজি ৫/১০২, হাদিস : ২৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬)।
কেউ কেউ দাবি করে যে হিজাব পরার জন্য কুরআনের আদেশ শুধুমাত্র মহানবী সা:-এর স্ত্রীদের জন্য প্রযোজ্য, সব মহিলার জন্য নয়। এটা এক ধরনের বিভ্রান্তি ও অপব্যাখ্যা। নির্দিষ্ট কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে আয়াত নাজিল হলেও নির্দেশনা সবার জন্য সমান প্রযোজ্য। এটাই স্বীকৃত নীতিমালা। পবিত্র কুরআনের সাত স্থানে ‘হিজাব’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনায় সব নারীর জন্য হিজাব ফরজ, যা মানবসভ্যতার ইতিহাসজুড়ে আবর্তিত প্রভাবশালী মতাদর্শের প্রতিফলন। এ কথা দৃঢ়ভাবে মনে রাখতে হবে যে, কুরআন, হাদিস ও ইজমায়ে উম্মতের স্বীকৃত কোনো আইনের ধারা-উপধারা কোনো অবস্থাতে কোনো আদালত বা কোনো ব্যক্তি বা কোনো রাষ্ট্রপ্রধান পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারেন না। এটা তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত।
লেখক : শিক্ষক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com